Type to search

দীপাবলী’র আধ্যাত্মিকতা

ধর্ম

দীপাবলী’র আধ্যাত্মিকতা

 মাস্টার সব্যসাচী বিশ্বাস
অন্ধকার তাও আবার অমাবস্যার! এই অন্ধকারকে দূর করতেই আলো জ্বালতে হয় আর একমাত্র আলো জ্বেলেই অন্ধকার দূর করা সম্ভব। তাই হিন্দুধর্মাবলম্বীরা একটি নির্দিষ্ট দিনে প্রদীপের আলো জ্বেলে তাদের মনের সকল অন্ধকার দূর করে। প্রত্যেক মানুষের মনের মধ্যে থাকতে পারে নানা রকম অন্ধকার। সেই অন্ধকার সৃষ্টি হয় বিভিন্ন কারণে, যেমন লোভ,লালসা, মোহ, মায়া, মমতা, মাৎসর্য, এবং কামের মাধ্যমে হতে পারে। তেমনি অর্থ, ধন, প্রভাব-প্রতিপত্তি খ্যাতির ফলে মানুষের হৃদয়ে জন্ম নিতে পারে অহংকার যা এক প্রকার কালো অন্ধকারময় শক্তি। এই অহংকাররূপ অন্ধকার কারো কারো চারিত্রিক উন্নতিতে অন্যতম অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর তাই দিপাবলী উৎসবে গৃহে প্রদীপ জ্বালিয়ে বাড়ির মধ্যের অন্ধকার দূর করার পাশাপাশি মনের গভীরের সকল অন্ধকার দূর করার চেষ্টা করা হয়। যাতে মানুষ অন্ধকার দূর করে আলোর পথে এগিয়ে যেতে পারে, কোনরূপ অহংকার বা কোনো চারিত্রিক অধঃপতন ছাড়াই। এছাড়া মুর্খতার অন্ধকারকে দূর করতেও জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালাতে হয় তাই দীপাবলী উৎসবে আলো জ্বেলে সে কালো অন্ধকার দূর করা হয় । তমশাময় নিশীতে একটা প্রদীপের আলোই যথেষ্ট হয় মনে সাহস জোগানোর জন্য। তেমনি কোটি কোটি প্রদীপের আলোয় মানুষ মনে সাহস ফিরে পায়। কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছুতে অন্ধকারাচ্ছন্ন পথ খুজে পেতে সাহায্য করে এই প্রদীপের আলো। রামায়ণ অনুসারে রামচন্দ্র পিতৃ আজ্ঞা বা প্রতিজ্ঞা রক্ষা করার জন্য চৌদ্দ বছরের জন্য বনবাসে গিয়েছিলেন সঙ্গে মাতা সীতা। আরো গিয়েছিলেন ভাই লক্ষণ। আর ঘটনা পরম্পরায় রাক্ষস রাজ রাবণ সীতাকে হরণ করে নিজ রাজ্য লঙ্কায় নিয়ে যায়। ভগবান শ্রীরাম সীতা-মাতাকে ফিরে পাওয়ার জন্য রাবনের সঙ্গে লড়াই করে তাকে হত্যা করেন। তাকে সাহায্য করে হনুমান ,বিভীষণ,বানর রাজা সুগ্রীব এবং অন্যান্য বানর সেনারা। তারপর তিনি সীতাকে ফিরে পান। শ্রীরামচন্দ্রের চৌদ্দ বছরের দীর্ঘ বিরহে অযোধ্যাবাসী যখন কাতর হয়েছিলেন, যখন ভগবান শ্রীরাম বনবাসলীলা শেষ করে ভক্ত হনুমানের মাধ্যমে ভ্রাতা ভরতের কাছে অযোধ্যায় ফিরে আসার বার্তা প্রেরণ করেন। রাক্ষস রাজা রাবণরূপ অশুভ পরাশক্তিকে নাশ করার পর দামোদর মাসে (কার্তিক মাস) কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে তিনি অযোধ্যা নগরীতে তার প্রাণপ্রিয় ভক্তদের মাঝে ফিরে আসবেন। তখন অযোধ্যাবাসী তাদের প্রাণপ্রিয় ভগবান শ্রীরামচন্দ্রকে স্বাগত জানানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। কারণ তিনি প্রবেশ করে ধন্য করবেন এই নগরী। শ্রীরামচন্দ্রের আগমন বার্তা পেয়ে অযোধ্যার রাজা ভরত সমগ্র নগরে উৎসবের ঘোষণা দিলে সমগ্র নগরী আলোর সাজে সজ্জিত হয়ে ওঠে। সব অমঙ্গল, অকল্যাণ দূর হবে এই শুভ কামনায় পথে পথে, বাড়িতে বাড়িতে, গাছে গাছে সর্বত্রই মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখে অযোধ্যাবাসী। ভগবান শ্রীরামচন্দ্র অমাবস্যার অন্ধকারে প্রত্যাবর্তন করবেন, তাই সমগ্র অযোধ্যানগরী আলোর প্রদীপ দিয়ে সাজানো হয় যেন তাদের প্রাণপ্রিয় শ্রীরামচন্দ্র অমাবস্যার অন্ধকার দূর করে মঙ্গলময় আলোকের নগরীতে প্রত্যাগমন করেন। লোকশিক্ষা দেয়ার জন্য অশুভ শক্তির প্রতীক, মহাপরাক্রমশালী অসুর রাজ রাবণকে বিনাশ করে এই পুণ্যলগ্নে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র তার প্রিয় ভক্তদের মাঝে ফিরে এসেছিলেন। আর আজ যেদিন দীপাবলি উৎসব পালিত হয় ত্রেতা যুগে সেই দিনে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র পুনরায় অযোধ্যায় ফিরে আসেন । তাই বিশেষ দিনে  আলোকময় প্রদীপ জ্বালা ছাড়াও নানা শব্দবাজি বা ফটকা ফোটায় এবং রং মশাল জ্বালায়। আর তাই হিন্দুধর্মাবলম্বী মানুষ এই শুভ দিনে প্রত্যেক বছর মহা ধুমধামের সাথে পালন করে। যা পরবর্তীতে সারা ভারত জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এবং তা আজও প্রচলিত অসুর বিনাশের পর সকল অন্ধকার দূর করে আলোর পথে সারা বিশ্বে শান্তি স্থাপিত হয়।