Type to search

নড়াইলের দারোগা বাড়ি ৩০টির বেশি মৌমাছির চাকে ঘেরা

নড়াইল

নড়াইলের দারোগা বাড়ি ৩০টির বেশি মৌমাছির চাকে ঘেরা

উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে :

নড়াইলের দারোগা বাড়ি ৩০টির বেশি মৌমাছির চাকে ঘেরা। দারোগা বাড়ি’। একটি-দুটি নয়; ৩০টির বেশি মৌমাছির চাকে ঘেরা রয়েছে দ্বিতল ওই বাড়িটি। প্রায় দুই দশক ধরে মৌমাছিরা বাড়িটিতে বাসা বেঁধে আছে। বাড়ির জানালা, বারান্দা ও ছাদের কার্নিশ— সবখানেই শুধু মৌমাছির চাক। এক কথায় বলা যায়— বাড়িটি মৌমাছির দখলে। বাড়িটির অবস্থান নড়াইল সদর উপজেলার কলোড়া ইউনিয়নের আগদিয়া গ্রামে। নড়াইল শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে গোবরা বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রধান সড়ক দিয়ে নওয়াপাড়া বাজার যেতে দুই কিলোমিটার এগোতে হাতের বাম পাশে চোখে পড়বে একটি হলুদ রঙের দ্বিতল বাড়ি। জানা যায়, ওই ‘দারোগা বাড়িতে’ মৌমাছিরা একে একে সর্বোচ্চ ৩০টি মৌচাক তৈরি করেছে। যে কারণে বাড়িটি এখন রাতারাতি নাম পাল্টে ‘মৌচাক বাড়ি’ হিসেবে এলাকায় পরিচিতি পেয়েছে। এদিকে একটু পর পর মৌচাক থেকে মৌমাছি বের হয়ে উড়ে যাচ্ছে পাশের আমবাগানে। মধু সংগ্রহ করে এনে জমা করছে চাকে। এমন দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই বাড়িতে ভিড় করছেন উৎসুক এলাকাবাসী।আরও জানা যায়, ওই ‘দারোগাবাড়ির’ মূলমালিক ছিলেন বাশারত দারোগা নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা। তার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার একমাত্র কন্যার স্বামী জাকির হোসেন চৌধুরী হলেও যুগ যুগ ধরে বাড়িটি ‘দারোগাবাড়ি’ নামে পরিচিত। তবে বাড়িটিতে গত ১৭ বছরে মৌমাছিরা একে একে সর্বোচ্চ ৩০টি মৌচাক তৈরি করেছে। যে কারণে বাড়িটি এখন রাতারাতি নাম পাল্টে ‘মৌচাক বাড়ি’ হিসেবে বেশ পরিচিতি পেয়েছে। গত বছর এই বাড়িতে মৌচাকের সংখ্যা ছিল ২৩টি। সেগুলোর মধু বিক্রি করে মিলেছে প্রায় লাখ টাকা। বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, এলাকায় প্রচুর কৃষিজমি। জমিতে রোপণ করা হয়েছে সরষে। আবার নড়াইল-নওয়াপাড়া প্রধান সড়কের পাশ দিয়ে প্রচুর আমবাগান। দক্ষিণ পাশে এই সড়কের লাগোয়া দ্বিতল ভবন। দোতলা ভবনের পূর্বপাশের কার্নিশজুড়ে সারিবদ্ধভাবে রয়েছে মৌমাছির চাক। এ ছাড়া বাড়িটির ছাদ, জানালার কার্নিশে মৌমাছির বাসা। প্রায় ৩০টির মতো মৌচাক থেকে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করতে ছুটে চলেছে। জানালার ফাঁকা স্থান দিয়ে ঘরে আসা-যাওয়া করছে মৌমাছিরা। নিচে ছোট ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করছে, বাড়ির লোকজনও স্বাভাবিকভাবে ঘোরাফেরা করছে। তবে মৌমাছি কাউকেই কামড় দিচ্ছে না। এমনকি মৌচাকের খুব নিকটে গেলেও কামড় দেয় না। গৃহকর্তা জাকির হোসেন চৌধুরী এ প্রতিবেদক উজ্জ্বল রায়কে জানান, বলেন, ২০০৪ সালে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। বাড়িতে পরিবারের সদস্যরা বসবাস করলেও নির্মাণের এক বছর পর থেকে ২০০৫ সালে মৌমাছি এসে বাসা বাঁধা শুরু করে। প্রতি বছর মৌচাকের সংখ্যা বেড়ে চলছে। গত বছর মৌচাকের সংখ্যা ছিল ২৩টি। এবার ১০টি বেড়ে দাঁড়িয়ে ৩৩টি হলেও সরষে ক্ষেত কম হওয়ার কয়েকটি উড়ে গেছে। বর্তমানে ৩০টি চাক রয়েছে। তবে আমের মুকুল আসায় এখনও আরও মৌচাক তৈরির সময় আছে। হয়তোবা মৌচাকের সংখ্যা আরও বাড়বে। মৌমাছির সার্বক্ষণিক দেখভাল করা মৌচাকবাড়ির সন্তান রানা চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, আমি সবসময় মৌচাকের আশপাশে ঘোরাফেরা করি। এত মৌমাছি থাকলেও আজ পর্যন্ত কখনও কাউকেই কামড় দেয় না। শুধু আঘাত বা উৎপাতের শিকার হলে মৌমাছি আক্রমণ শুরু করে। এ কারণে কেউ যাতে ঢিল বা লাঠি দিয়ে খোঁচা না দেয় তা খেয়াল রাখতে হয়। মৌচাক দেখতে আসা কলেজ শিক্ষার্থী মিশানুর ও ইমন আল মামুন এ প্রতিবেদক উজ্জ্বল রায়কে জানান, এলাকাটি নির্জন। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠের পাশেই বাড়িটির অবস্থান। শীতের সময়ে ক্ষেতগুলোতে শর্ষে আবাদ করা হয়। পাশাপাশি এলাকাটিতে প্রচুর আম বাগান রয়েছে। কিছুদিন আগে মৌচাকের কথা শুনে আমরা দূর থেকে দেখতে এসেছি। ফেসবুকে ছবি তুলে পোস্টও করেছেন।প্রতিবেশী মুদি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মৌমাছির চাক দেখছি। এই বাড়িকে এখন সবাই ‘দারোগাবাড়ি’ নয় ‘মৌচাক বাড়ি’ হিসেবেই চেনে। রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকালে অনেকে কৌতূহলবশত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেন।স্থানীয় আগদিয়া-শিমুলিয়া ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক বিপ্লব হোসেন শেখ বলেন, মৌচাকে সাধারণত কয়েক হাজার মৌমাছি থাকে। মৌমাছি বাসা বাঁধার ক্ষেত্রে সাধারণত নিরাপত্তা ও খাবারের ওপর খুব গুরুত্ব দেয়। তিনি আরও বলেন, বাড়িটি লাগোয়া প্রধান সড়ক দিয়েই আমি নিয়মিত যাতায়াত করতে যেয়ে লক্ষ্য করেছি ওই এলাকায় প্রচুর শস্যক্ষেতে ও আমবাগান। যেখানে ফুলের সমারোহ বেশি থাকে, যেখানে থাকলে ফুলের নেকটার সংগ্রহ করা সহজ, এমন জায়গা পছন্দ করে তারা। যে কারণে প্রতিবছর এত মৌমাছি নিজেদের প্রয়োজনে সেখানে বাসা বাঁধে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে মৌমাছিরা বাসা বাঁধতে শুরু করে। এ সময় বাড়ির চারপাশের সরিষা ক্ষেতে ফুল আসে। সরিষার মৌসুম শেষ হলে আম, লিচু ও মেহগনি, গাছে ফুল আসা শুরু করে। সেসব ফুল থেকেও মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করে। ছয় মাসের মতো থেকে চৈত্র মাসের দিকে চলে যায় মৌমাছি দল। বছরের বাকি সময় চার-পাঁচটি চাক থাকে। মৌমাছিদের অবস্থানকালে পাঁচ থেকে সাতবার মৌয়ালেরা এসে চাক কাটেন। এই বাড়ির মৌচাক দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে। প্রধান সড়কসংলগ্ন হওয়ায় প্রতিনিয়ত চলাচলকারী যানবাহনের যাত্রীরা আসা-যাওয়ার সময় দৃষ্টিনন্দন মৌমাছির চাক উপভোগ করে থাকেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *