Type to search

চৌগাছায় টাকা ধার দেয়ার নামে গৃহবধূকে ধর্ষণ মামলার আসামির আত্মহত্যা!

জেলার সংবাদ

চৌগাছায় টাকা ধার দেয়ার নামে গৃহবধূকে ধর্ষণ মামলার আসামির আত্মহত্যা!

 

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি
যশোরের চৌগাছায় টাকা ধার দেবার নাম করে নিজ বাড়িতে ডেকে এক সন্তানের জননী এক গৃহবধূকে (২৫) ধর্ষণ মামলার আসামি মিজানুর রহমান (৫৫) বিষ পানে আত্মহত্যা করেছেন। মিজানুর রহমান উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের বাদেখানপুর গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবুল হোসেন ও ইউসূফ আলী আত্মহত্যার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
স্থানীয়রা জানান মঙ্গলবার সকালে বাড়ির পাশের মাঠে গিয়ে কীটনাশক পান করেন তিনি। স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে পাশর্^বর্তী কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে ওয়াশ করার পর চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে ঢাকায় নেয়ার পথে দুপুর বারোটার দিকে ঝিনাইদহে তার মৃত্যু হয়। তবে ধর্ষণ মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা চৌগাছা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান বিকেল চারটার সময় জানান বিষয়টি এখনো অফিসিয়ালি আমাদের জানানো হয়নি। ইউপি মেম্বার বিষয়টি অফিসিয়ালি জানান নি। তবে শুনেছি তাকে কোটচাঁদপুর হাসপাতাল থেকে ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়েছে এবং লাশ মর্গে রয়েছে। তিনি বলেন লাশের ময়নাতদন্ত ঝিনাইদহে হবে এবং আমাদের অফিসিয়ালি জানানোর কথা। বিকাল ৫টা ৩৮ মিনিটে স্থানীয় ইউপি সদস্য ইউসূফ আলী জানান ঝিনাইদহ হাসপাতালের মর্গে লাশটির ময়নাতদন্ত চলছে। ময়নাতদন্ত শেষে বাড়িতে এনে দাফন করা হবে।
এরআগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে দশটার দিকে গ্রামের এক সন্তানের জননী গৃহবধূকে (২৫) টাকা ধার দেয়ার নামে মোবাইলে বাড়িতে ডেকে নিজ ঘরে নিয়ে গৃহবধূকে মোটা টাকার বিনিময়ে কুপ্রস্তাব দেয়। গৃহবধূ তাতে রাজি না হওয়ায় জোরপূর্বক ঘরের দরজা বন্ধ করে তাকে ধর্ষণ করে মিজানুর। গৃহবধূর চিৎকারে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়ে যাওয়ায় ধর্ষকের স্ত্রী-ভাতিজারা ওই নারীকে বেদম মারপিট করে ওই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। একই সাথে ধর্ষককে পালাতে সহযোগিতা করে তারা। পরে স্থানীয় এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর নেতৃত্বে মিমাংসার নামে বিচারে ওই নারীকে আবারো মারপিট করে পাঁচ হাজার টাকা হাতে দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়। পরে ওই নারী তার বাবার বাড়ি গিয়ে মা’র সহায়তায় ২৫ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) চৌগাছা থানায় মামলা করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি এ প্রতিবেদককে মোবাইল ফোনে অভিযুক্ত মিজানুর রহমান জানিয়েছিলেন ‘ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রয়োজনে পরীক্ষা করে দেখতে বলেন।’ এটুকু বলেই তিনি মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন। পরে আর মোবাইল ধরেন নি।
এদিকে প্রকাশ্য দিবালোকে নিজের শোবার ঘরে পরস্ত্রীকে ধর্ষণ এবং ধর্ষণ মামলা হওয়ার পর থেকেই মিজানুর পারিবারে স্ত্রী ও সন্তানদের চাপে ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানান। তারা জানান মিমাংশার নামে যেসব প্রভাবশালীরা ধর্ষিতা গৃহবধূকে মারপিট করে হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন তারাই প্রকারন্তরে মিজানুরকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছেন। কারন ধর্ষণ মামলায় পালাতক বলা হলেও ওই প্রভাবশালীদের প্রশ্রয়ে তিনি বাড়িতেই ছিলেন।
ধর্ষণ মামলার লিখিত এজহারে ওই গৃহবধূ বলেন, একই গ্রামে আমাদের বসত বাড়ির পশ্চিম দিকে বিবাদী মিজানুর রহমানের বাড়ি। ২৪ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) সকাল অনুমান ৭.৩০ মিনিটে আমি মোবাইল ফোনে সমিতির কিস্তি দেয়ার জন্য ১ হাজার টাকা ধার চাইলে সে কিছুক্ষণ পরে দিবে বলে বলে জানায়। সকাল অনুমান ১০.১৫ মিনিটে মিজানুরের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে আমার মোবাইল ফোনে কল দিয়ে টাকা নেয়ার জন্য তার বাড়িতে ডাকে। আমি সরল বিশ^াসে তার বাড়িতে গেলে সে আমাকে ঘরের মধ্যে ডেকে অনেক টাকার প্রলোভন দেখিয়ে কু-প্রস্তাব দেয়। আমি রাজি না হয়ে ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে সে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে আমাকে জোরপূর্বক জাপটে ধরে। অনুমান ১০.৩০ মিনিটে সে আমাকে গ্রামে তার চাররুম বিশিষ্ট দক্ষিণ ভিটার উত্তর দুয়ারী একতলা পাকা বসত ঘরের পশ্চিম পাশের কক্ষের খাটের উপর ফেলে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এসময় আমার ডাক-চিৎকারে তার স্ত্রী মনিবালা বেগম (৪৫) ও মিজানুরের ভাইয়ের ছেলে তারিফ (২০) এসে ধাক্কা দিয়া দরজা খুলে ঘটনা দেখে ফেলে। এসময় তারা আমাকে দোষারোপ করে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারে এবং পরবর্তীতে লোকজন আসিলে তারা আমাকে চুরির অপবাদ দিতে থাকে। আমি লোকলজ্জা ও ভয়ে তাৎক্ষনিকভাবে বিষয়টি কাউকে বলতে পারিনি। এ সময় বিবাদী মিজানুর রহমান কৌশলে ওই স্থান হতে পালিয়ে যায়। আমার ডাক-চিৎকারে স্থানীয়রা এসে বিষয়টি শোনে। বিবাদীরা বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংশার চেষ্টা করে। অমার মা ও স্বামী কাজের থেকে বাড়িতে আসলে তাদেরকে ঘটনার বিস্তারিত বলি। পরবর্তীতে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি ও আত্মীয়স্বজনের সাথে আলোচনা করে থানায় মামলা করলাম।’ এ ঘটনার পর ওই নারীর স্বামী তাকে আর বাড়িতে উঠতে দেননি। পরে তিনি বাবার বাড়ি গিয়ে আশ্রয় নিয়ে মা’কে সাথে করে চৌগাছা থানায় ধর্ষণ মামলা করেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে চৌগাছা থানার ওসি (তদন্ত) গোলাম কিবরিয়া শুক্রবার জানিয়েছিলেন ভিকটিমকে উদ্ধার করে ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। থানায় ধর্ষণ মামলা হয়েছে।