১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের খবর শোনার পর মুক্তিবাহিনীর স্থানীয় কমান্ডার জালাল হোসেন চৌধুরী তার বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরের দিন (১৭ ডিসেম্বর) সকাল ৭টার দিকে প্রায় ৩৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা নওগাঁ শহরের দিকে অগ্রসর হন। ১৭ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী জগৎ সিংহপুর ও খলিশাকুড়ি গ্রামে আসতেই পাকিস্তানি সেনারা মর্টার শেল ছোড়া শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা শহরের ভেতর যতোই অগ্রসর হচ্ছিলো পাকিস্তানি সেনাদের মর্টার শেল নিক্ষেপ ততোই বাড়ছিলো। জালাল হোসেন চৌধুরীর নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। সম্মুখযুদ্ধে দুই বাহিনীর মধ্যে দূরত্ব একেবারে কমে আসে। মাঝেখানে থাকে শুধু যমুনা নদী। এ যুদ্ধেও হতাহতের ঘটনা ঘটে। রাত পর্যন্ত এ যুদ্ধ স্থায়ী হয়।
পরে, ১৮ ডিসেম্বর সকালে বগুড়া থেকে আসা ভারতীয় মেজর চন্দ্র শেখর, পশ্চিম দিনাজপুর ও বালুরঘাট থেকে নওগাঁ অভিমুখে অগ্রসর হওয়ায় পিবি রায়ের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী নওগাঁয় প্রবেশ করে। হানাদার বাহিনীর তখন আর করার কিছুই ছিলো না। ফলে সকাল ১০টার দিকে প্রায় দুই হাজার পাকসেনা নওগাঁ কেডি স্কুল থেকে পিএম গার্লস স্কুল, সরকারি গার্লস স্কুল, পুরানো থানা চত্বর এবং এসডিও অফিস থেকে শুরু করে রাস্তার দু’পাশে মাটিতে অস্ত্র রেখে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে নতমস্তকে আত্মসমর্পণ করে। এসময় নওগাঁর বিহারী সম্প্রদায় স্বপরিবারে কেডি সরকারি স্কুলে আশ্রয় নেয়। তৎকালীন নওগাঁ মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীকে স্বাগত জানান। বর্তমান ও পুরাতন কালেক্টরেট (এসডিও) অফিস চত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেখানে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা পতাকার প্রতি সালাম জানিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট সাবেক কমান্ড হারুন অল রশিদ জানান, আমরা স্বাধীনতা পাই ২ দিন পর। সেই সময় যোগাযোগের তেমন কোন ব্যবস্থা না থাকায় বোঝা যাচ্ছিলো না কি হতে যাচ্ছে। ১৮ ডিসেম্বর সকালে বগুড়া থেকে অগ্রসরমান ভারতীয় মেজর চন্দ্রশেখর, পশ্চিম দিনাজপুরের বালুরঘাট থেকে নওগাঁ অভিমুখে অগ্রসরমান পিবি রায়ের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী নওগাঁয় প্রবেশ করে। এভাবে নওগাঁ ১৮ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয়।
সূত্র, DBC বাংলা