Type to search

বঙ্গবন্ধুর উপাধী দেওয়া সেই বেদুইন সাত্তার ৩৫ বছর খালি পায়ে হাঁটলেও ৯৬ বছর বয়সে হুইল চেয়ারই ভরসা

জাতীয়

বঙ্গবন্ধুর উপাধী দেওয়া সেই বেদুইন সাত্তার ৩৫ বছর খালি পায়ে হাঁটলেও ৯৬ বছর বয়সে হুইল চেয়ারই ভরসা

 

নড়াইল প্রতিনিধি:

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তার মোল্যাকে বেদুইন সাত্তার উপাধী দেন। ১৯৭৩ সালে খুলনার সার্কিট হাউজ মাঠে এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ নাম দেন । মুজিব প্রেমিক এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সকালে নড়াইল শহরে ফিরে জানতে পারেন, স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার খবর। এটি শুনে তিনি মনে প্রচন্ড আঘাত পান। পরদিনই পত্রিকায় খবর ছাপা হয়, তা থেকে তিনি জানতে পারেন নিজের বাড়ির সিড়িতেই বুলেটে শেষ হয়েছেন বঙ্গবন্ধু। সিঁড়িতে খালি পায়ে বঙ্গবন্ধুর মরদেহ পড়ে থাকার কাহিনি শুনে প্রতিজ্ঞা করেন জীবনে আর কখনও স্যান্ডেল পায়ে দিবেন না, কম্বল গায়ে দেবন না, রোদ বৃষ্টি যা-ই হোক ছাতা ব্যবহার করবেন না। যেমন প্রতিজ্ঞা তেমনই কাজ। এরপর থেকে খালি পায়ে হেঁটে বেড়াতেন বেদুইন সাত্তার। ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধুর ৫ খুনির ফাঁসি কার্যকরের খবর শুনে ৩৫ বছর পরে স্যান্ডেল পায়ে দেন এই বঙ্গবন্ধু ভক্ত। মুজিব প্রেমিক আব্দুস সাত্তার মোল্যা অর্থাৎ বেদুইন সাত্তারের বর্তমান বয়স প্রায় ৯৬ বছর। নানা সংগ্রাম আর প্রতিবাদের মধ্যে কাটানো সাত্তার মোল্যা বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে অনেকটা স্মৃতিশক্তিহীন। বঙ্গবন্ধুর দেওয়া বেদুইন উপাধি নিয়ে আজও চারিদিকে বঙ্গবন্ধুকেই খুঁজে বেড়ান এই মুক্তিযোদ্ধা। একা চলতে পারেন না। হুইল চেয়ারে বসে কখনও ছেলে, কখনও ছেলের বৌয়ের হাত ধরে ঘরের বাইরে যান তিনি। স্মৃতিতে সবই আছে, কিন্তু বয়সের ভারে কথাবার্তা কিছুটা এলোমেলো হয়ে গেছে। জানা গেছে, তৎকালীন নড়াইল মহাকুমার বিষ্ণুপুর গ্রামের ব্রিটিশ আন্দোলনের নেতা নোয়াই মোল্যার ছেলে আব্দুস সাত্তার মোল্যা। তিনি ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিমলীগ প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুর ভক্ত হয়ে যান। ১৯৬০ সালে বঙ্গবন্ধু তাকে নড়াইল সদর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই সময় থেকেই যেখানেই বঙ্গবন্ধুর সভা সেখানেই ছুটে যেতেন তিনি। সেটি খুলনা হোক অথবা চট্টগ্রাম, কিছুই তাকে থামিয়ে রাখতে পারতো না। বঙ্গবন্ধুর বেদুইন সাত্তার নড়াইলের নিভৃত একজন রাজনীতিবীদ। ৬ ফুটের বিশাল দেহের অধিকারী যুবক সাত্তারকে সবাই একটু সমীহ করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। তাকে হত্যা করার উদ্দেশে বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয় পাক হানাদার বাহিনী। ঘরে ঢুকে রাজাকাররা গুলি করে হত্যা করে আপন ছোটভাই গোলাম সরোয়ারকে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন বড়ভাই জাফর আহম্মেদ। কিন্তু তখন তিনি বাড়ি না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। পরে পালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাজ করতেন তিনি। বাশঁগ্রাম গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আজিবর রহমান বলেন, আমার পাশের গ্রামের আব্দুস সাত্তার মোল্যা আগরতলা মামলার সময় আমাদের এলাকা থেকে টাকা চাঁদা তুলে তা বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌঁছে দিতেন ছাত্তার। বঙ্গবন্ধু তাকে খুবই স্নেহ করতেন। খুলনায় এক জনসভায় তার নাম দিয়েছিলেন বেদুইন। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরে তিনি খালি পায়ে হেঁটেছেন বহুদিন। বেদুইন সাত্তারের বড় ছেলে সুজাউদ্দৌলা বলেন, মা আমার নাম রেখেছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস। আব্বার কাছে শুনেছি, বঙ্গবন্ধু নড়াইল এক সভায় এসে আমাকে দেখেছিলেন। আমার মায়ের নাম মমতাজ জেনে সম্রাট শাহজাহানের ছেলের নামে আমার নাম রাখেন সুজাউদ্দৌলা। বেদুইন সাত্তারের সেজো ছেলে, চাচুড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম হীরক বলেন, ২০১৬ সালে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে আমার পরিচয় দেই। তিনি তাৎক্ষণিক বাবার খোঁজ খবর নেন। বাবাকে তিনি ছোটবেলা থেকেই চিনতেন জানিয়ে বলেন, চাচাকে আমার জন্য দোয়া করতে বলবেন। পরে প্রধানমন্ত্রী বাবার জন্য কিছু উপহার সামগ্রী দেন আমার কাছে। নড়াইল জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার মোঃ গোলাম কবীর, সাত্তার ভাই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ একজন সহচর। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরে তিনি বহুদিন জুতা-স্যান্ডেল পায়ে দেননি। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন, এ ধরনের ত্যাগী,আত্বপ্রত্যয়ী মুজিব প্রেমীক নড়াইলে তথা দেশে দিতীয়টি পাওয়া যাবেনা। আমরা খোজ নিয়ে দেখেছি তিনি বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। আমরা সর্বদা তিনার খোজখবর রাখছি