Type to search

ছেলে-বৌ মা ফেলে রাখলেন গোয়াল ঘরে, অসুস্থ-অর্ধনগ্ন মা’কে উদ্ধার করলেন ইউএনও

চৌগাছা

ছেলে-বৌ মা ফেলে রাখলেন গোয়াল ঘরে, অসুস্থ-অর্ধনগ্ন মা’কে উদ্ধার করলেন ইউএনও

চৌগাছা প্রতিনিধি
যশোরের চৌগাছায় এবার ছেলে-বৌমা কর্তৃক অসুস্থ-অর্ধনগ্ন অবস্থায় গোয়াল ঘরে ফেলে রাখা মা’ কে (৬৫) উদ্ধার করে ছেলের ফ্লাট বাড়িতে তুলে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা।
রোববার দুপুরে উপজেলার পাশাপোল ইউনয়িনের বুড়িন্দিয়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। স্থানীয় একটি সূত্রে সংবাদ পেয়ে রোববার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলিশসহ উপস্থিত হন ওই বাড়িতে।
সরেজমিনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বৃদ্ধা অসুস্থ মা’ (৬৫) গোয়াল ঘরের ময়লার মধ্যে মেঝেতে একটি কাথার উপর প্রায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন। গোয়াল ঘরটি ছাদের হলেও তীব্র গরমেও সেখানে নেই কোন বৈদ্যুতিক বা হাতপাখার ব্যবস্থা। অথচ পাশেই সম্পূর্ণ পাকা একটি ছাদের রান্না ঘরে বৈদ্যুতিক পাখার নিচে বসে বৃদ্ধার পুত্রবধূ এবং তাঁর পুত্রবধূ (বৃদ্ধার ছেলের পুত্রবধূ) রান্না করছেন। পাশেই চার রুমের সম্পূর্ণ আলীশান একটি ফ্লাটবাড়ি। যার প্রতিটি রুমের মেঝে, এমনকি ছাড়ে ওঠার সিড়ি পর্যন্ত টাইলস করা। কক্ষগুলি টিভি, ফ্রিজসহ আসবাবপত্র দিয়ে পরিপাটি করে সাজানো।
এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই বৃদ্ধা মা’য়ের পুত্রবধূর কাছে বৃদ্ধাকে কেন এই ময়লার মধ্যে গোয়াল ঘরে রাখা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেন, উনি কাপড়-চোপড়ে মূত্রত্যাগ করে ফেলছেন বলে লোকজন বলেছে গোয়াল ঘরে রাখতে, আবার বলেন বৃদ্ধা নিজেই এখানে থাকতে চেয়েছে।
একপর্যায়ে গ্রামের নারী-পুরুষরা ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁরা বলেন বৃদ্ধার ঝগড়াটে পুত্রবধূর ভয়ে তাঁরা কোন প্রতিবাদ করতে পারেননি। তাঁরা আরও জানান বৃদ্ধার একমাত্র ছেলের দুই ছেলে। যাদের বড়টিকে বিয়ে দিয়েছেন। আর ছোটটি প্রবাসী। তাঁরা জানান, তিনদিন আগে মেয়ের জামাই বৃদ্ধাকে ছেলের বাড়িতে রেখে যাওয়ার পর থেকেই তাঁকে গোয়াল ঘরে ফেলে রেখেছেন ওই ছেলে ও পূত্রবধূ।
এসময় বৃদ্ধা ইউএনওকে জানান, প্রায় তিন-চার বছর ধরে তিনি তাঁর চার মেয়ের বাড়িতে থাকেন। কয়েকদিন আগেও ছিলেন বরিশালে ছোট মেয়ের বাড়িতে ছিলেন। সেখান থেকে কয়েকদিন আগে আসেন চৌগাছার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামে আরেক মেয়ের বাড়িতে। সেখানে তিনি বাঁশের উপর পড়ে গিয়ে মারাত্মক আহত হন। মেয়ে-জামাই খুবই গরীব পরিবারের হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালেও নেননি বা চিকিৎসাও করেননি। সেখান থেকে মেয়ের জামাই গত তিন দিন আগে তাঁকে ছেলের বাড়িতে রেখে যান। সেদিন থেকেই ছেলে ও তাঁর বৌ বৃদ্ধাকে গোয়াল ঘরে ফেলে রেখেছেন। তিনি জানান, যন্ত্রণায় তিনি ছটফট করছেন। তাঁর দুচোখ জ¦লে যাচ্ছে। রাতে বা দিনে কোন সময় তাঁকে একটি ফ্যানও দেয়া হয়নি। তিনি জানান মেয়ের বাড়িতে তিনি ভালোই ছিলেন। তিনি বারবার বলতে থাকেন তোমাদের কে খবর দিয়েছে? আমার মেয়ে?
পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা স্থানীয় কয়েকজন নারীকে সাথে নিয়ে ওই বৃদ্ধা মা’কে ছেলের ফ্লাটের একটি কক্ষে তুলে দেন। এরপর ছেলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকায় পুত্রবধূর কাছ থেকে মুচলেকা নেয়া হয়। বৃদ্ধা আমৃত্যু ছেলের ফ্লাটবাড়ির কক্ষে থাকবেন। কাপড়-চোপড় নষ্ঠ করে ফেললে ছেলে-পুত্রবধূরা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে দেবেন এবং সোমবারই বৃদ্ধাকে হাসপতালে নিয়ে চিকিৎসা করবেন। এসময় ওই পুত্রবধূ বলেন আমাদের তাঁকে ডাক্তার দেখানোর মতো টাকা নেই। তখন তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। একমাত্র ছেলে। তিনিও নিজের মা’কে গোয়াল ঘরে গরুর মলমূত্রের মধ্যে ফেলে রেখেছেন। তিনি বলেন ওই মা’কে ছেলের ঘরে তুলে দেয়া হয়েছে এবং চিকিৎসক দেখানোর জন্য বলা হয়েছে। এর অন্যথা করার অভিযোগ পাওয়া গেলে ওই ছেলে ও পূত্রবধূর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *