Type to search

তেইশের চ্যালেঞ্জ সামলে নেবে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ

তেইশের চ্যালেঞ্জ সামলে নেবে বাংলাদেশ

বিলাল হোসেন মাহিনী

করোনায় বৈশ্বিক বিপর্যয়ের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সংকট তৈরি হয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যয় বেড়েছে বহুগুণ। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বিশেষতঃ খাদ্য ও নিত্যপণ্যের বাজারে চলছে চরম অস্থিরতা। দুই হাজার তেইশ সাল সারা বিশ্বের জন্য মন্দা যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশকেও এই মন্দা মোকাবিলা করতে হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে কীভাবে এর মোকাবিলা করতে হবে, তার ধারণাও দিয়েছেন তিনি। এই মন্দা হলো অর্থনৈতিক ও সামাজিক মন্দা। বিশ্বের বড় বড় ধনী দেশগুলোতেও এই মন্দা দেখা দেবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে তারা যত সহজে তা মোকাবিলা করতে পারবে, আমরা তা পারব না। সেজন্যই এখন থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে এবং সঠিকভাবে মোকাবিলা করে এই সম্ভাব্য মন্দা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে।

আরও রয়েছে আগামি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্রীক রাজনৈতিক লড়াই। আমাদের দেশে ক্ষমতার পলাবদলের রাজনৈতিক সংস্কৃতি সুখকর হয়নি কখনো। তাই ধারণা করা হচ্ছে সরকারি ও বিরোধী শিবিরের অনঢ় অবস্থা তথা কেউ কাউকে ছাড় না দেয়ার মানসিকতা বড় বিপর্যয় নিয়ে আসবে। এ ক্ষেত্রে সরকার ও বিরোধী দলসহ সকলকে ধৈর্য্যরে সাথে জননিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিতে হবে। রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির নামে জনদুর্ভোগ যাতে না হয় সেদিকে উভয়পক্ষকে খেয়াল রাখতে হবে। আর সরকার ও প্রশাসনকে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। তা না হলে, বৈশ্বিক মন্দার সাথে দেশীয় রাজনৈতিক অস্থিরতা সংকট বৃদ্ধি করবে।

বিশ্বব্যাপী মন্দা খুব একটা দেখা যায় না। অনেক বছর পর গত করোনাকালে এই মন্দা দেখেছে বিশ্ববাসী। সারা বিশ্বের স্থিতিশীল অবস্থা করোনা এসে তছনছ করে দিয়েছে। ধনী দেশগুলো হিমশিম খেয়েছে করোনা মোকাবিলা করতে। আমরাও মোকাবিলা করেছি এবং বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে বেশি সাফল্যও পেয়েছি। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে যখন সামনের দিকে এগোনের পথ খুঁজছি; তখনই শুরু হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধে পরাশক্তিদের একগুয়েমিতে সারা বিশ্ব আরও টালমাটাল হয়ে গেল। করোনার সময় আমরা তেমন করে কিছু টের না পেলেও এবার তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। তাই এই যুদ্ধকে করোনার চেয়ে বেশি ক্ষতিকর বলে মনে করা হয়। সারা বিশ্বে অর্থনীতিতে টান পড়েছে। আমাদের মতো দেশ তো বটেই। এই অর্থনৈতিক মন্দার ফলেই আমরা সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছি না কাঁচামালের অভাবে। উন্নয়নের সবকিছুর সঙ্গেই বিদ্যুতের সম্পর্ক। ফলে এর প্রভাব পড়ছে সবখানেই। সবকিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে। এই হলো বর্তমান অবস্থা। সামনে ২০২৩ সাল যদি এর চেয়েও ভয়াবহ হয়, তাহলে কী অবস্থা হবে, তা কল্পনাও করা যাচ্ছে না। তবে আমাদের যে চেষ্টার ত্রুটি আছে, তাও নয়। আমরা আমাদের সব শক্তি ব্যয় করছি বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে। আশা করছি বর্তমান সরকার এ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। তেমন কিছু নির্দেশনাও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন ইতোমধ্যে।

তাই, বর্তমান অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসার পর মনোযোগ দিতে হবে সামনের বছরের দিকে। এ জন্য প্রথমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আশঙ্কায় বলা হয়েছে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের কথা। আমরা তো খাদ্য উৎপাদনকারী দেশ। এখন থেকে পরিকল্পনা মতো এগোতে পারলে খাদ্য নিরাপত্তা আমরা দিতে পারবে বাংলাদেশ। এমনকি অনেক দরিদ্র দেশকে আমরা খাদ্য দিয়ে সাহায্যও করতে পারব। আমাদের রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স বাড়াতে হবে। পর্যায়ক্রমে বাড়ছেও। এটাকে অব্যাহত রাখা জরুরি। এটা অব্যাহত থাকলে সহজেই আমরা আমাদের অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে পারব। এ জন্য যা কিছু করা দরকার, সবকিছুই করতে হবে সরকারকে। আমরা আশা করছি, নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে কার্যকর করা হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, কোনো জমি চাষ না করে ফেলে রাখা যাবে না। আবাদ করতে হবে। এটা করতে পারলে খাদ্য নিরাপত্তায় সহায়ক হবে। আমরা বিশ্বাস করি যে, সরকার করোনার মতো সংকট মোকাবিলায় সফল হয়েছে, বর্তমান যুদ্ধ সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, তেমনিভাবে সরকার ২০২৩ সালের সংকটও কাটিয়ে উঠতে পারবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *