Type to search

কেশবপুরে বোরো চাষের ধুম। ডিলার সিন্ডিকেট সারের মূল্য বৃদ্ধিসহ কৃত্রিম সংকটের আশংকা

কেশবপুর

কেশবপুরে বোরো চাষের ধুম। ডিলার সিন্ডিকেট সারের মূল্য বৃদ্ধিসহ কৃত্রিম সংকটের আশংকা

জাহিদ আবেদীন বাবু, কেশবপুর যশোর থেকে। যশোরের কেশবপুর উপজেলায় বোরো ধান আবাদের ধুম পড়ে গেছে। বোরো চাষের জমি প্রস্তুত ও ধানের চারা রোপণে কৃষকরা দিন রাত কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন । বাম্পার ফলন পেতে জমি প্রস্তুতের সময় ফসফেট/ডিএপি, পটাশ সার প্রয়োগ করতে হয়। তাছাড়া ঘের ব্যবসায়ীরা সার ক্রয় মাছের ঘেরে ব্যবহার করছে।  এ সুযোগে  মুনাফা লোভি বিসিআইসি ডিলার সিন্ডিকেটে সারের মূল্য বৃদ্ধিসহ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি আশংকা দেখা দিয়েছে। ফলে কৃষকরা চড়া মূল্যে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। গত দুই মাস ধরে এ অবস্থা চলায় বিসিআইসি ডিলাররা হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। বর্তমান বাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রকাশ্যে প্রতিকেজী টিএসপি ৮ টাকা, ডিএপি- ৯ টাকা, ইউরিয়া-২ টাকা ও এমওপি-২ টাকা বেশী দরে বিক্রি হচ্ছে। যার ফলে এবছর রোরো ধানের সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বিপাকে পড়েছেন বোরো চাষিরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সারের মূল্য বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে বলেন, বাজারে সারের কোন সংকট নেই। ব্যবসায়ীরা মিথ্যা কথা বলে বেশী দামে বিক্রি করছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৫ আগস্ট থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত সময়কে বোরো মৌসুম ধরা হয়ে থাকে। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকার সারের মূল্য নির্ধারণ করেছে প্রতিবস্তা টিএসটি- ১১০০ টাকা, ডিএপি- ৮০০ টাকা, এমওপি- ৮০০ টাকা ও ইউরিয়া- ৮০০ টাকা। সরকার নির্ধারিত মূল্যে কৃষকের কাছে এ সার বিক্রির জন্যে এ উপজেলায় ১৩ জন বিসিআইসি ডিলার চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এছাড়াও ৮১ জন খুচরা সার বিক্রেতা রয়েছেন। এদের অনুকুলে ২০২০-২১ অর্থ বছরে বিসিআইসি ডিলাররা গত নভেম্বরে ইউরিয়া- ৩৩৮ টন, টিএসপি- ৫৮ টন, ডিএপি- ৪৯৬ টন, এমওপি- ৩১৭ টন, ডিসেম্বরে ইউরিয়া- ৫৮৫ টন, টিএসপি- ১৫০ টন, ডিএপি- ৫৩৭ টন ও এমওপি- ৩৪৩ টন উত্তোলন করেছেন। সারের চাহিদা দেয়া হয়েছে জানুয়ারীতে ইউরিয়া ১৮০০ টন, ফেব্রুয়ারীতে ২ হাজার টন, ডিএপি জানুয়ারীতে-৮‘শ টন, ফেব্রুয়ারীতে ৬‘শ টন। টিএসপি জানুয়ারীতে- ৩৫০ টন, ফেব্রুয়ারীতে ১৫০ টন ও মার্চে-১০০ টন। চাহিদার প্রায় সমপরিমান সার ডিলাররা প্রতিমাসে উত্তোলন করে থাকেন। এরপরও বর্তমান বাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বস্তাপ্রতি টিএসটি-৪০০ টাকা, ডিএপি-৪৫০ টাকা বেশী দামে বিক্রি হচ্ছে। পৌরসভার হাবাসপোল গ্রামের কৃষক শহীদ হাসান জানান, জলাবদ্ধতার কারণে তার এলাকায় বোরো ধান ছাড়া আর কোন ফসল চাষ করা সম্ভব হয়না। তাই ভাল ফলন পেতে ইউরিয়া বাদে সমস্ত সার বোরোধান রোপনের জন জমি প্রস্তুতির সময় প্রয়োগ করতে হয়েছে। তিনি প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) টিএসপি ১৫০০ টাকা, এমওপি ৮৫০ টাকা, ইউরিয়া ৯০০ টাকা দামে ক্রয় করেছে।

 


বিসিআইসি ডিলার মেসার্স সিংহ ট্রেডার্সের মালিক বিষ্ণুপদ সিংহ বলেন, কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী সরকারিভাবে সারের বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। সারের চাহিদা মেটাতে বাইরে থেকে বেশী দামে সার কিনে আনতে হচ্ছে। যে কারণে বাজারে সারের দাম বেশী। তবে এ সংকট থাকবে না। অপর বিসিআইসি ডিলার মেসার্স কনিকা এন্টারপ্রাইজের মালিক সাধন কুমার কুন্ডু বলেন, টিএসপির কোন সরকারি বরাদ্দ নেই। ২/১ জন ডিলার বিভিন্ন জায়গা থেকে বেশী দামে কিনে আনছে। তাই বেশী দামে বিক্রি হচ্ছে। ডিএপিতে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। এরপরও কেন বেশী দামে বিক্রি হচ্ছে তা তিনি জানেন না।


এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা বলেন, বাজারে সারের কোন সংকট নেই। ব্যবসায়ীরা মিথ্যা কথা বলে বেশী দামে সার বিক্রি করছে। কোন অবস্থাতেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। গত ৩০ ডিসেম্বর সিংহ ট্রেডার্সে ৭৬ টন ডিএপি সার এসেছে। যা দিয়ে কেশবপুরের সমস্ত চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি পদক্ষেপ নিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এমএম আরাফাত হোসেন বলেন, বেশী দামে সার বিক্রির কথা শুনেছি। কিন্তু আমরা ডিলারের দোকানে যেয়ে কোন প্রমাণ না পওয়ায় ব্যবস্থা নিতে পারছি না।##

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *