Type to search

নড়াইল পৌর গোরস্থানের বাঁধাইকৃত কবর ভেঙ্গে ফেলায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া॥

নড়াইল

নড়াইল পৌর গোরস্থানের বাঁধাইকৃত কবর ভেঙ্গে ফেলায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া॥

নড়াইল পৌর গোরস্থানের বাঁধাইকৃত কবর ভেঙ্গে ফেলায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া॥
আগের অবস্থায় কবরগুলি ফিরিয়ে দেয়ার দাবি॥ অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনের
হুমকি

 

নড়াইল প্রতিনিধি
নড়াইল পৌরসভা কর্তৃক শহরের আলাদাতপুরস্থ গোরস্থানের বাঁধাইকৃত কবর ভেঙ্গে
ফেলায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে ফেসবুকে সমালোচনা করেও পোস্ট
দিচ্ছেন।
এ ঘটনায় বুধবার (২৪মে) দুপুরে নড়াইল জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনে তাৎক্ষনিক
অনানুষ্ঠানিক এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন, জেলা আইনজীবী
সমিতির সভাপতি অ্যাডঃ হেমায়েত উল্লাহ হিরু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি
অ্যাডঃ সুবাস চন্দ্র বোস, অ্যাডঃ ইকবাল হোসেন সিকদার, অ্যাডঃ নজরুল
ইসলাম, অ্যাডঃ আব্দুল মুকিত লাভলু, জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ
সম্পাদক কাজী ইসমাইল হোসেন লিটন, ঠিকাদার আজহারুল ইসলাম, রেজাউল আলম
প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, নাগরিকদের না জানিয়ে যেভাবে কবরস্থান ভাঙ্গা হয়েছে তা
মেনে নেওয়া যায় না। যে অবস্থায় কবরগুলি ছিল সেই অবস্থায় ফিরিয়ে না দিলে
বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে জানান। এছাড়া এ বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার
পূনরায় জেলা আইনজীবী ভবনে করণীয় সম্পর্কে সভা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে নড়াইল পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর মঞ্জুরুল কবীর
নান্নু জানান, এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৫মে) বিকেলে কবরাস্থানের সামনে
স্থানীয় নাগরিকদের আয়োজনে এক প্রতিবাদ সভার আহবান করা হয়েছে। উল্লেখ্য,
সোমবার (২২ মে) বিকেল থেকে এ কাজ শুরু হলেও মঙ্গলবার দুপুরে জেলা
প্রশাসনের হস্তক্ষেপে কবরাস্থানের কাজ বন্ধ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল-যশোর সড়কের পাশের্^ শহরের
প্রাণকেন্দ্র আলাদাতপুরে ১ একর ৮৩ শতাংশ জায়গার ওপর পৌরসভার এই কবরটি
স্থাপিত। বর্তমানে এখানে ১৬৪টির মতো কবর বাঁধানো ছিল এবং আরও ৫০টির মতো
বাঁশের চটা দিয়ে সীমানা দেওয়া রয়েছে। একটি প্রকল্পের আওতায় আলাদাতপুর পৌর
গোরস্থান উন্নয়নের কাজ শরুর জন্য গত ২০মার্চ পৌর মেয়র স্বাক্ষরিত এক
চিঠিতে ২৬মে তারিখের মধ্যে এসব বাঁধাইকৃতকবর অপসারণের জন্য অনুরোধ করা
হয়। অন্যথায় উক্ত সময়ের পর পৌরসভা কর্তৃক কবর অপসারণের ব্যবস্থা করা হবে
বলে জানানো হয়। জানা গেছে, কোভিড-১৯ প্রকল্পের আওতায় আলাদাতপুর পৌর
গোরস্থানের একটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শরুর জন্য ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে এ
কাজের মধ্যে রয়েছে কবরস্থানের মধ্যে বাঁধাইকৃত সমস্ত কবর ভেঙ্গে সেখানে
মাটি দিয়ে সমান করে মাটি ভরাট, দৃষ্টিনন্দন রাস্তা, লাইটিং এবং সীমানা
প্রাচীর (আংশিক) করা হবে।
এ বিষয়ে জেলা যুব মহিলা লীগের প্রাক্তন আহবায়ক নারী নেত্রী পলি রহমান
জানান, আমার বাবা-মা ভাইসহ অনেক আতœীয় এখানে শায়িত। কবর ভেঙ্গে শেষ
চিহৃটুকু নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। কবরস্থান ভাঙ্গার বিষয় নিয়ে মেয়র মহোদয়
একবার বসাবসি করলের ভাঙ্গার কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের জানা নেই। আমাদের দাবি
এটা আবেগের সর্বশেষ জায়গা। যেভাবে সবার কবর বাঁধাই করা ছিল, সেভাবে সবার
কবর বাঁধাই করে দেওয়া হোক।
এ বিষয়ে নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম অনিক এ
ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, যেভাবে কবরাস্থান ভাঙ্গা হয়েছে সেটা সঠিক
পন্থা নয়। সবাইকে নিয়ে গণশুনানী করে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতো। তিনি
অচিরেই ভেঙ্গে ফেলা কবরগুলোকে উঁচু করে চিহিৃত এবং নামফলক দেওয়ার দাবি
জানান।
নড়াইল শহরের মহিষখোলা এলাকার বাসিন্দা মাসুদুল হক টুটুল বলেন, আমার
বাবা-মা এখানে শায়িত। ১৯৮৫ সালে ৩ হাজার টাকা দিয়ে কবরস্থানের জায়গা ক্রয়
করি। এভাবে না ভেঙ্গে পৌর মেয়র অন্যত্র আরও একটি কবরস্থান তৈরি করতে
পারতো।
এ বিষয়ে নড়াইল সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ সেলিম আহম্মেদ
বলেন, শহরের কয়েকজন গণ্যমাণ্য ব্যক্তি তাদের আবেগ-অনুভূতির আমাদের কাছে
জানান। এজন্য সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে। পরবর্তীতে সবার সাথে বসে
সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে নড়াইল পৌর মেয়র আনজুমান আরা বলেন, কবরের অধিকাংশ জায়গা বাঁধাই-এর
কারণে কবরাস্থান দিনি দিন ছোট হচ্ছে। যে অবস্থা তাতে আর কয়েক বছর পর
কাওকে কবরস্থ করা কষ্টকর হয়ে যাবে। তাই পৌরবাসীর মঙ্গলের জন্যই এ
উন্নয়নমূলক কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। সবাইকে নোটিশ দেওয়া, দু’বার মাইকিং
করে, নাগরিকদের নিয়ে একবার মিটিং করা, শহরের বিভিন্ন মসজিদে ইমামদের
বিষয়টি অবগত এবং শুক্রবার জুম্মার নামাজে সবাইকে বিষয়টি জানানোসহ বিভিন্ন
পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তখন কেউ আপত্তি করেনি। পরে এটি নিয়ে শহরের আপত্তি
এবং নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার সাথে কথা বলো হলে তিনি
সাময়িকভাবে কাজটি বন্ধ রাখতে বলেছেন। ভেঙ্গে ফেলা কবরগুলোর চিহৃ রাখবার
জন্য নামফলকও করা হবে বলে জানান।