Type to search

নড়াইলে এসএসসি পরিক্ষায় মেয়ের কেন্দ্রে পিতা হল সুপার

নড়াইল

নড়াইলে এসএসসি পরিক্ষায় মেয়ের কেন্দ্রে পিতা হল সুপার

নড়াইল প্রতিনিধি
নড়াইল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রেই পরীক্ষা
দিচ্ছেন হল সুপার শরিফুল ইসলামের মেয়ে শিবানা খাতুন। ওই এসএসসি পরীক্ষার
শুরুর দিন থেকেই এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র্রের হল সুপার শরিফুল ইসলামের
বিরূদ্ধে দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তারপরও তিনি যথারীতি হল সুপারের
দ্বায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শরিফুল ইসলাম নড়াইল সদর উপজেলার আরবিএফএম
ভবানীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তার মেয়ে শিবানা নড়াইল
সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। এসএসসি
পরীক্ষা শুরুর দিন থেকেই নড়াইল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষা
কেন্দ্র্রের হল সুপার ও আরবিএফএম ভবানীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান
শিক্ষক শরিফুল ইসলামের বিরূদ্ধে নিজের মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী শিবানাকে
বিশেষ সুযোগ সুবিধা দেয়ার অভিযোগ উঠে।
নিয়মিতভাবে প্রতিটি পরীক্ষার দিন শরিফুল ইসলাম মেয়ে শিবানার পরীক্ষা
কক্ষে গিয়ে সহযোগিতা করেন। নিজের পছন্দের শিক্ষককে ওই কক্ষে ডিউটি দিয়ে
মেয়েকে সহযোগিতা করান। ইংরেজি অংক পরীক্ষায় ওই মেয়েকে ব্যাপকভাবে
সহযোগিতা করা হয়েছে। এতে ওই কক্ষের অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায়
অসুবিধা হওয়ায় তারা আপত্তি করলেও কোন লাভ হয়নি। বরং এতে ক্ষুব্ধ হয়ে
তাদেরকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। অংক পরীক্ষার দিন শরিফুল ইসলাম
মেয়েকে সহযোগিতা করার জন্য নিজ বিদ্যালয়ের অংকের শিক্ষককে মেয়ের পরীক্ষা
কক্ষে ডিউটি দেন।
গুঞ্জণ আছে ওই শিক্ষক লুজ সীটে পরীক্ষার্থী শিবানাকে অংক করে দেন এবং তার
পাশে দাঁড়িয়ে ব্যাপক সহযোগিতা করেন। পাশের অন্যান্য পরীক্ষার্থীরা আপত্তি
করে। এতে উত্তেজিত হয়ে ওই শিক্ষক রাজেশ্বরী নামে এক পরীক্ষার্থীকে ধমকান
বলে জানা যায়। পরীক্ষা কেন্দ্রের হল সুপার হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে
প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম যা-খুশি তাই করছেন। বিষয়টি পরীক্ষা
কেন্দ্র্রের গন্ডি পার হয়ে অভিভাবক পর্যায়ে পৌঁছেছে। কিন্তু সন্তানের
অনাকাংখিত ক্ষতির কথা ভেবে কেউ কিছু বলছেন না। কারণ ইতোপূর্বে শিক্ষকের
রোষানলে পড়ে একাধিক পরীক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার উদাহরণ নড়াইলে রয়েছে।
এ বিষয়ে নড়াইল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফিরোজ
কিবরিয়া জানান, শিবানী নড়াইল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে
১১৪ নং রুমে পরীক্ষা দিচ্ছে। প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম মেয়ের পরীক্ষা
কেন্দ্রেই হল সুপারের দ্বায়িত্ব পালন করছেন। তিনি মেয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে
কোন দ্বায়িত্ব পালন করতে পারবেন কি-না? এমন প্রশ্নে প্রধান শিক্ষক ফিরোজ
কিবরিয়া বলেন, এ ধরনের দ্বায়িত্ব পালনের কোন সুযোগ নেই। প্রধান শিক্ষক
শরিফুল ইসলাম মেয়ে শিবানা’র পরীক্ষা দেয়ার তথ্য গোপন করেই হল সুপারের
দ্বায়িত্ব নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে আরবিএফএম ভবানীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও নড়াইল
সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র্রের হল সুপার শরিফুল
ইসলাম বলেন, তার কোন মেয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে না। তা-হলে ১১৪ নং কক্ষে গিয়ে
শিবানা নামের মেয়েটিকে সাহায্য করেন কেন? পছন্দের শিক্ষকদের ওই কক্ষে
উদ্দেশ্যমুলকভাবে ডিউটি দিয়ে ওই মেয়েটিকে সাহায্য করান কেন ? এসব
প্রশ্নের উত্তরে বলেন,ওই মেয়েটি তার বন্ধুর মেয়ে। তা-হলে ওই মেয়ের প্রবেশ
পত্রে আপনার নাম লেখা কেন? এমন প্রশ্নে তিনি নির্বাক থাকেন। পরবর্তীতে
তিনি এ ব্যাপারে কোন কিছু না করার জন্য অনুরোধ করেন। সামান্য স্বার্থে
তিনি নিজের মেয়েকে বন্ধুর মেয়ে বলেন।
নড়াইল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এ বিদ্যালয়ের এসএসসি
পরীক্ষা কেন্দ্র সচিব নাসির উদ্দিন বলেন, ‘প্রথম দিকের ৩টি পরীক্ষায় হল
সুপার শরিফুল ইসলাম মেয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়েছিল, এটা সত্য। তাকে
নিষেধ করার পর আর যায়নি। মেয়ের পরীক্ষার কেন্দ্রে তিনি হল সুপার থাকতে
পারবেন কি-না? এমন প্রশ্ন করা হয়ে তিনি বলেন, আগামী পরীক্ষা হতে তাকে
সাসপেন্ড করা হবে।’
নড়াইল সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার এসএম সুলতান মাহমুদ বলেন,‘প্রধান শিক্ষক
শরিফুল ইসলাম কোন ভাবেই মেয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে হলসুপার হিসেবে দ্বায়িত্ব
পালন করতে পারবে না। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে
জানানো হবে।’
জেলা শিক্ষা অফিসার  মোঃ হায়দার আলী বলেন,‘বিষয়টি জানা ছিল না। কেন্দ্র
সচিবকে জানানো হবে। ঘটনার সত্যতা পেলে তাকে বরখাস্ত করা হবে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন,‘বিষয়টি কেন্দ্র সচিবকে
জানিয়ে তাঁর বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *