Type to search

নির্মাণাধীন সড়কের অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকের উপর প্রকৌশলী চটলেন

অভয়নগর

নির্মাণাধীন সড়কের অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকের উপর প্রকৌশলী চটলেন

অভয়নগরে শংকরপাশা – আমতলা সড়কের অনিয়মের  সংবাদ প্রকাশের পর সাংবাদিকে উপর চটলেন উপজেলা প্রকৌশলী ও তার পরিষদবৃন্দ

 

 

নওয়াপাড়া অফিস: তের মাসে ১৩ শতাংশ কাজও হয়নি এলাকাবাসীর এমন মন্তব্যের খবর প্রকাশের পর উপজেলা প্রকৌশলী সানাউল হক সহ তার অধীনন্থ উপসহকারি প্রকৌশলীরা প্রতিদিনের কথার প্রতনিধিি ও অপরাজয়ে বাংলা নউিজ র্পোটলরে সম্পাদকরে উপর চটলেন।
উপজেলা প্রকৌশলী বললেন, আপনি সংবাদ লিখলেই কি কাজ দ্রুত হবে? উপসহকারি প্রকৌশলীদের কয়েকজন বললেন, দুই তিন বছরে ও কাজ শেষ হবে না । আপনি যান লিখে দেন। বর্তমানে আট টাকার ইট ১০ টাকা হয়েছে সে সব দিকে আপনারা নজর দেন না ? তারা আরো বলেন, আমাদের অফিসের কোন তথ্য নিতে হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি নিতে হবে। গত দিন আপনি আমাদের অফিস থেকে তথ্য নিয়ে ভুল করেছেন। এমন ভুল আর করবেনা। তারা এসব কথা বলে ওই সাংবাদিককে শাসান।
অভয়নগরে শংকরপাশা আমতলা সড়ক ,তের মাসে ১৩ শতাংশ কাজও হয়নি শিরোনামে দৈনিক প্রতিদিনের কথা পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় গত রোববার সংবাদটি প্রকাশ হয়। সংবাদটি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসের কর্মকর্তাদের নজরে আসায় ক্ষিপ্ত হন। ওই দিন বিকালে প্রতিদিনের কথার ওই প্রতিনিধি তথ্য সংগ্রহের কাজে উপজেলা পরিষদে গিয়েছিলেন। তাকে দেখে একজন পিয়নকে দিয়ে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় উপজেলা প্রকৌশলী সানাউল হক উপসহকারি প্রকৌশলীদের অফিসে বসে তাদের সাথে কথা বলছিলেন। ওই প্রতিনিধি তাদের সামনে উপস্থিত হলেই একজন উপসহকারি প্রকৌশলী প্রথমে ধমকের সাথে খবরের প্রসঙ্গ তোলেন। এর পর উপজেলা প্রকৌশলী সহ সেখানে উপস্থিত ৩/৪ জন সহকারি প্রকৌশলী ও কর্মচারী মিলে একের পর এক আক্রমণ করে এ সব কথা বলেন।
গত কালের সংবাদটি ছিলো -“ প্রকল্পে বরাদ্দ ২৬ কোটি আট লাখ টাকা। সামান্য কাজ করে ঠিকাদার বিল উত্তোলন করেছেন ৫ কোটি টাকা। যেটুকু কাজ হয়েছে তা নি¤œমানের। ১৩ মাসে ১৩ শতাংশ কাজ হয়নি বলে এলাকাবাসীর দাবি। যশোরের অভয়নগর উপজেলার শংকরপাশা – আমতলা সড়ক মেরামত ও উন্নয়ন কাজে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এ ধরনের নানা অভিযোগ।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ভৈরব নদের পূর্ব তীরে অবস্থিত জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক শংকরপাশা – আমতলা সড়ক। এই সড়ক পথে যাতায়ত করে নড়াইল জেলা সদর, গোপালগঞ্জ হয়ে রাজধানী ঢাকায় ও যাতায়ত করে এলঅকার জনসাধারণ।সড়কটি ১০বছর মেরামত না করায় বেহাল অবস্থা হয়ে পড়ে। অনেক দেনদরবার করে সড়কটি মেরামমোতের জন্য বরাদ্দ হয়। সড়কটির দৈর্ঘ ২০ কিলোমিটার ৯৪৪ মিটার ও প্রস্ত ১২ ফিট। বর্তমানে ওই সড়কটি ১৮ ফুট প্রস্তে উন্নীত করা হচ্ছে। এতে বরাদ্দ হয়েছে ২৬ কোটি আট লাখ তিন হাজার টাকা। কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে ৪ এপ্রিল ২০২১ থেকে ১০ অক্টোবর ২০২২ খ্রি. পর্যন্ত। দরপত্র আহবানের পর নিয়মতান্ত্রিক ভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন ঢাকার এম এম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানীর মালিক মো: মহিউদ্দীন মঈন।
জানা গেছে এম এম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানীর কাছ থেকে উপ ঠিকাদার হিসাবে মোড়লগঞ্জের মুস্তাফিজুর রহমান ও সুমন খাঁন নামে দুইজন ঠিকাদর সড়কটি মেরামোতের কাজ করছেন। কার্যাদেশ পাওয়ার পর দীর্ঘ ১৩ মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু কাজের কোন অগ্রগতি হয়নি। এ পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার সড়ক (ওয়টার মিক্স মেকাডম) খোয়াবালি দিয়ে সমান করা হয়েছে। এছাড়া শংকরপাশা থেকে আমতলা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে তিন ফুট করে ছয় ফুট মাটি খুড়ে বালি খোয়া দ্বারা ভরাট করা হয়েছে। বাকি প্রায় ১৪ কিলোমিটার সড়ক চলাচলের অনুপযোগি।
সড়কে ইজি ভ্যান চালক উজ্জাল হোসেন বলেন, ‘এই রাস্তায় ভ্যান চালিয়ে আমার সংসার চলে। খানা খন্দে ভরা সড়কে এখন আগের মতো যাত্রাী আসে না। ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাই । এতে প্রতি নিয়ত আমার গাড়ি মেরামোত করতে হয়। বর্তমানে যা আয় হচ্ছে তা প্রায় গাড়ির পিছে ব্যয় হয়ে যায়।’ স্থানীয় বাঘুটিয়া গ্রামের গন্যমান্য ব্যক্তি আজাহার আলী সরদার বলেন, ঠিকাদার কাজ শুরু করেছে আজ থেকে ১৩ মাস আগে এই ১৩ মাসে ১৩ শতাংশ কাজ ও হয়নি। আর কাজ যে টুকু হয়ছেে তার মান খুব খারাপ। আমার এলাকায় রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে। এখন আমার এলাকার উন্নয়ন বন্ধ হয়ে গেছে। লোকজন বাড়ি ঘর নির্মাণের জন্য ইট, বালি, সিমেন্ট. রড আনতে পারছে না। কেউ ঝুঁকি নিয়ে আনতে গেলে খানা খন্দে পড়ে গাড়ি দেবে যায়। একটু বৃষ্টি হলে খানা খন্দে কোমর সমান পানি জমে যায়। লোকজন বাধ্য হয়ে ১০ কিলোমিটার ঘুরে বিকল্প রাস্তা দিয়ে যায়।’
শনিবার সড়কটির তথ্য সংগ্রহ করা কালে যেয়ে দেখা যায়, শংকরপাশা থেকে আমতলা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে তিন ফুট করে ৬ফুট মাটি খুঁড়ে ইট খোয়া দ্বার ভরাট করা হয়েছে। আমতলা থেকে ইছামতি পর্যন্ত ৫/৬ কিলোমিটার রাস্তা(ডব্লুএমএম) ইট খোয়া দ্বারা সমান করা হয়েছে। স্থানীয়রা বলেন, অনিক দিন কাজ বন্ধ ছিলো কয়েক দিন আগে খুড়া খুড়ি শুরু করেছে। সরজমিনে দেখা যায় বাকি সড়কের প্রায় সকল স্থানে খানা খন্দে ভরা।
ইছামতি গ্রামের হারাধন গাইন বলেন, ‘ঠিকাদার ঠিকমোত কাজ করে না। মাঝে মাঝে একটু করে আবার বন্ধ হয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, আমার এলাকায় রাস্তার দুপাশ খুড়ে বালির সাথে মাটি মিশিয়ে ইট খোয়া দ্বারা ভরাট করা হয়েছে। ওদের কাজের কোন গতি নেই।’
সড়ক মেরামতে নিযুক্ত সহকারি ঠিকাদার সুমন খাঁন দুই মাস আগে এক সাক্ষাতকারে জানন, সড়কটি বেহাল অবস্থা হয়ে যাওয়ায় সিডিউল যা করা হয়েছে সেস্তা টিকবে না। যেখানে দেড় কিলোমিটার প্যালাসাটারিং দেওয়া লাগবে সিডিউলে সেখানে মাত্র ৬শ মিটারের কথা উল্লেখ আছে। সড়েকটির যেখানে কার্পেটিং, ই্ট খোয়া উঠে মাটি বের হয়ে গেছে। সেখানে পু:ননির্মাণ না করে মেরামোত করা যাবে না। এ জন্য আমারা টাকার পরিমান বাড়ানো দাবি করেছি। আমাদের দাবি অনুযায়ী অতিরিক্ত বরাদ্দের জন্য স্থানীয় ইঞ্জিনিয়ারিং অফিস থেকে ফাইল পাঠাতে দেরি করছে। আমরা অতিরিক্ত বরাদ্দ না হওয়া পর্যন্ত কাজ করলে বিল পাবোনা। যে কারনে কাজে বিলম্ব হচ্ছে। তিনি আরো জানান এ পর্যন্ত ৮ কাটি টাকার কাজ করে মাত্র দুই কোটি টাকার বিল পেয়েছেন।
এর প্রতি উত্তরে উপজেলা কৌশলী মো: সানাউল হক বলেন, ‘অতিরিক্ত টাকা বরাদ্দ না হলে কাজ বন্ধ রাখার এখতিয়ার ঠিকাদারের নেই। ঠিকাদার কোন অযুহাতে কাজ বন্ধ রাখতে পারবে না। বিষয়টি আমি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।’
বর্তমানে ওই প্রকল্পে দেখভালের দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপজেলা উপসহকারি প্রকৌশলী মো সাইফুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদার ১০ কেটি টাকার কাজ করে ৫ কোটি টাকার বিল উত্তোলন করেছেন। কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। যেখানে বড় সমস্যা সেখানে বাদ রেখে আমরা ঠিকাদারকে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করার তাগিদ দিয়েছি।’