Type to search

চৌগাছা উপজেলা ও পৌর ছাত্রদলের কমিটি অনুমোদনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠদের পদত্যাগ

অন্যান্য

চৌগাছা উপজেলা ও পৌর ছাত্রদলের কমিটি অনুমোদনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠদের পদত্যাগ

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি
যশোরের চৌগাছা উপজেলা ও পৌর ছাত্রদলের কমিটি অনুমোদনের ২৪ ঘন্টা পার না হতেই কমিটি থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ-পদবীধারী নেতারা পদত্যাগ করেছেন। উপজেলা কমিটির ২১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি থেকে ৪ যুগ্ম-আহবায়কসহ ১১ নেতা এবং পৌর কমিটির ১২ সদস্যের আহবায়ক কমিটি থেকে আহবায়ক ও ৪ যুগ্ম-আহবায়কসহ ৭ নেতা এই পদত্যাগপত্র দিয়েছেন।
পদত্যাতী নেতারা হলেন উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক-১ আল আমিন ইসলাম তুহিন, যুগ্ম আহবায়ক-২ আব্দুল্লাহ আল মামুন, যুগ্ম আহবায়ক-৪ জাকির হাসান, যুগ্ম আহবায়ক-৬ ইমরান হোসেন, এবং আহবায়ক কমিটির সদস্য যথাক্রমে রবিউল ইসলাম, আলী রেজা রাজু, ইলিয়াস হোসেন, খালেদুর রহমান, বিপুল হোসেন, সুরুজ হোসেন সুমন ও হুমায়ন কবীর। এছাড়া পৌর কমিটির আহবায়ক মাজেদুল ইসলাম, যুগ্ম-আহবায়ক-১ মেহেদী হাসান শয়ন, যুগ্ম-আহবায়ক-২ হাকিম রেজা, যুগ্ম আহবায়ক-৫ শোয়াইব আক্তার, যুগ্ম-আহবায়ক-৬ ইমরান হোসেন শাকিল এবং আহবায়ক কমিটির সদস্য রাকিব হোসেন ও আব্দুর রহমান নয়ন।
তবে যশোর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর বলেন আমরা এখনো পদত্যাগপত্র হাতে পায়নি। একজন এসেছিলেন। বলছেন সবার স্বাক্ষর করে নিয়ে এসেছি। পদত্যাগ করবো। তারা ১৯ জনের পদত্যাগের কথা বললেও আমরা ফেসবুকে দেখছি ১৫ জনের পদত্যাগপত্র দেখছি। এভাবে ফেসবুকে তো আর পদত্যাগ করা যায় না, আমি বলেছি পদত্যাগ করতে চাইলে পদ্যাগপত্র নিজে এসে জমা দিতে হবে। এরপর তারা এগুলো ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছে। তাছাড়া পৌর ছাত্রদলের আহবায়ক মাজিদুল, তিনি এখনও ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি বলেন আমরা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে চৌগাছা কর্মী সমাবেশ করেছি। আমরা যতটুকু জানি কোন চাকুরীজীবি কমিটিতে আসেনি। তিনি আরো বলেন দেখুন, আমরা নিরপেক্ষ কমিটি করেছি বলেই তারা বেশি পদ পেয়েছে। আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবক বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী ২০০০ সালের আগে এসএসসি পাশ এমন কাউকেই কমিটিতে আনা হয়নি। তিনি বলেন কলেজ কমিটির বিষয়ে আমাদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে কোন অবস্থাতেই ছাত্রত্ব ছাড়া কমিটিতে আসতে পারবেন না। উপজেলা কমিটি করার বিষয়ে কিছুটা ম্যাচুরিটির বিষয় দেখা হয়েছে। বিএনপি যেহেতু বিরোধী দল, আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রাম, পুলিশি জেল-জুলম মোকাবেলায় মানসিকভাবে শক্ত এমন নেতাদের পদে আনা হয়েছে।
জানা গেছে চৌগাছা উপজেলা, পৌর ও সরকারি কলেজ ছাত্রদলের নতুন কমিটি অনুমোদন দেয়া হয় ৫ অক্টোবর সোমবার। ওইদিন রাতে কমিটি প্রকাশ পেলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে কমিটির একাংশের নেতৃবৃন্দ। তারা ফেসবুকে এ নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এরপরদিন ৬ আক্টোবর দুপুরে কমিটিতে দুধ বিক্রেতা, পোল্ট্রি দোকানের কর্মচারী, অছাত্র, বেসরকারি এনজিও-ব্যাংকে চাকুরিজীবি ও বিবাহিতদের পদ দেয়ার অভিযোগ এনে এই অনিয়মের প্রতিবাদে অনুমোদনকৃত উপজেলা ছাত্রদলের ২১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি থেকে ৪ যুগ্ম-আহবায়কসহ ১১ নেতা এবং পৌর কমিটির আহবায়ক, ৪ যুগ্ম আহবায়কসহ ৭ নেতা কমিটি থেকে পদত্যাগ করে একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুল ইসলাম সাগরের নিকট পাঠায়। তবে তিনি সেসব পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন নি।
এ বিষয়ে পদত্যাগী উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক-১ আল আমিন ইসলাম তুহিন বলেন আমি উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব পদপ্রার্থী ছিলাম। আমাকে যুগ্ম-আবহবায়ক-১ করা হয়েছে। ছাত্রদলের অভিভাবক তারেক রহমানের নির্দেশ অমান্য করে এই কমিটি দেয়া হয়েছে। আমি এই কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছি। তৃণমূলের ছাত্রদের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন না ঘটিয়ে এই কমিটি দেয়া হয়েছে। এই কমিটিতে চাকরীজীবি, দুধওয়ালা, পোল্ট্রি দোকানে চাকরি করে, অছাত্র, বিবাহিতদের দিয়ে এই কমিটি করা হয়েছে। এর আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।
তিনি বলেন উপজেলা কমিটিতে যাকে আহবায়ক করা হয়েছে তিনি একজন দুধ বিক্রেতা। ২০১৬ সালের ৪ জুনের ইউপি নির্বাচনে তিনি চৌগাছা সদর ইউপির দিঘলসিংহা ওয়ার্ড থেকে মেম্বার পদে ভ্যান মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেন। তার অধীনে রাজনীতি করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন উপজেলা কমিটির আরেক যুগ্ম-আহবায়ক জাকির হাসান জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনে চাকরি করেন। তিনি আরো বলেন আমরা সকলে এক জায়গায় হয়ে দুই কমিটির সংখ্যাগরিষ্টরা পদত্যাগ করেছি। পরে সবার প্রতিনিধি হিসেবে আমি নিজে মঙ্গলাবার জেলা ছাত্রদলের সভাপতির বাড়িতে পদত্যাগপত্র নিয়ে যায়। কিন্তু তিনি আমাকে বাড়িতে ঢুকতে না দিয়ে মোবাইল ফোনে জানান তিনি ঢাকায় রয়েছেন। পরে আমরা ওই ১৮ জনের পদত্যাগপত্র কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও সম্পাদক বরাবর পাঠিয়েছি। একইসাথে পদত্যাগপত্রের অনুলিপি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি-সম্পাদক বরাবরও পাঠানো হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ অমান্য করে সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে এই কমিটি দেয়া হয়েছে।
উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহবায়কের পদ থেকে পদত্যাগী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন আমি উপজেলা কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক পদপ্রার্থী ছিলাম। আমাকে পদ থেকে বঞ্চিত করে অছাত্র, যারা কমিটিতে আসার যোগ্য নয়, যারা কোন আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করে না। এক প্রভাবশালী নেতার কথার উপর ভিত্তি করে কমিটি করা হয়েছে। এখানে অছাত্রদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। যারা প্রাক্তন, যাদের বয়স ত্রিশের উর্দ্ধে, যাদের বয়স নেই। এই অনিয়মের বিরুদ্ধে আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি।
পৌর ছাত্রদলের আহবায়ক পদ থেকে পদত্যাগী মাজিদুল ইসলাম বলেন, আমি উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক পদপ্রার্থী ছিলাম। আমাকে পৌর ছাত্রদলের আহবায়ক করা হয়েছে। উপজেলা ছাত্রদলের যাকে আহবায়ক করা হয়েছে তিনি ২০০৩ সালের দিকে এসএসসি ফেল করেন। তাকে পুতুল হিসেবে পদ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব যাকে করা হয়েছে তিনি একটি পোল্ট্রি মুরগীর দোকানের কর্মচারী। পৌর কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক শোয়াইব আক্তার গ্রামীণ ব্যাংকের ঝিনাইদহ শাখায় কর্মরত। তিনিও পদত্যাগ করেছেন। এছাড়া সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব রাকিব হাসান বিবাহিত। জেলা ছাত্রদলের সভাপতি বলছেন আপনি ঢাকায় রয়েছেন জবাবে তিনি বলেন আমি স্বাক্ষর করে ঢাকায় এসেছি। আমরা সকলে একজায় বসে স্বাক্ষর করেছি। এরপর প্রতিনিধির মাধ্যমে পাঠিয়েছি। তারা না নেয়ায় আমরা কুরিয়ারে পাঠিয়ে দিয়েছি।
পৌরছাত্রদলের ১নং যুগ্ম আহবায়কের পদ থেকে পদত্যাগকারী মেহেদী হাসান শয়ন বলেন আমি পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব ছিলাম। আমাকে যুগ্ম আহবায়কের পদ দেয়া হয়েছে। আমি কমিটি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি। পদত্যাগের কারন হলো কমিটিতে অছাত্র, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কর্মচারী এবং চাকুরীজীবিদের স্থান দেয়া হয়েছে। আমাদের তারেক রহমানের নির্দেশ অমান্য করে যে তারা যে কমিটি দিয়েছে সেখান থেকে পৌর ও উপজেলা কমিটির ৩৩ জনের মধ্যে ১৮ জন পদত্যাগ করেছি। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখুন আমরা সকল আন্দোলন সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। যাদের পদ দেয়া হয়েছে তারা কোন আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নেন না। আমরা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি এখানে কোন স্বাক্ষর জালিয়াতি নেই। যশোর জেলা ছাত্রদল আমাদের তৃণমূলের কথা না ভেবে অছাত্রদের নিয়ে কমিটি করেছে।
উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্মআহবায়ক ইমরান হোসেন, পৌর ছাত্রদলের যুগ্মআহবায়ক হাকিম রেজা, শোয়াইব আক্তার এবং ইমরান হোসেন শাকিলও তাদের পদত্যাগের বিষয়টি মোবাইল ফোনে নিশ্চিত করেন। পদত্যাগী প্রায় সকল নেতা’ই বলেন অনিয়মের প্রতিবাদে আমরা নিজেদের সিদ্ধান্তে নিজেরা এক জায়গায় বসে স্বাক্ষর করেছি। তারা বলেন এখন আমাদের সাথে যা করা হয়েছে, প্রতিবাদ না করলে ভবিষ্যতে অন্যদের সাথেও একই কাজ করা হবে।
পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়কের পদ পেয়ে পদত্যাগকারী শোয়াইব আক্তার মোবাইল ফোনে বলেন আমি জব করি, গ্রামীণ ব্যাংকে জব করি। আমি আগে চৌগাছায় ছাত্রদল করতাম। আমাকে যুগ্ম আহবায়কের পদ দেয়া হয়েছিল। আমি পদত্যাগ করেছি। আমি নিজে সবার সাথে একজায়গায় হয়ে স্বাক্ষর করেছি।
তবে এবিষয়ে বক্তব্য নিতে উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়কের পদ পাওয়া জসিম উদ্দিনের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।