Type to search

চৌগাছায় অবিবাহিতকে অভিভাবক সাজিয়ে ,সভাপতি করলেন প্রধান শিক্ষক!!

অন্যান্য

চৌগাছায় অবিবাহিতকে অভিভাবক সাজিয়ে ,সভাপতি করলেন প্রধান শিক্ষক!!

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি
যশোরের চৌগাছায় শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ থাকা সত্বেও পরিপত্র লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে বলরাম ঘোষ নামে এক অবিবাহিত ব্যক্তিকে অভিভাবক সাজিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার বহিলাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাছলিমা খাতুনের বিরুদ্ধে।
২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক আব্দুল লতিফ। সেসময় অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আস্বস্ত করেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্ত মোস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু করোনার মধ্যে ২৫ অক্টোবর ওই অবিবাহিত ব্যক্তিকেই সভাপতি করে কমিটি অনুমোদন দেন তিনি। বিষয়টি জানতে পেরে ২৮ জানুয়ারি ওই অভিভাবক চৌগাছা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নিকট লিখিত অভিযোগ দেন। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ওই প্রধান শিক্ষক তাছলিমা খাতুনের কাছে মোবাইলে বক্তব্য নেয়ার পর তার স্বামী একাধিক নাশকতা মামলার আসামী চৌগাছার বাস শ্রমিক (স্টাটার) ও বিএনপির ক্যাডার মহসিন আলী ওরফে গ্যাড়া মহসিন চৌগাছা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় দৈনিক সমাজের কথার চৌগাছা প্রতিনিধি অমেদুল ইসলামের মোবাইলে ফোন করে ‘আমার বৌয়ের মোবাইলে ফোন দিয়েছিস কেন? তুই কি এমপির চেয়েও বেশি বুঝিস? এধরনের নানা বাজে কথা বলে হুমকি দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় উপজেলার উপজেলার স্বরূপদাহ ইউনিয়নের বহিলাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনে স্থানীয় গ্রামবাসী ও অভিভাবকদের কোন মতামত না নিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক তাছলিমা খাতুন স্থানীয় একজন গ্রাম ডাক্তার ও অবিবাহিত ব্যক্তি বলরাম ঘোষকে সভাপতি করার উদ্যোগ নেন। ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বলারাম ঘোষের বোনের মেয়েকে (ভাগ্নি) স্কুলে নামকাওয়াস্তে ভর্তি দেখিয়ে বলরাম ঘোষকে অভিভাবক সাজিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে বিদ্যুৎসাহী সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেয়ার জন্য পত্র দেন। অথচ বলারাম ঘোষের সেই বোনের মেয়ে কখনই বহিলাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলো না। এমনকি কোনদিন নানা বাড়ি এসে দির্ঘদিন থাকেওনি। সে তার বাবার বাড়ির গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী। শুধু পত্র দিয়েই থেমে থাকেন নি এই প্রধান শিক্ষক ও বিএনপি ক্যাডারের স্ত্রী। তিনি তদবির করে একই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি সংসদ সদস্যকে ভুল বুঝিয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদনপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। একই তারিখে প্রধান শিক্ষক নিজেও স্বাক্ষর করে বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসে জমা দেন।
বিষয়টি জানাজানি হলে স্কুলের একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক আব্দুল লতিফ ওই বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট একটি লিখিত আবেদন করেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন আমরা জানতে পেরেছি বলরাম ঘোষকে সভাপতি করে স্কুলের কমিটি অনুমোদনের জন্য প্রধান শিক্ষক আপনার দপ্তরে প্রেরণ করেছেন। যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের সরকার কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের পরিপন্থি। পরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিষয়টিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ওই অভিভাবকে আস্বস্ত করেন। কিন্তু ওই বছরেরই ২৫ অক্টোবর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান ওই কমিটিতে অনুমোদন দেন। অথচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন সংক্রান্ত ৬ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে যে শর্ত দেয়া হয়েছে তাতে স্পষ্ট হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে কোন অবিবাহিত ব্যক্তি সভাপতি হওয়া তো দুরের কথা সদস্যই থাকতে পারবেন না।
কমিটি গঠন শিরোনামে ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে ১.১ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক/ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সদস্য সচিব। ১.২ সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের মধ্য হতে মনোনীত একজন বিদ্যুৎসাহী মহিলা অভিভাবক। ১.৩ সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের মধ্য হতে মনোনীত একজন বিদ্যুৎসাহী পুরুষ অভিভাবক। ১.৪ বিদ্যালয়ের একজন জমিদাতা/জমিদাতার উত্তরাধিকারী। ১.৫ একই উপজেলার সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিকটবর্তী যে কোন সরকারি/বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক/শিক্ষিকা। ১.৬ সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত একজন শিক্ষক প্রতিনিধি। ১.৭-১.৮ সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের মধ্য হতে নির্বাচিত দু’জন মহিলা অভিভাবক। ১.৯-১.১০ সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের মধ্য হতে নির্বাচিত দু’জন পুরুষ অভিভাবক। এবং ১.১১ ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সদস্য/পৌর এলাকার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কমিশনার/ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরকে নিয়ে ১১ সদস্যের ম্যানেজিং কমিটি গঠন হবে। এদের মধ্য থেকে প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক প্রতিনিধিকে বাদ রেখে অন্য ৯ জনের মধ্য থেকে একজন সভাপতি ও একজন সহ-সভাপতি নির্বাচিত হবেন। তবে শর্ত থাকে যে, সভাপতিকে ন্যূনতম ¯œাতক ডিগ্রীধারী হতে হবে। এই পরিপত্র থেকে স্পস্ট হয় কোনভাবেই কোন অভিভাবক ছাড়া কোন অবিবাহিত ব্যক্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যই হতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে সভাপতি হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ড. মোস্তানিছুর রহমান লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয় নিশ্চিত করে বলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কমিটি অনুমোদনের আগেই এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ থাকলেও কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি প্রশ্নে তিনি কোন জবাব দেননি।
অভিযুক্ত বহিলাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাছলিমা খাতুনের কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি একবার বলেন তিন-চার মাস আগে গ্রামের লোকজন ডেকে তাদের পরামর্শে তাকে সভাপতি বানানো হয়েছে। করোনাকালে আপনি কিভাবে অভিভাবকদের ডাকলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন করোনা শুরুর আগে মার্চ মাসের আগেই গ্রামের লোকদের ডেকে তাদের পরামর্শে পাঠানো হয়েছে। সরকারি পরিপত্র মেনে কি অভিভাবক নয় এমন কাউকে সভাপতি বানানো যাবে প্রশ্নে তিনি একবার বলেন তিনি জানেন না। পরক্ষণেই বলেন গ্রামবাসির পরামর্শে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন বলরাম ঘোষ তার ভাগ্নির (বোনের মেয়ে) অভিভাবক হিসেবে সভাপতি করা হয়েছে। মামা কি বৈধ অভিভাবক হতে পারেন প্রশ্নে তিনি নিরব থাকেন। আর ওই ভাগ্নি তো আপনার স্কুলের নিয়মিত শিক্ষার্থীও নয় শুধু হাজিরা খাতায় নাম লেখা আছে প্রশ্নেও তিনি নিরব থাকেন। এরপর তিনি বলেন আপনারা এ বিষয়ে ঝামেলা করছেন কেন? দেড় বছরই তো। দেড় বছর পর আবার যখন কমিটি হবে তখন ঠিক করে দেব। তিনি বারবার এ বিষয়ে তার ভাষায় ঝামেলা না করার জন্য বলেন।
এদিকে মোবাইল ফোনে প্রধান শিক্ষক তাসলিমার বক্তব্য নেয়ার কিছুক্ষণ পর তার স্বামী স্থানীয় বাস শ্রমিক (স্টাটার) ও একাধিক নাশকতা মামলার আসামী বিএনপি ক্যাডার মহসিন আলী ওরফে গ্যাড়া মহসিন মোবাইলে কল করে চৌগাছা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক সমাজের কথা পত্রিকার চৌগাছা প্রতিনিধি প্রভাষক অমেদুল ইসলামকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। তিনি অমেদুলকে গালি দিয়ে বলেন ‘তুই আমার বৌয়ের মোবাইলে কল দেয়ার কে? তুই কি এমপির চেয়েও বেশি বুঝিস? পরে তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন আমার বৌয়ের মোবাইলে কল দিয়ে চাপ দিয়েছে বলে আমি তাকে বলেছি।
এ বিষয়ে বলরাম ঘোষ বলেন গ্রামের লোকজনের মতামতের ভিত্তিতে আমাকে সভাপতি করা হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *