Type to search

নতুন বছরের প্রত্যাশা

সাতক্ষীরা সাহিত্য

নতুন বছরের প্রত্যাশা

বিলাল হোসেন মাহিনী

আজ থেকে শুরু হয়েছে নতুন বছর। নিজেকে বিকশিত করার সময় সমাগত। আমাদের নববর্ষ পরিকল্পনা হতে হবে পরিকল্পিত ও দূরদর্শী। এখানে স্বল্পপরিসরে মানুষের কয়েকটি মৌলিক চাহিদা নিয়ে আলোচনা করার প্রয়াস পাব। ইন শা আল্লাহ।

দিনের শুরু হোক সালাত দিয়ে : মুমিন জীবনের অপর নাম নামাজি জীবন। মুমিন নামাজময় সত্তার প্রতিশব্দ মাত্র। নামাজময় মুমিন পুষ্প শোভিত ফুলবৃক্ষ। নামাজ পড়ে না, এমন মুমিনের শিখরে ফুল নেই, ফল  নেই এবং শিকড়ও পোকার আক্রমণের শিকার। নামাজই ঈমানের মূল অনুষদ ও অনুষঙ্গ। বিগত বছরে সালাত কাজা থাকলে আদায় করার প্রয়াস শুরু করতে হবে। নামাজের খুশু-খুজু তথা শরীর-মনের একাগ্রতা ও মানসিক একমুখিনতা নিশ্চিত করতে হবে। জামাতে সালাত আদায়ের পাবন্দ হতে হবে।

সুন্নাত আকড়ে থাকা : ফরজিয়াতের সঙ্গে সঙ্গে সুন্নতি সালাতের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, বিশেষত তাহাজ্জুদের অভ্যাস জরুরি। তাছাড়া সার্বক্ষনিক দোয়া-ইস্তেগফার ও প্রাত্যহিক সুন্নাতের অনুশীলন চালু করতে হবে।

মানুষের হক (অধিকার) আদায় : স্রষ্টার হক আদায়ের পর সবচে’ বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষের হক (অধিকার) আদায় করা। আল্লাহর হক আদায়ে গাফলতি থাকলে আল্লাহ চাইলে ক্ষমা করতে পারেন। কিন্তু বান্দার হক আদায়ে বা মানুষের প্রাপ্য নিশ্চিত করতে না পারলে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাময় শাস্তি আস্বাদন করতে হবে। আমাদের কথা, কাজ ও আচরণে যেনো অপর মানুষ কষ্ট না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

যাকাত আদায় : যাকাত আদায় না করলে সম্পদ হালাল থাকবে না। হারাম সম্পত্তির কোনো কিছু কবুল হবে না। সহায়-সম্বলের বরকত উঠে যাবে। তাই যাকাত আদায়ে কার্পণ্য নয়। আসুন, আমরা কোনো ভালো আলিমের পরামর্শে জাকাত দেওয়ার প্রচেষ্টা করি! জাকাত দেওয়ার মতো সম্পদ না থাকলে, সদকা করি, দান-খয়রাত করি। সামান্য হোক, তাতে সমস্যা নেই।

সিয়াম : নতুন বছরে আমরা কোনো মানত বা রোজার কাজা থাকলে আদায় করতে পারি। কাজার জীবন ঋণী জীবন। ঋণগ্রস্থ জীবন সৌভাগ্যের হয় না। যাপিত জীবনে জানা মতো কারো সম্পদ, ইজ্জত বা কোনো শারীরিক ক্ষত বা ক্ষতি হয়ে থাকলে পুষিয়ে দেওয়া জরুরি। আসুন, আমরা ক্ষতিগ্রস্থের মনতুষ্টি আদায় করি এবং ক্ষমা চাই। ক্ষমা চাওয়া দুর্বলতা নয়, মহত্ত্বের লক্ষণ।
তিলাওয়াত : আল-কুরআন পড়ি, শুনি ও বুঝি। ঈমানিয়াতের উৎস আল-কুরআন আমরা পড়ি না। আল-কুরআনের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শেখা জরুরি। আমরা কত কিছুই শিখি, কুরআন শিখি না। ভালো কারির তিলাওয়াত শোনাও ইবাদত। বোঝার চেষ্টা করতে হবে। আরবি না জানলে, অন্য ভাষার গ্রহণযোগ্য তাফসির ও অনুবাদ পড়াশোনা করা উচিত।

হাদিস পাঠ : নিয়মিত হাদিসের পড়াশোনা করা উচিত। ঈমানিয়াতের দ্বিতীয় আকর হাদিস সমগ্র। অনুবাদে হলেও হাদিসের সঙ্গে পরিচিতি থাকা উত্তম।

নবিজী’র জীবনী : সিরাত বা প্রিয় নবীকে নিয়ে রচিত বইগুলো পাঠ করা জরুরি। বিশুদ্ধ সিরাত অধ্যয়ন করা অবশ্যই প্রয়োজন। আমাদের প্রিয় নবীজির জীবনী আমাদের অজ¯্র প্রশ্নের উত্তর খোলাসা করে দেয়।
মাসয়ালা শেখা : দৈনন্দিন মাসআলা-মাসায়েল জানা, পড়া ও শোনা জরুরি। প্রাত্যহিক কাজে আমাদের প্রয়োজনীয় মাসআলা বিশুদ্ধ আলেমের কাছে জানা যায়। শুদ্ধ বই পড়া যায়। প্রখ্যাত আলেমের মাসআলা নির্ভর আলোচনা শোনা যায়।

মাসনুন দোয়া : কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত প্রয়োজনীয় দোয়া মুখস্থ করা উচিত। এসব জীবনে বরকত সৃষ্টি করে। মাসনুন ও কুরআনিক দোয়ার অভ্যাস থাকলে জীবন শোভামন্ডিত হয়। ঈমান কল্যাণের বাতিঘর। এর দ্বারা মানুষ ও মানবতার কল্যাণ করা যায়। দেশ ও জাতির কল্যাণ করা যায়। উম্মাহ ও বিশ্বের কল্যাণ করা যায়। প্রকৃতি ও অপ্রকৃতির কল্যাণ করা যায়।

সহীহ নিয়্যত : নিয়্যত ও পরিকল্পনাহীন থাকা ঈমানের দাবির পরিপন্থী। ছোট হোক বড় হোক, ব্যস্ততায় থাকা অতি উত্তম। ইসলাম বর্ণিত গুনাহের কাজ ও চিন্তা থেকে দূরে থাকা উচিত। পাপ ঈমানিয়াতে কলুষতা ছড়ায়। পাপ থেকে ছলে-বলে ও কৌশলে দূরে থাকতে হবে। তবেই ঈমানে রং আসবে, রওশন আসবে, রওনক আসবে। কুরআনে বর্ণিত জীবননগর গড়ে তুলতে হবে।  হাদিসের সোনালি আলোয় নিজেদের রাঙাতে হবে। হাদিসের জীবনই প্রশান্তির জীবন, সুখময় জীবন। অন্য জীবন কৃত্রিম ও অন্তসারশুন্য।

আত্মীয় ও প্রতিবেশীর হক : প্রতিবেশী ও পড়শির হক আদায় করা উচিত। ঈমান প্রতিবেশীর হক আদায়কে গুরুত্ব প্রদান করে। আত্মীয়ের খবরাখবর নেওয়া ঈমানিয়াতের কাজ, বিশেষত রক্তের সম্পর্ককে সবিশেষ মূল্য দিতে হবে। অশ্লীল প্রতিযোগিতা ও হিংসা-বিদ্বেষ আমাদের পরিবেশকে কুরে কুরে খেয়ে ফেলছে। এসব মনোব্যাধি থেকে বেরিয়ে ক্ষমা ও উদারতার চাদরে ঈমানি খুশবু বিলাতে হবে। মুমিন মানুষ বা প্রকৃতির ক্ষতি করতে পারে না। মুমিন মুমিনের ক্ষতিসাধনের কল্পনাও করতে পারে না। আমাদের কারণে যেন মানুষ ও মানবতা ব্যথা না পায়, সেভাবে পথ চলি, সেভাবে কথা বলি!
পিতামাতা ও মুরব্বীদের সেবা ও দোয়া : পিতা-মাতা আমাদের জান্নাত। তাদের সর্বত্তম সেবা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের জন্য দোয়া অব্যহত রাখতে হবে। আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান করা ঈমানের হুকুম। ছোটদের স্নেহ করা ঈমানের দাবি। সবাইকে ভালোবাসা ঈমানের শান। যাঁর যাঁর অবস্থান থেকে ছোট ও অসহায়দের ভালোবাসি। সামাজিক সংখ্যালঘু মানুষজনের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করি। প্রত্যেক সৃষ্টির অধিকার বুঝিয়ে দিই! সবাইকে ভালোবাসা দিয়ে বুঝিয়ে ও সমঝে চলি। অসহায় ও বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াই।