Type to search

গোনাহ থেকে দূরে থাকতে ইসলামি নির্দেশনা- বিলাল হোসেন মাহিনী

ধর্ম

গোনাহ থেকে দূরে থাকতে ইসলামি নির্দেশনা- বিলাল হোসেন মাহিনী

প্রতিটি পাপের শাস্তি (আল্লাহ ক্ষমা না করলে) মানুষকে পেতে হবে। কোনটার শাস্তি দুনিয়ায় কোনটার শাস্তি আখিরাতে। ইসলাম প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদারে সোচ্চার। কেননা, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো। কোনো বান্দার গোনাহ হয়ে গেলে তা থেকে ক্ষমা চাওয়ার চেয়ে পাপ কাজ পরিহার করে চলা ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা।

আমরা আলোচ্য নিবন্ধে এমন কিছু বিশেষ গোনাহ ও অপরাধের কথা উল্লেখ করব, যেসব পাপে বর্তমান সমাজের মানুষ ব্যাপকভাবে লিপ্ত। অথচ হাদিসে বলা হয়েছে, এসব গোনাহের কারণে মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। শুধু তাই নয়, এমনকি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। আসুন আমরা জেনে নিই সে সকল গোনাহ বা পাপকর্ম সমূহ।
ক. অহংকার করা : হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার রয়েছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ্ মুসলিম : ৯১)।
খ. পরনিন্দা : হাদিস শরীফে রাসুল সা. বলেছেন, চোগলখোর কিংবা পরনিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (সহিহ্ মুসলিম : ১০৫)
গ. ইমান না আনা : রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘ইমানদার ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ্ বোখারি ও মুসলিম)। হাদিসে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ইমান না আনা পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (সহিহ্ মুসলিম : ৫৪)
ঘ. প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া : নবী করিম সা. বলেছেন, ‘যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ্ মুসলিম : ৪৬) তিনি (সা.) আরও বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন সবচেয়ে খারাপ লোকদের দলভুক্ত হিসেবে ওই ব্যক্তিকে দেখতে পাবে যে, যে ছিল দুমুখো। যে একজনের কাছে এক কথা আরেকজনের কাছে আরেক কথা নিয়ে হাজির হতো।’ (সহিহ্ মুসলিম : ২৫২৬)
ঙ. আত্মহত্যা : মহানবী সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে যাবে। সেখানে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, সে তার বিষ তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে বিষ খাইয়ে মারতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যেকোনো ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করেছে তার কাছে জাহান্নামে সে ধারালো অস্ত্র থাকবে যার দ্বারা সে সর্বদা নিজের পেটকে ফুঁড়তে থাকবে।’ (সহিহ্ বোখারি : ৫৪৪২)
চ. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা : হজরত রাসুল সা. বলেছেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ্ মুসলিম : ২৫৫৬) ছ. হারাম খাওয়া : রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘হারাম অর্থের মাধ্যমে (যে শরীরে) মাংস বৃদ্ধি পেয়েছে তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। অর্থাৎ যে ব্যক্তি হারাম অর্থ ও অবৈধ উপার্জন দ্বারা শরীর গঠন করেছে জাহান্নামের আগুনই তার প্রাপ্য।’ (মশকাতুল মাসাবিহ) জ. উপকার করে খোঁটা দেওয়া : নবী করিম সা. বলেছেন, ‘সে ব্যক্তি জান্নাতে বেশ করবে না, যে উপকার করে খোঁটা দেয়।’ (সুনানে নাসাঈ : ৫৬৮৮) ঝ. তাকদির (ভাগ্যের লিখন) অস্বীকার : হজরত রাসুলে করিম সা. বলেছেন, ‘পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, মদ্যপায়ী এবং তাকদির অস্বীকারকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সিলসিলা সমীহা : ৬৭৫) ঞ. যে পাঁচ শ্রেণির মানুষ জান্নাতে যাবে না : তদ্রƒপ জাদুতে বিশ্বাস ও গণকের কথা বিশ^াসকারীও জান্নাতে যাবে না। এ প্রসঙ্গে হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘পাঁচ শ্রেণির মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (তারা হলো) মদ্যপায়ী, জাদুর বৈধতায় বিশ্বাসী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, চোগলখোর এবং গণক।’ (মুসনাদে আহমদ)
ট. ঋণ পরিশোধ না করা : রাসুল সা. এর কাছে কোনো ঋণগ্রস্থ মৃতের লাশ (জানাজার জন্য) নিয়ে আসা হলে জিজ্ঞেস করতেন, সে ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করেছে কি না? যদি বলা হতো করেছে, তবে জানাজা পড়তেন। অন্যথায় (সাহাবিদের) বলতেন, তোমরা তোমাদের সাথির জানাজা পড়ে নাও (কিন্তু ‘তিনি নিজে তাতে অংশগ্রহণ করতেন না)। (সহিহ্ মুসলিম : ১৬১৯)। অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসুল সা. বলেছেন, ‘শহীদের ঋণ ছাড়া সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (সহিহ্ মুসলিম : ১৮৮৬)
ঠ. পুরুষ বেশধারী নারী : আল্লাহর রাসুল সা. ইরশাদ করেন, ‘তিন শ্রেণির লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তারা হলো, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, দাইয়ূস এবং পুরুষ বেশধারী নারী।’ (সহিহুল জামে : ৩৬৩)। দাইয়ূস কে? : রাসুল সা. বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি কে দাইয়ূস বলা হয়, যে তার পরিবারের অশ্লীলতা ও কুকর্মকে মেনে নেয় তথা প্রশ্রয় দেয়।’ (মুসনাদ আহমদ)

ড. আল্লাহ যাদের পবিত্র করবেন না : বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক ও অহংকারী দরিদ্র বেহেশতে প্রবেশ করবে না। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুল সা. বলেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তিন শ্রেণির লোকের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের গোনাহ থেকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে পীড়াদায়ক শাস্তি। তারা হলো বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক, অহংকারী দরিদ্র। (সহিহ্ মুসলিম : ১০৭)
ঢ. কঠোর প্রকৃতি ও কটুভাষী লোক : কঠোর প্রকৃতি ও কটূভাষী লোক এবং যে ব্যক্তি মানুষের কাছে এমন বিষয় নিয়ে গর্ব-অহংকার প্রকাশ করে বেড়ায় প্রকৃতপক্ষে যা তার কাছে নেই। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, কঠোর প্রকৃতি ও কটুভাষী লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং ওই লোকও নয় যে এমন সব বিষয়ে মানুষের কাছে গর্ব-অহংকার প্রকাশ করে বেড়ায় প্রকৃতপক্ষে যা তার কাছে নেই।’ (সুনানে আবু দাঊদ : ৪৮০১)
ণ. নিরাপত্তা দেওয়ার পরও কোনো অমুসলিমকে হত্যাকারী : কোনো মুসলিম সরকারের অধীনে চুক্তি বদ্ধ বসবাসকারী অমুসলিমকে হত্যা করা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ। নবী করিম সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুয়াহিদ তথা মুসলিম সরকারের সঙ্গে কিংবা অধীনে চুক্তিবদ্ধভাবে বসবাসকারী কোনো অমুসলিমকে হত্যা করবে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ চল্লিশ বছরের পথের দূরত্ব থেকে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়।’ (সহিহ্ বোখারি : ৩১৬৬)
ত. বিশ^াসঘাতক শাসক : হজরত রাসুল সা. বলেন, যাকে আল্লাহ তায়ালা জনসাধারণের শাসনকর্তা হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, কিন্তু সে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং বিশ^াসঘাতক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তাহলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।’ (সহিহ্ মুসলিম : ১৪২)
থ. মানুষকে প্রহারকারী ও পর্দাহীনতা : নবী করিম সা. বলেছেন, দুই শ্রেণির মানুষ জাহান্নামে যাবে যাদের আমি এখনো দেখিনি। তারা হলো-
১. এমন কিছু লোক যাদের হাতে থাকবে গরুর লেজের মতো লাঠি। এরা তা দিয়ে জনগণকে প্রহার করবে। এবং ২. ওই সব উলঙ্গ-অর্ধ উলঙ্গ নারী যারা (নিজেদের চলাফেরা ও বেশ-ভূষায়) মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করবে এবং নিজেরাও অন্য মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথায় উটের মতো উঁচু এবং একপাশে ঝুঁকে থাকা চূড়ার মতো কেশ রাশি শোভা পাবে। এ সমস্ত নারী জান্নাতে তো যাবেই না বরং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না অথচ এত এত দূর থেকে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়।’ (সহিহ্ মুসলিম : ২১২৮)
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে উপরোক্ত মন্দ তথা গোনাহের কাজ থেকে হেফাজত করুন। (আমিন)

লেখক/সংকলক : বিলাল হোসেন মাহিনী
পরীক্ষক : ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ও প্রভাষক : গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা, যশোর।
নির্বাহী সম্পাদক : ভৈরব সংস্কৃতি কেন্দ্র, যশোর। [email protected]

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *