Type to search

খুলনা বিভাগের শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক যশোরের মোঃ ওমর ফারুক

শিক্ষা

খুলনা বিভাগের শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক যশোরের মোঃ ওমর ফারুক

 

বিলাল মাহিনী, স্টাফ রিপোর্টার, যশোর :

চলমান জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৩ প্রতিযোগিতায় যশোরের অভয়নগর উপজেলার কৃতি সন্তান মো. ওমর ফারুক খুলনা বিভাগের শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন।

তিনি প্রথমে খুলনা সদর থানার শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক নির্বাচিত হন, পরবর্তীতে খুলনা জেলা পর্যায়ে ও তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের ধরে রাখতে সক্ষম হন। এবার বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।গতকাল বিকেলে খুলনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খুলনা অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর হারুনর রশিদের সভাপতিত্বে এবং সহকারি পরিচালক (কলেজ) ইনামুল ইসলাম বকুলের সঞ্চালনায় বিভিন্ন ইভেন্টে বিভাগের শ্রেষ্ঠদের সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে তাঁকে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষকের সনদ প্রদান করেন বিভাগীয় কমিশনারের প্রতিনিধি হিসেবে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোঃ ফিরোজ শাহ্।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সরকারি ব্রজলাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ, উপ-পরিচালক (কলেজ) সহযোগী অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক খোন্দকার রুহুল আমিন প্রমূখ।

মোঃ ওমর ফারুক যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের মশরহাটি গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর পিতা মরহুম নূর মোহাম্মদ শেখ ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের একজন বীর যোদ্ধা। তিনি ১৯৯৭ সালে এসএসসি এবং ১৯৯৯ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। অতঃপর সরকারি ব্রজলাল কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিএ (অনার্স)সহ এমএ (মাস্টার্স) এ উভয় পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণী সহ ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ২০১৪ ও ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে খুলনা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বি এড ও এম এড পরীক্ষায় ও প্রথম শ্রেণী সহ উত্তীর্ণ হন। ২০১২ সালের ৭ জানুয়ারি তারিখে তিনি নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (বাংলা) হিসেবে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকতা শুরু করেন। ২০১৪ শিক্ষাবর্ষে খুলনা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে বিএড ডিগ্রি অর্জনের লক্ষ্যে ভর্তি হয়ে সেখানে শিক্ষক ও সহপাঠী/ সহকর্মীদের মধ্যে নিজের অবস্থান জানান দেন। তিনি সে সময় কলেজ ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালে তিনি আবেদনের প্রেক্ষিতে খুলনা মহানগরের ডিজিটাল স্কুল খ্যাত কেডিএ খানজাহান আলী সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এ বদলি হয়ে আসেন। এখানেও সহকর্মী এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দশম শ্রেণীর শ্রেণি শিক্ষক হিসেবে নতুন এ বিদ্যালয় থেকে তার হাত ধরে প্রথমবারের মতো ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাস সহ অত্যন্ত ঈর্ষণীয় ফলাফল করায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন।

২০২০ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি (বাসমাশিস) এর খুলনা জেলার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি খুলনার ঐতিহ্যবাহী নারী শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন। এ বিদ্যালয়ে আসার পর থেকে বিদ্যালয়ের সকল ইতিবাচক কর্মকান্ডে তিনি তার স্বকীয়তার জানান দেন। জাতীয় দিবস সমূহে সক্রিয় অংশগ্রহণের পাশাপাশি বিদ্যালয় এর নানা সহ-শিক্ষা ক্রমিক কার্যাবলীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য অল্পদিনেই তিনি শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে তার অবস্থান সুদৃঢ় করতে সক্ষম হন।

২০২১ সালে নতুন কারিকুলামের ট্রাই আউট কার্যক্রমে প্রায় একাধিকবার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং সারাবছর সক্রিয় থেকে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ২০২২ সালে নতুন কারিকুলাম এর একজন দক্ষ মাস্টার ট্রেইনার হিসাবে দৌলতপুর, খালিশপুর ও খানজাহান আলী থানার বাংলা বিষয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অত্যন্ত সফলতার সাথে পরিচালনা করে সুনাম অর্জন করেন। উল্লেখ্য, তিনি সম্প্রতি গুণীশিক্ষক ও দক্ষ সংগঠক হিসেবে নড়াইলের ঘরামিঘর (একটি নজরুল চেতনার বাতিঘর) নামক সামাজিক প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননা স্মারক গ্ৰহণ করেন এবং সংবর্ধিত হন। তিনি তাঁর কর্মতৎপরতার কারনে এবছর জানুয়ারিতে বিদ্যালয় এর বার্ষিকী শুকতারা’র সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হয়ে বার্ষিকী সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি ২০১২ সাল থেকে তাঁর বীর পিতা মরহুম নূর মোহাম্মদ শেখ এর নামে যশোরের অভয়নগর উপজেলায় একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করে আসছেন। তিনি যশোরের ঐতিহ্যবাহী নওয়াপাড়া ইনস্টিটিউট এর আজীবন সদস্য।

এবছর তাকে বিদ্যালয় এর পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত করার মধ্য দিয়ে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৩ এ প্রথমে থানা পর্যায়ে (খুলনা সদর) শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক এবং পরবর্তীতে খুলনা জেলার এবং এবার বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ায় তিনি বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষিকা, সহকারী প্রধানশিক্ষিকাসহ অন্যান্য শিক্ষক-সহকর্মীদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় সাফল্যের জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।

বিলাল মাহিনী
যশোর

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *