Type to search

কেশবপুরের বিলখুকশিয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি

কেশবপুর

কেশবপুরের বিলখুকশিয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি

জাহিদ আবেদীন বাবু, কেশবপুর (যশোর) থেকে। 
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি যশোরের কেশবপুর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ১২৫০ হেক্টর বিশাল এলাকার বিলখুকশিয়া। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে বিল এলাকাটি আর্থিক ও বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত লাভ করতো। এ বিলখুকশিয়া যশোরের কেশবপুরসহ ৩টি উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত। এ বিলের সৌন্দর্যকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির ঘুঘু, দোয়েল, বাটুলে, হাঁস, সাদাবক, মাছরাঙা, পানকৌড়িসহ নানা প্রজাতির পাকপাখালি। প্রতিবছর এ বিলের ১৩ শতাধিক মৎস্যঘের ও ঘেরপাড় থেকে প্রতি বছর প্রায় ১৫০ কোটি টাকার মাছ ও সবজি উৎপাদন হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। ফলে এ বিল পাড়ের মানুষ বাধ্য হয়ে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছে নৌকা। এ বিলের মাঝ দিয়ে ৯ কিলোমিটারের মাটির রাস্তাটি ভাগ হয়ে কপালিয়া ও শোলগাথিয়া গিয়ে মিশেছে। এ সড়কটির দু’পাশে কংক্রিট দিয়ে বেঁধে পাকাকরণ হলে ৩ উপজেলার হাজার হাজার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হতে পারে বিলখুকশিয়া
জানা গেছে, যশোরের কেশবপুর, অভয়নগর ও মণিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী ভায়না ও খুকশিয়ার বিলের ওপর নির্ভরশীল বিলের চারপাশের গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। এ বিলের চারপাশে শোলগাথিয়া, চোহড়া, ভায়না, বরুনা, ময়নাপুর, আড়ুয়া, সানতলা, কানাইডাঙ্গাসহ ৩০/৩৫ গ্রামের মানুষ বিলের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া মাটির রাস্তাটি ব্যবহার করে। এ বিলের মাছ আরহণ, ঘেরে শ্রম ও পরিত্যাক্ত অঞ্চলে গরু, ছাগল চরানোর কাজই এ বিল পাড়ের মানুষের প্রধান পেশা। স্লুুইসগেটের ওপর দিয়ে অভয়নগরের কপালিয়া বাজারে গিয়ে মিশেছে। ওই বিলের উৎপাদিত মাছ ও সবজি পরিবহনসহ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যাতায়াতে স্থানীয়রা মাটির রাস্তাটি ব্যবহার করে।
এলাকাবাসীর জানান, রাস্তাটি ২০০ বছরের পুরনো হলেও দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় তা এখন নষ্ট হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে ঐ সড়ক দিয়ে ৩ / ৪ চাকার কোন গাড়ি চলতে পারে না। ফলে স্থানীয়রা বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে অথবা নৌকায় চলাচল করতে গিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়কটি পাকাকরণের দাবি এলাকাবাসির।
কেশবপুর উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্য মতে, বিলখুকশিয়া ও ভায়না বিলের ১২৫০ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ৩৯৭টি মাছের ঘের ও মৎস্য ঘেরের ২৭৬ হেক্টর বেড়িবাঁধে সবজি চাষ হয়। প্রতিবছর এ সমস্ত ঘেরে ৪ হাজার ৩২৩ মেট্রিকটন সাদা, ৬৫৮ মেট্রিকটন গলদা ও ৩৫২ মেট্রিকটন বাগদাসহ মোট ৫ হাজার ৩৩৩ মেট্রিকটন মাছ উৎপাদন হয়েছে। যার স্থানীয় বাজার মূল্য ১১৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এছাড়া প্রতিবছর ঘেরের পাড়ে ও ঘেরের পানির ওপর মাচায় শিম, বরবটি, মেটে আলু, কচু, লাউ, চালকুমড়া, তরমুজসহ ৫ হাজার ৬৭৮ মেট্রিকটন সবজি উৎপাদন হয়। যার স্থানীয় বাজারমূল্য ৩০ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
এসব ঘের ও বেড়িবাঁধে ফসল উৎপাদনে হাজার হাজার শ্রমিক কর্মরত থেকে তাদের পরিবারের ভরণপোষণ মিটিয়ে থাকেন। কিন্তু উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় এলাকা বাসি নানা সমস্যার শিকার হচ্ছে।
বিল এলাকার বাসিন্দা শিক্ষক কামরুজ্জামান টুলু বলেন, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে বিল এলাকাটি আর্থিক ও বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত লাভ করবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এমএম আরাফাত হোসেন বলেন, বিলখুকশিয়ার মৎস্যঘেরে রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে রাস্তাটি নষ্ট হচ্ছে। কৃষকের স্বার্থে রাস্তাটি দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *