Type to search

চৌগাছায় কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা সিটি ব্যাংকের এজেন্ট শাখা, ভুক্তভোগীদের সংবাদ সম্মেলন

চৌগাছা

চৌগাছায় কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা সিটি ব্যাংকের এজেন্ট শাখা, ভুক্তভোগীদের সংবাদ সম্মেলন

শ্যামল দত্ত, চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধিঃ

যশোরের চৌগাছায় সিটি ব্যাংকের তিনটি এজেন্ট শাখায় ২৩ জনকে নিয়োগ দিয়ে তাদের কাছ থেকে জামানতের নামে এক কোটি ২০ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে দুই এজেন্ট ও পরিচালনাকারী।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ১৭ জন বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) চৌগাছা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ এবং একইদিন বিকেলে চৌগাছা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান জাফর ইকবাল।

লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগীরা বলেন, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে যশোরের শার্শা উপজেলার যাদবপুর গ্রামের জহির উদ্দিন বাবর, যশোর সদর উপজেলার ইছালি গ্রামের আজিজুর রহমান ডেভিড ও চৌগাছা উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের তরিকুল ইসলাম জোনাব সিটি ব্যাংকের চৌগাছা, পুড়াপাড়া ও ছুটিপুর এজেন্ট শাখায় চাকরি দেয়ার জন্য ভুক্তভোগী ১৭ জনসহ মোট ২৩ জনের সাথে যোগাযোগ করেন। তাদের মাসিক ১৪ হাজার টাকা করে বেতন দেয়া হবে বলে বলা হয়। ভুক্তভোগীরা তাদের কথায় প্রলুব্ধ হয়ে আজিজুর রহমান, জহির উদ্দিন বাবর এবং তরিকুল ইসলামের কাছে ব্যাংকের যশোর ও খুলনা জেলার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ব্যবস্থাপক আবু জাফরের উপস্থিতিতে পাঁচ লাখ টাকা করে জামানতের টাকা দিয়ে ব্যাংকের এজেন্ট শাখায় যোগদান করেন।

তাদেরকে ব্যাংকটির মোট দশটি এজেন্ট শাখার এজেন্ট আজিজুর রহমান ডেভিড ও জহির উদ্দিন বাবরের মালিকানাধীন তাজিমুল টেকনোলজি লি: নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্যাডে ইংরেজিতে নিয়োগপত্র দেয়া হয়। সেখানে ‘ট্রেইনি বিজনেস এক্সিকিউটিভ পদে’ নিয়োগ দিয়ে ১৪ হাজার টাকা মাসিক বেতন নির্ধারণ করা হয়। কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে পদোন্নতি ও বেতন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। কয়েকজনকে জামানতের টাকার বিপরীতে জহির উদ্দিন বাবরের সিটি ব্যাংকের একটি হিসাবের চেকও দেয়া হয়।
ভুক্তভোগীরা জানান, নিয়োগের পর আমেনা খাতুনসহ দুই জনকে ঢাকায় ট্রেনিং সিটি ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ দিয়ে এজেন্ট শাখায় কাজ দেয়া হয়। শহরের একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় এজেন্ট শাখার কার্যালয় খোলা হয়। এজেন্ট শাখায় কার্যক্রম শুরুর পর প্রতি মাসে দশ হাজার টাকা করে তিন মাসের বেতন দেয়া হয় তাদের। এরপর নানা অজুহাতে বেতন বন্ধ রেখে ২০২০ সালের মার্চ মাসে এজেন্ট শাখার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন থেকেই ভুক্তভোগীরা এজেন্ট জহির উদ্দিন বাবর ও আজিজুর রহমান ডেভিড এবং তাদের এজেন্ট শাখার পরিচালক তরিকুল ইসলামের মোবাইল ফোন বন্ধ পান। এমনকি তরিকুলের চৌগাছা উপজেলার হাকিমপুরের বাড়িতে গিয়েও তাকে পাননি ভুক্তভোগীরা।

তারা বলেন, জামানতের টাকার বিপরীতে যে চেক দেয়া হয়েছে সেই হিসাবে টাকা তুলতে গেলে বলা হয়েছে ওই হিসাবে কোনো টাকা নেই।

তারা বলেন, জামানতের টাকা দেয়ার বিষয়ে সব জানতেন ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের যশোর ও নড়াইল জেলার ব্যবস্থাপক আবু জাফর। তার সামনেই আমরা জামানতের টাকা দিয়েছি। এছাড়া ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা গৌতমসহ আরো কয়েকজন বিষয়টি অবহিত। অথচ আমাদের জামানতের বিষয়টির সুরাহা না করেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কিছুদিন পরে চৌগাছার অন্য একজনকে নতুন এজেন্ট নিয়োগ করেছেন। তিনি শহরের ধনী প্লাজায় এজেন্ট শাখার কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

ভুক্তভোগী ১৭ জন বলেন, আমরা জামানতের টাকা দিতে নিজেদের জমি, গরু, ছাগল বিক্রি করে এমনকি সুদের ওপর টাকা ধার করেছি। এখন তিন বছর ধরে একদিকে বেকার দিনাতিপাত করছি, অন্যদিকে ধার দেনা পরিশোধ করতে না পেরে মানবেতর দিন কাটাচ্ছি। অবশেষে বাধ্য হয়ে থানায় অভিযোগ এবং এই সংবাদ সম্মেলন করছি। এসময় ভুক্তভোগী আমেনা খাতুন, হাফিজুর রহমান, শামীমা নাছরিন, খাদিজা খাতুন, মাজহারুল ইসলাম, আয়েশা খাতুন, তাজিমুল ইসলামসহ অভিযোগকারী ১৭ জন উপস্থিত ছিলেন।

সিটি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের নড়াইল ও যশোর জেলার ব্যবস্থাপক আবু জাফর মোবাইলে বলেন, তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি আমি বা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অবহিত নয়। এটা সম্পূর্ণ এজেন্টের দায়িত্ব। তবে সেই ফোনেই তাজিমুল নামের একজন ভুক্তভোগী তার উপস্থিতিতে টাকা লেনদেনের বিষয়টি বললে তিনি বলেন, আমি তো সাক্ষী ছিলাম না। আপনারা কর্মচারীদের বিষয়টি না দেখে ইচ্ছেমত এজেন্ট পরিবর্তন করে দিয়েছেন প্রশ্নে আবু জাফর বলেন, কোনো এজেন্ট লিখিতভাবে অপরাগতা প্রকাশ করার পর এজেন্ট পরিবর্তন করা হয়। এসময় তাদের চেক প্রদানসহ বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে প্রসঙ্গ পরিবর্তনের চেষ্টা করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলন শেষ হলে আবু জাফরের বক্তব্য নেয়ার পরপরই ব্যাংকটির উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা চৌগাছা প্রেসক্লাব কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে ভুক্তভোগীদের বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়ে বুধবার সংবাদটি প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন। সন্ধ্যায় ব্যাংকটির কর্মকর্তারা সংবাদ প্রকাশ যেন না হয় বিভিন্নভাবে সেই তদবির করলেও ভুক্তভোগীদের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় তারা বলেন, অপকর্মের শাস্তি হিসেবে তাজিমুল টেকনোলজির এজেন্ট বাতিল করা হয়েছে। তাদের এজেন্ট বাতিল করে ভুক্তভোগীদের আরো বিপদ বাড়ানো হয়েছে বললে কর্মকর্তারা আর উত্তর দিতে পারেননি।

চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, এ বিষয়ে ১৭ জন ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে মামলা নথিভুক্ত করা হবে।