বিপ্লবী অমল সেনের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

অপরাজেয় বাংলা ডেক্স
২০০৩ সালের ১৭ জানুয়ারি বিকেলে বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন আজীবন বিপ্লবী এই নেতা।
তার মৃত্যুবার্ষিকীতে নড়াইল-যশোরের সীমান্তবর্তী বাঁকড়ীতে দুদিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে তার সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ও স্মরণভার।
কমরেড অমল সেন ১৯১৪ সালের ১৯ জুলাই আউড়িয়ার প্রখ্যাত রায় পরিবারে তার মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন নড়াইলের আফরার জমিদার পরিবারেরর সন্তান। নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবী ‘অনুশীলন’ গ্রুপের সঙ্গে সম্পর্কিত হন। দৌলতপুর বিএল কলেজে গণিতশাস্ত্রে সম্মান শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় মার্কসবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন এবং পড়ালেখা অসমাপ্ত রেখে বাড়ি ফিরে কমিউনিস্ট আন্দোলন জোরদার করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি আমৃত্যু নিজেকে কৃষক, শ্রমিক মেহনতী মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিয়োজিত রাখেন।
তিনিই নড়াইলের প্রথম কমিউনিস্ট আন্দোলনের সংগঠক। ১৯৩৩ সালে নড়াইলের সরসপুর গ্রামের মৎস্যজীবীদের জলার উপর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি মৎস্যজীবীদের সংগঠন গড়ে তোলেন। কিছুদিনের মধ্যে তিনি ইজারা প্রথা, হাটতোলা ইত্যাদি খাজনা বন্ধের জন্য গোবরা, আগদিয়া, তুলারামপুর, ধলগ্রাম, মাইজপাড়া এবং মাদরাসার হাটসহ ব্যাপক অঞ্চলে হাটতোলা বন্ধের আন্দোলনে কৃষকদের সংগঠিত করেন এবং বিজয়লাভ করেন।
কমরেড অমল সেন তেভাগা সংগ্রামে কৃষকদের ব্যাপকভাবে সংগঠিত করাবার জন্য বাকড়ি, হাতিয়াড়া, গোয়াখোলা, বাকলি, মালিয়াট, দোগাছি, ঘোড়ানাচ, কমলাপুরসহ এগারোখানের গ্রামগুলিসহ বড়েন্দার, বীড়গ্রাম, উজিরপুর, চাঁদপুর, দুর্গাপুর, ডুমুরতলা, দলজিৎপুর এসকল গ্রামের কৃষকদের সংগঠিত করেন। এই তেভাগা আন্দোলন সংগঠিত করতে গিয়ে গরিব কৃষকদের মধ্য থেকে একঝাঁক বিপ্লবী কর্মী গড়ে তোলেন। এই আন্দোলনে তার সহযোদ্ধাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন নূরজালাল মোল্লা, মোদাচ্ছের মুন্সী, হেমন্ত সরকার, বটু দত্ত, রসিকলাল ঘোষ. আজিজুর রহমান, বামাচরণ গোলদার, সরলা সিং প্রমুখ।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর তিনটি পার্টি ঐক্যবদ্ধ হয়ে লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হলে অমল সেন ওই পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে ৬টি কমিউনিস্ট পার্টির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসাবেও তিনি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, সাম্যবাদী দল ও ওয়ার্কার্স পার্টির ঐক্যের মাধ্যমে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি হন।
তার আপসহীন ভূমিকার কারণে জীবনের উনিশটি বছর তাকে কারান্তরীণ থাকতে হয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ স্বাধীনতাকামী বীর জনতা যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার ভেঙ্গে তাকে মুক্ত করেন। পার্টি কর্মীদের একাংশের সাথে মতবিরোধ হলে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ভারত গমন করেন এবং সেখান থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার কাজ করে যান। স্বাধীনতার পরে তিনি বিভিন্ন কমিউনিস্ট গ্রুপকে ঐক্যবদ্ধ করেন এবং মৃত্যুর পূর্বে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০০৩ সালের ১৭ জানুয়ারি বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন আজীবন বিপ্লবী কমরেড অমল সেন।
তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ১৭ জানুয়ারি ‘কমরেড অমল সেন স্মৃতিরক্ষা কমিটি’ সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন ও অলোচনাসভা এবং পরদিন ১৮ জানুয়ারি বিকেলে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে। সূত্র, সুবর্ণভূমি