Type to search

চৌগাছায় অনুমতিবিহীন বলুহ মেলা বন্ধের আবেদন, শিক্ষার্থীদের নিয়ে শংকায় অভিভাবক-শিক্ষকরা

চৌগাছা

চৌগাছায় অনুমতিবিহীন বলুহ মেলা বন্ধের আবেদন, শিক্ষার্থীদের নিয়ে শংকায় অভিভাবক-শিক্ষকরা

 

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি
যশোরের চৌগাছার হাজরাখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারপাশে অনুমতি ছাড়াই চলছে বলুহ মেলা। স্কুলের ভবনের গায়ে, সীমানায় এমনভাবে সব আসবাবপত্রসহ অন্যান্য দোকানপাঠ বসানো হয়েছে, যার ফলে স্কুলের প্রবেশ পথ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। স্কুল মাঠে যন্ত্রচালিত আলমসাধু, ইঞ্জিন ভ্যান রাখা হয়েছে, যাতে করে আসবাবপত্র আনা-নেয়া করা হচ্ছে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে স্কুলে গিয়ে দেখা যায় স্কুল ছুটি দেয়া হয়েছে। স্কুলের দ্বিতল ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। নিচতলার বারান্দায় দোকানীদের খাবার রান্না করা হচ্ছে।
যেই পীর বলুহের ঔরসকে ঘিরে এই মেলা সেই মাজার কমিটির সভাপতি আশাদুল ইসলাম আশা গত শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) অনুমতিবিহীন মেলা বন্ধের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন। সেনিদই সন্ধায় পুলিশ গিয়ে মাজারের আশপাশ থেকে দোকান তুলে দিলেও সেই দোকান এখন প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের চারপাশে বসানো হয়েছে। এতে দির্ঘদিন পরে বিদ্যালয় খুললেও অভিভাবকরা তাদের সন্তান নিয়ে আশংকায় রয়েছেন। অভিভাবক ও শিক্ষকরা মনে করছেন, মেলার ভীড়ে স্কুলে যাবার পথে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। করোনা সংক্রমণও বেড়ে যেতে পারে।
এদিকে মাজার কমিটির আবেদনের তিনদিন পার হলেও মেলা বন্ধ না করায় স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। প্রভাবশালীদের ভয়ে নাম প্রকাশ না করতে চাইলেও তারা বলছেন মেলা ঘিরে চাঁদাবাজির জন্যই মেলা বন্ধ করা হচ্ছে না।
প্রতি বাংলা সনের ভাদ্রমাসের শেষ মঙ্গলবার উপজেলার হাজরাখানা গ্রামে কপোতাক্ষ নদের তীরে পীর বলুহ দেওয়ানের মাজার ঘিরে বসে এই মেলা। বলুহের মাজার ঘিরে হয় ঔরশ। প্রতি বছরের মতো গ্রামের ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান যশোরের জেলা প্রশাসকের কাছে মেলার অনুমতি চেয়ে লিখিত আবেদন করেন। তবে জেলা প্রশাসন করোনা ভাইরাসের কারনে গত বছরের ন্যায় এবারো মেলার অনুমতি দেয়নি।
মাজার কমিটি সূত্রে জানা গেছে, মৌখিক অনুমতিতে একদিনের (১৪ সেপ্টেম্বর) জন্য পীর বলুহ দেওয়ানের ঔরস অনুষ্ঠিত হয়। তবে ঔরস চলে তিনদিন।
সূত্রে আরও জানা যায় ঔরসের দু/তিন দিন আগেই শুরু হয় মেলার। মেলায় বগুড়া, নওগাঁস, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এসে শতাধিক আসবাবপত্রের দোকানীসহ খেলনা ও বিভিন্ন সামগ্রীর দোকান দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অনুমতি না থাকায় ১২ সেপ্টেম্বর মাজারের আশেপাশে বসানো দোকান উঠিয়ে দেয় চৌগাছা থানা পুলিশের একটি দল। ১৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায়ও পুলিশ দোকানিদের দোকান উঠিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়। এরপরও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির ইশারায় দোকানীরা দোকান না তুলে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এতে সকাল থেকে আশেপাশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার ছাত্রছাত্রীরাও বিদ্যালয় ফাঁকি দিয়ে মেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) দেখা যায় আসবাবপত্রের দোকানীরা এদিনও ট্রাকে করে মালামাল নিয়ে আসছেন।
সোমবার বেলা ১১টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় চৌগাছা-মহেশপুর সড়কের হাজরাখানা পীর বলুহ দেওয়ান দাখিল মাদরাসা ছাড়িয়ে গিয়ে রাস্তার দুই ধার দিয়ে বসেছে আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন দোকান। এছাড়া হাজরাখানা সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয় ভবনের সাথেই রয়েছে একাধিক আসবাবপত্রের দোকান। বিদ্যালয়ের সীমানা ঘেঁষে চারপাশ দিয়ে বসেছে শতাধিক আসবাবপত্রের দোকান। বিদ্যালয়ের মাঠে রয়েছে ১৫/২০টি ইঞ্জিনচালিত স্থানীয় যানবহন (আলমসাধু ও ভ্যান)। এসব বাহনে আসবাবপত্র ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। এমনকি বিদ্যালয় ভবনের বারান্দায় দোকানীদের দুপুরের খাবার রান্না করতেও দেখা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের দুজন সহকারী শিক্ষক বলেন, নিরাপত্তার কারনে সরকার ৫৪৩ দিন পরে বিদ্যালয় সীমিত আকারে খুলেছে। অথচ এখন বিদ্যালয়ের মাঠসহ আশেপাশে হাজার হাজার মানুষের ভীড়। এতে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটেতে পারে, করোনা সংক্রমণও বাড়তে পারে। বাচ্চারা সংক্রমিত হতে পারে। সহকারী শিক্ষক দুজন আরও জানান, প্রতিদিন সকালে এসে দেখা যাচ্ছে বিদ্যালয়ের বারান্দায় দোকানীরা অবস্থান করছেন ও মালামাল রাখছেন। এতে তাঁদের সাথে আমাদের বিতন্ডা হচ্ছে। বিদ্যালয় খোলার দিন থেকেই মেলার কারণে এখানকার শিক্ষার্থীরা ঝুকিতে রয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাদিজা খাতুন মুঠোফোনে জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষায় কোন সমস্যা হচ্ছে না। তবে বিদ্যালয়ের ভবন দোকানীরা ব্যবহারের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা যখন থাকছিনা। বিদ্যালয় বন্ধ থাকছে তখন তাঁরা ভবন ও বারান্দা ব্যবহার করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, অনুমতি ছাড়া কিভাবে মেলা চলে এটা বুঝে আসেনা। প্রায় দেড় বছর পর বিদ্যালয় খুলেছে। অথচ বিদ্যালয়ের মাঠসহ আশেপাশে সব দোকানপাট বসানো হয়েছে।
বলুহ দেওয়ান মাজার কমিটির সভাপতি আশাদুল ইসলাম আশা বলেন, গত শনিবার আমি ইউএনও ও ওসি বরাবর লিখিত আবেদন করেছি। সেদিন সন্ধ্যায় পুলিশ মাজারের পাশ থেকে দোকান সরিয়ে দিয়েছে। এখন সব দোকান স্কুল মাঠের চারপাশ ঘিরে বসেছে। তিনি দাবি করেন অবিলম্বে মেলা বন্ধ করা হোক। না হলে যে কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তিনি বলেন মাঝে মধ্যেই পুলিশ গিয়ে মেলা বন্ধ করতে বলছে। সেসময় মানুষ দৌড়ে পালাচ্ছেন। এই পালানোর সময় মিস্টি বা অন্য খাবারের দোকানের গরম তেল ছিটকে যে কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পালাতে গিয়ে মোটরসাইকেল বা ছোট ছোট ইঞ্জিন চালিতযানবাহনও দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।
চৌগাছায় দীর্ঘ ২১ দিন থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নেই। ঝিকরগাছার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল হক অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর কাছে চৌগাছার ইউএনওর অফিসিয়াল মুঠোফোনটি রয়েছে। তবে সেটিতে কল করলে রিং বেজেই চলে রিসিভ হয় না। এ কারনে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (এডিএম) ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) কাজী মোঃ সায়েমুজ্জামান বলেন, ‘দ্রæত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। চৌগাছার সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দ্রæত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।’