সারাদেশের বাঁশের চাহিদা পূরণ করে নীলফামারী। জেলার ডিমলা সদর ইউনিয়নের তিতপাড়ায় বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রায় ৫০টি পরিবার। এছাড়া এই জেলার ২৫০টি পরিবার বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। সাত পুরুষের ঐতিহ্যবাহী পেশাকে কোনোরকম ধরে রেখেছেন তারা। তবে উৎপাদিত সামগ্রীর ন্যায্যমূল্য না থাকায় এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত অনেকে বাধ্য হয়ে বেছে নিচ্ছেন অন্য পেশা।
নীলফামারী সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালীপাড়া গ্রামের হাড়িপাড়ার বুলবুলি হাজেরার কথা শুনলেই বেহাল দশা কিছুটা বোঝা যায়, ‘বাপের হাতে ডালি কুলা, চাইলন (চালা), ঝুড়ি ও ডুলি বাঁধা শিখছি। স্বামীর সংসারে এসে ৩০ বছর থাকি এই কাম (কাজ) করি। বেটা দুইটা, বেটি একটা। ওরাও এই কামই করে। তাও সংসার চলে না।’
বুলবুলির ছেলে রমানাথ হাজের জানান– অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে ডালি, কুলা ও ডুলি বানানোর হিড়িক পড়ে। পুরনো দিনের কথা শোনা গেলো তার মুখে, ‘ধান বাড়িতে এলে আগাম বায়না ও বাঁশ দিয়ে যেত মানুষ। কামাই খুব হইত। এখন পেটে চলে না। প্লাস্টিকের পাতিল ছেড়ে হামার বাঁশের জিনিস নেয় না মানুষ।’
তিতপাড়া গ্রামের বাঁশের সামগ্রীর কারিগর আছির উদ্দিন তাদের কাজের বর্ণনা দিলেন এভাবে– পুরুষদের প্রধান কাজ বাঁশ কিনে এনে সেগুলো কাটছাট করে কাজের উপযোগী করে দেওয়া। এরপর বিভিন্ন সামগ্রী হাতে তৈরি করেন বাড়ির নারীরা। এরপর সেগুলো বাজারে বিক্রি করে পুরুষরা।
জেলা শহরে বাঁশের তৈরি সামগ্রী বিক্রি করতে এসে জামিনুর রহমান বলেন, ‘একসময় বাঁশ দিয়ে বানানো মাছ রাখার খলই, ডুলি, চালা, ঢাকি কুলা, খাঁচা, চলনি, চাটাই, ঝুড়ি পলো, ডারকির খুব চাহিদা ছিল। বাজারে তোলার পর ক্রেতা সামলাতে হিমশিম খেতে হতো। এখন হাটে আসা-যাওয়ার ভ্যান ভাড়াই ওঠে না। আগে ধান রাখার একটি বড় ডুলি বিক্রি হতো ৭০০-৮০০ টাকা। চাহিদাও ছিল প্রচুর। এখন সেই ডুলির ক্রেতাই নেই।’
নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাঁশ গবেষণা কেন্দ্র। প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুই একর জমির ওপর কেন্দ্রটি গড়ে উঠেছে। এখানে বাঁশের বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
নীলফামারী ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের ব্যবস্থাপক (বিসিক) হোসনে আরা খাতুন মানছেন, প্রতিনিয়ত বাঁশের তৈরি সামগ্রীর ব্যবহার কমছে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাঁশের তৈরি সামগ্রীর আদলে প্লাস্টিক পণ্য বানাচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। মূলত এ কারণে এতে বিপাকে পড়েছে এই শ্রেণিপেশার মানুষ। তবে বিছিন্নভাবে তাদের সহযোগিতা করার কোনও সুযোগ আমাদের নেই।’
নীলফামারী জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরীর আশ্বাস, ‘বাঁশ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহায়তা প্রদানের সুযোগ থাকলে তা অবশ্যই দেওয়া হবে।’
সূত্র, বাংলা ট্রিবিউন
অপরাজেয় বাংলা
এল.বি টাওয়ার ২য় তলা, নওয়াপাড়া , অভয়নগর, যশোর
ফোন নং : ০১৭১০৭৮৫০৪০
ইমেইল : [email protected]
ফেসবুক : fb.com/dainikaparajeyobangla
প্রকাশক ও সম্পাদক :
মোঃ কামরুল ইসলাম
মোবাইল নং : ০১৭১০৭৮৫০৪০
নির্বাহী সম্পাদক :
মোঃ মিজানুর রহমান
মোবাইল নং : ০১৯১৫৯৪৮৪০৪
উপদেষ্ঠা সম্পাদক :
চৈতন্য কুমার পাল
মোবাইল নং : ০১৭১২৫৮৩৪৩৮
অপরাজেয় বাংলা ডেক্স :