Type to search

আজ দীপাবলি ও কালীপূজা

ধর্ম

আজ দীপাবলি ও কালীপূজা

 

স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোরঃ সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙালি-অবাঙালি সকল হিন্দুরাই শক্তির আরাধনায় কালীপূজা বা শ্যামাপূজা করেন।মা কালীর অনেক নাম- কেউ মা কালীকে চণ্ডী বলে, কেউ বলে শ্যামা। ভক্তদের বিশ্বাস মহাশক্তির বন্দনায় সকল অশুভ শক্তির বিনাশ হয়ে অন্ধকার থেকে আলোর পথ সুগম হয়। কালী পূজা মানেই আলোর উৎসব। বাংলায় গৃহে বা মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত করে কালীপ্রতিমার নিত্যপূজা হয়ে থাকে। তবে প্রত্যেক বছর কার্ত্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে অনুষ্ঠিত কালীপূজা বিশেষ জনপ্রিয়। এই কার্ত্তিক মাসের কালী পুজাকে দীপান্বিতা কালীপূজাও বলা হয়। এই দিন আলোকসজ্জা ও আতসবাজির উৎসবের মধ্য দিয়ে সারা রাত্রিব্যাপী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য, দীপান্বিতা কালীপূজার দিনটিতে ভারতের অন্যান্য জায়গায় দীপাবলি উৎসব পালিত হয়।আজ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দীপাবলী ও শ্রীশ্রী শ্যামাপূজা (কালী পূজা)। শাস্ত্র মতে কার্তিক মাসের ভূতচতুর্দশীর পর অমাবশ্যার পূর্ণতিথিতে গভীর রাতে উৎসাহ উদ্দীপনায় ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্বের সকল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ন্যায় বাংলাদেশের যশোরেও সাড়ম্বরে ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মহাশক্তির বন্দনা করা হবে । পঞ্জিকা অনুযায়ী আজ রোববার (১২ নভেম্বর) দুপুর ২টা ৩৫ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে অমাবশ্যা শুরু হবে এবং অমাবশ্যা শেষ হবে সোমবার (১৩ নভেম্বর) বিকাল ৩টা ২ মিনিট ৫১ সেকেন্ডে। তবে শাস্ত্রীয় অনুযায়ী আজ রাতেই কালীপূজা সম্পন্ন হবে। অমাবস্যার রাতে দেবী লক্ষ্মীর পূজার পাশাপাশি, কালী পূজার তাৎপর্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। দেবী কালীর ভয়ংকর রূপ এর মধ্যেও প্রেমময় এবং যত্নশীল মাকে দেখা যায়। তিনি তাঁর ভক্তদের চারপাশে থাকা সমস্ত নেতিবাচক শক্তিগুলিকে ধ্বংস করেন। তিনি সর্বোচ্চ শক্তির প্রকাশ। তিনি তার ভক্তদের মধ্যে থেকে সমস্ত অশুভ, অশুচিতা, নেতিবাচকতা এবং অন্ধকার দূর করেন। দেবী কালীর উপাসনা করার মাধ্যমে একজন ভক্ত চিরকালের আশীর্বাদ লাভ করেন এবং তিনি তাঁর ভক্তদের সমস্ত ধরনের মন্দ কাজ থেকে মুক্তির পথ দেখান। এক কথায় বলতে গেলে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের জন্যই কালী পূজা করা হয়। প্রাচীন আর্য যুগ থেকেই ভারতে শক্তি উপাসনা প্রচলিত। সেই যুগে মানুষ প্রাকৃতিক শক্তির পক্ষে ঠিকমত ব্যাখ্যা করতে পারত না। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কাছে তারা তখন নিতান্তই অসহায় ছিল। তাই সমস্ত অলৌকিক ও দুর্জয় শক্তিকে দেবতা জ্ঞানে পূজা করা হতো। প্রকৃতিকে শস্য-শ্যামলা মাতৃরূপে তথা মাতৃ শক্তি রূপে কল্পনা করা হতো। শ্রী শ্রী চণ্ডীকে পরাশক্তির রূপে কল্পনা করা হয়েছে। বীজ থেকে যেমন অংকুর বের হয় এবং জীবের বিকাশ ঘটে, ঠিক তেমনি এইসব সৃজনশীল তারই সৃষ্টিশক্তি। কালী দশমহাবিদ্যার প্রথম রূপ। তার গায়ের রং কালো। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই আছে ষড়রিপু এরা হলেন কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য। ষড়রিপু আমাদের খারাপ পথে নিয়ে যায়। যেহেতু মা কালী আদ্যা শক্তির দেবী অর্থাৎ শক্তি এবং সাহস অর্জন করার জন্য এই দেবীর পুজো করা হয়। কালী পূজার মাধ্যমে আমরা আমাদের ভেতরে থাকা এই ষড়রিপু কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। মনের মধ্যে সকল অন্ধকার দূর করে সমাজের অন্ধকার দূর করতে সচেষ্ট হতে পারি। তাই শক্তির আরাধনা অবশ্যই করতে হবে। একমাত্র শক্তিমান মানুষই পারে সকল বিপদ থেকে নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে। তাই সমাজের সকল খারাপ বা অসৎ এবং অসামাজিক কাজকর্ম দূর করার জন্য শক্তির আরাধনা স্বরূপ সকলেই দেবী কালীর পূজা ভক্তি সহকারে এবং শ্রদ্ধা সহকারে করে থাকেন। পূজার আগে আজ সন্ধ্যায় পৃথক বর্ণাঢ্য আয়োজনে দীপাবলি উৎসবের আয়োজন করেছে যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ ও সনাতন বিদ্যার্থী সংসদসহ বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন । আজ সন্ধ্যায় যশোর শহরের লালদিঘির পাড়ে পূজা উদযাপন পরিষদ এবং সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ চত্বরে বিকেল সাড়ে ৫ টায় অনুষ্ঠিত হবে দীপাবলির আলোক উৎসব। সরেজমিনে দেখা যায় যশোরে দিপাবলী উৎসব আয়োজনের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় উৎসবমুখর পরিবেশে পূজার আয়োজকরা এবার ব্যতিক্রমী সব আয়োজন করেছে। শ্রীশ্রী শ্যামাপূজায় প্রতিমা নির্মাণ শৈলী, বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সদৃশ অস্থায়ী সুদৃশ্য মণ্ডপ, সুদৃশ্য তোরণ নির্মাণ ও আলোকসজ্জায় এক নতুন মাত্রা এসেছে এবার। যশোর পৌর এলাকায় শতাধিক মন্দির ও মণ্ডপে দীপাবলী উৎসব ও শ্রীশ্রী শ্যামাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।এছাড়া ব্যক্তিগতভাবেও এক তৃতীয়াংশ বাড়িতে ব্যক্তিগতভাবে শক্তির আরাধনা হিসাবে কালীপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে দীপাবলী উৎসব ও শ্যামাপূজা (কালীপূজা) উপলক্ষে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পুলিশ প্রশাসন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। এদিকে শ্যামাপূজা উপলক্ষে মন্দিরে ও অস্থায়ী মণ্ডপে আয়োজন হবে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান।