Type to search

ঝিকরগাছায় ক্লিনিকের মালিক ও দাদার ষড়যন্ত্রে প্রাণ হারালো প্রতিবন্ধী নবজাতক

ঝিকরগাছা

ঝিকরগাছায় ক্লিনিকের মালিক ও দাদার ষড়যন্ত্রে প্রাণ হারালো প্রতিবন্ধী নবজাতক

আফজাল হোসেন চাঁদ, ঝিকরগাছা :

যশোরের ঝিকরগাছায় ক্লিনিকের মালিক ও দাদার ষড়যন্ত্রে প্রাণ হারালো প্রতিবন্ধী নবজাতক। এই নৃশংস ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বাঁকড়া সার্জিক্যাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার নামক এক প্রতিষ্ঠানে বলে অভিযোগ উঠেছে। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ইউনিয়নের বাঁকড়া মঠপাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে ইমন হোসেন (২৩) এর সাথে বাঁকড়া গুন্ধরমোড় গ্রামের রবিউল ইসলামের মেয়ে মেয়ে সুমি খাতুন (২০) প্রায় ২বছর পূর্বে প্রেমোজ সম্পর্ক করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। পিতা মাতার অমতে বিবাহ করায় অদ্যবধি সুমির পরিবার মেনে নেয়নি। সংসার জীবনে স্রষ্টার রহমতে সুমির গর্ভে একটি সন্তান আসে। যার পরিপ্রেক্ষিতে সুমির শ্বশুর বাড়ির লোকজন খুশি হয়ে তাকে প্রথমে গত ১০ জুন ঝিকরগাছা পৌর সদরের পারবাজার সংলগ্ন পাঁচপুকুরের সামনে পূর্বাশা ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এন্ড ক্লিনিকে পেগনেসির জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর জন্য নিয়ে আসে। ক্লিনিকের ডাঃ ইসমত আরা মৌসুমী পরিক্ষা করে রির্পোট দেন সুমির পেটে দু’টা বাচ্চা আছে। শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম মনে মনে চিন্তা করে আমার বৌমা (সুমি) এর বয়স অল্প কি করে তার দু’টা বাচ্চা হতে পারে। যার জন্য পরবর্তীতে ৫ জুলাই সুমিকে শার্শা উপজেলার বাঁগআচড়া বাজারের জোহরা মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে গিয়ে চেকআপ করালে সেখানের কর্তব্যরত ডাক্তার বলেন রোগীর পেটের বাচ্চার অবস্থা ভালো না। আপনারা রোগীকে যশোরের কুইন্স হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে আমাকে রিপোর্ট গুলো একটু দেখাবেন। যথারীতি ৭জুলাই যশোর কুইন্স হাসপাতাল (প্রাঃ) লিঃ এ নিয়ে গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে প্রমাণ হয় সুমির গর্ভে প্রতিবন্ধী নবজাতক রয়েছে। ঘটনার বিষয়ে শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম মনে মনে জ্বলতে থাকে আর প্রতিবন্ধী বাচ্চাকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে। যেমন পরিকল্পনা তেমন কাজ ১১ আগস্ট (শুক্রবার) দুপুরের দিকে সুমিকে একতা মেডিকেল সার্ভিসে নিয়ে আসা হয়। তখন সুমির গর্ভে থাকা বাচ্চার হার্ডবিট চলছিল বলে একতা মেডিকেল সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানান। তখন সুমিকে একতা মেডিকেল সার্ভিস কর্তৃপক্ষ তাকে ৫৭মিনিটের জন্য অক্সিজেন দেওয়ার পর সুমির শ্বশুর বা প্রাণ হারানো প্রতিবন্ধী নবজাতকের দাদা সিরাজুল ইসলাম ক্লিনিকের ছয়শত টাকার পরিবর্তে চারশত টাকা বিল পরিশোধ করে রোগীকে বিকালের দিকে বাঁকড়া সার্জিক্যাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে নিয়ে আসে এবং রোগীর কাগজপত্র বিহীন তাকে ভর্তি করে দ্রুত রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান এবং বাচ্চা ডেলিভারী করানোর চেষ্টা করেন। রাত অনুমান ১১টার দিকে ক্লিনিকের মালিকের স্ত্রী ও ক্লিনিকের ডেন্টিস মোছাঃ নিলুফা ইয়াসমিন কর্তৃক নলমাল ভাবে একটি প্রতিবন্ধী নবজাতকে ভূমিষ্ঠ করানো হয়। তবে সেই সময় ক্লিনিকে কোনো ডাক্তারের উপস্থিতি ছিলো না বলে জানা যায়। তবে ঘটনার দিন সুমির বাপের বাড়ির পরিবারের পক্ষ হতে তাকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য যশোরে নিতে যাওয়া হলেও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোগীকে ছাড়পত্র দেননি। তারা বলেন, নলমাল অথবা সিজার করতে হলে আমাদের এখানে ব্যবস্থা আছে আমরাই করবো। ক্লিনিকের মালিকের স্ত্রী ও ক্লিনিকের ডেন্টিস মোছাঃ নিলুফা ইয়াসমিন তিনি গাইনী ডাক্তার বা অভিজ্ঞতা সর্ম্পূণ নার্স কি না এই বিষয়ে ক্লিনিকে জানতে চাওয়া হলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন আমার স্ত্রীর সার্টিফিকেট রয়েছে। তবে সার্টিফিকেটের ছবি তুলে যাচাই-বাছায়ের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসারের নিকট পাঠালে তিনি বলেন, এই কোর্স সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নেই, সুতরাং সার্টিফিকেট সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে পারছিনা তবে সিভিল সার্জন অফিসে যোগাযোগ করলে তথ্য পাওয়া যেতে পারে। সুমির স্বামী বা প্রাণ হারানো প্রতিবন্ধী নবজাতকের পিতা ইমন হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিভিস করেনি। পরবর্তীতে ফোন বন্ধ করে রাখেন। সুমির শ্বশুর বা প্রাণ হারানো প্রতিবন্ধী নবজাতকের দাদা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি চেষ্টা করেছি না বাঁচলে আমরা কি করবো! পূর্বাশা ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এন্ড ক্লিনিকের কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে জানা যায়, তাদের ডাক্তার মেশিনের মাধ্যমে চেকআপ করে সুমির গর্ভে দু’টা বাচ্চা পেয়েছে। তবে এখন কি ভাবে একটা বচ্চা হল সেটা তারা বলতে পারবে না ! একতা মেডিকেল সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইবাদুল ইসলাম বলেন, আমার ক্লিনিকে থাকা অবস্থায় বাচ্চার হার্ডবিট ভালো ছিলো। তবে পরে তার শ্বশুড় আমার এখান থেকে বাঁকড়া সার্জিক্যাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে নিয়ে গেছে। বাঁকড়া সার্জিক্যাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামিরুল ইসলাম বলেন, আমার স্ত্রী, সুমিকে নরমাল ভাবে ডেলিভারী করিয়েছে। বাচ্চা প্রতিবন্ধী ও মরা হয়েছে। ডেলিভারী করার পর আমাদের কলারোয়া উপজেলা হাসপাতাল কমপ্লেক্সের ডাঃ তরিকুল ইসলাম এসে উপস্থিত হন। তখন ডাক্তারকে আপ্যায়ন করে বিদায় দেওয়া হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ মোঃ রাশিদুল আলম বলেন, ঘটনার বিষয়ে আমি ভালো ভাবে অবগত নয়। আমার নিকট কেউ অভিযোগ করেনি। আমার নিকট অভিযোগ আসলে আমি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।