Type to search

৭১, ৮৬, ৯৫ আর কত বয়স হলে বয়স্ক হবেন তারা?

যশোর

৭১, ৮৬, ৯৫ আর কত বয়স হলে বয়স্ক হবেন তারা?

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি
৭১, ৮৬, ৯৫ আর কত বয়স হলে বয়স্ক হবেন তারা? বৃদ্ধ আবু তালেব (৯৫), নওশের আলী (৮৬) ও সামছুন্নাহারের (৭১) বছর বয়স হয়েছে। তবুও তারা বয়স্ক হতে পারেন নি! পান না বয়স্ক বা সরকারি অন্যকোন ভাতা। অথচ তাদের সামনেই গ্রামের ৪৫/৫০ বছর বয়স্করাও পাচ্ছেন বয়স্ক ভাতা। তিনজনেরই বাড়ি যশোরের চৌগাছা উপজেলার পাশাপোল ইউনিয়নের বাড়িয়ালী গ্রামে। তাদের প্রশ্ন আর কত বয়স হলে বয়স্ক ভাতা পাবো বাবা?
বয়সের ভারে নুব্জ এই বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা কোনরকমে চলাফেরা করেন। ছেলেদের অভাব-অনটনের সংসারে বোঝা হয়ে রয়েছেন। তা দেখেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের করুনা হয়না তাদের প্রতি!
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী আবু তালেবের (৯৫) জন্মতারিখ ১৯২৫ সালের ১ জানুয়ারী, নওশের আলীর (৮৬) জন্মতারিখ ৩১ ডিসেম্বর ১৯৩৪ আর সামছুন্নাহারের (৭১) জন্মতারিখ ৩১ ডিসেম্বর ১৯৪৯। তবে পরিবার ও স্থানীয়রা জানান তাদের সবারই প্রকৃত বয়স আরো বেশি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এই তিন ব্যক্তিই বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য হলেও এ পর্যন্ত পাননি সরকারি কোনো সহযোগিতা।
সরকারি নিয়মানুযায়ী ৬৫ বছর বয়সী পুরুষ এবং ৬২ বছর বয়সী নারীরা বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য হবেন। তবুও এই ব্যক্তিরা আজ পর্যন্ত সরকারি কোন সুবিধাভোগি হতে পারেন নি। অথচ তাদের চোখের সামনেই ৪৫/৫০ বছর বয়সী নারী-পুরুষরা বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন।
এই ব্যক্তিরা কোন সুবিধা পাননা কেন জানতে চাইলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল বলেন ‘তারা ভাতা পাননা এটা আমি জানি। গ্রামের আরো অনেক বৃদ্ধই বয়স্ক ভাতা পান না। ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহিন রহমান এই গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তখন গ্রামের ৪৫/৫০ বছর বয়সের অনেকেই বয়স্ক ভাতার কার্ড পেলেও উনারা পাননি।’ আপনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেননি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি কাশেম চেয়ারম্যানের (দৃর্বৃত্তদের হাতে নিহত) পক্ষে ভোট করায় সন্ত্রাসীরা আমাকে মেরে হাত-পা ভেঙে দেয়। দির্ঘদিন বিছানায় থাকার পর এখন কোনরকম সুস্থ হয়ে চলছি। তাদের বিরুদ্ধে কমপ্লেন করলে আবার আমার উপর নির্যাতন হবে বলে আমি কিছু বলিনি। তবে গ্রামের সূত্রগুলোর দাবি মেম্বার টাকা ছাড়া কিছু চেনেন না। এসব বয়স্ক ভাতার কার্ড করতে মাথা পিছু ২ হাজার টাকা করে না দিলে তিনি কারো কার্ড করে দেন না।
উল্টো তিনি বলে বেড়ান এসব বৃদ্ধরা বলেছে, ‘তারা সরকারি কোন টাকা নেবে না।’ এ প্রতিবেদকের কাছেও তিনি একই দাবি করে বলেন আবু তালেব নাকি সরকারি টাকা নেবে না। আপনি জানতে চেয়েছেন প্রশ্নে বলেন না, শুনেছি। আর নওশের আলী-শামছুন্নাহার সাবেক চেয়ারম্যানের পরিবারের লোক। দাবি করেন মেম্বার মোস্তাফিজুর রহমান।
বৃদ্ধ আবু তালেবের ছেলে গ্রামের বাজারে চা-বিক্রেতা মইনুল ইসলাম মোবাইল ফোনে জানান মেম্বারের দাবি সত্য নয়। তার পিতা যৌবনে গ্রামের সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িত ছিলেন। এই ৯৫ বছর বয়সে কিছুটা অ্যাবনরমাল হয়ে গেছেন। তিনি জানান তাদের চার ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই মারা গেছেন। মা’ মারা গেছেন অনেক আগে। তিনি সামান্য চা-বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন। সবথেকে ছোট ভাই বাবার খরচ চালাতো। সে কিছুদিন আগে পানি পথে মালেশিয়া গেছেন। এখন তার সাথে কোন যোগাযোগ নেই। মইনুলের কথার সত্যতা পাওয়া যায় বৃদ্ধ আবু তালেবের আইডি কার্ডের স্পষ্ট স্বাক্ষর দেখে এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে।
বৃদ্ধ নওশের আলী ও সামছুন্নাহার স্বামী-স্ত্রী। তারা গ্রামের অসচ্ছল পরিবার। নওশের আলীর ৫ ছেলে ২ মেয়ের সবাই বিয়ে করে সংসারি হয়েছেন। তার দুই ছেলে ঢাকাতে সিএনজি চালিত থ্রি-হুইলার চালাতেন। করোনা ভাইরাসের আগে বাড়ি এসে বেকার হয়ে আছেন তারাও। নওশের আলীর ছেলে রবিউল ইসলাম বলেন আমার বড় ভাই মারা গেছেন। নিজেরা কোনভাবে চলতাম। করোনা ভাইরাসের আগে ঢাকা থেকে বেড়াতে এসেছিলাম। আর যেতে পারিনি। প্রায় দুইমাস বেকার হয়ে রয়েছি। নিজেরাই চলতে পারিনে।’ পরিবারের সদস্যরা কোন সরকারি সুবিধা পাননা বলেও জানান তিনি।
বৃদ্ধা সামছুন্নাহার বলতে থাকেন, ‘বাবা কিছু মনে করোনা অনেক সময় একটু মিষ্টি বা অন্য কত কিছু খেতে মন চায়, কিন্ত কনে (কোথায়) পাবো? বলেই লজ্জায় নিজের দুই গালে থাপ্পড় মারতে থাকেন তিনি।’
পাশাপোল ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অবাইদুল ইসলাম সবুজ বলেন, ‘এত বয়সী বৃদ্ধদের বয়স্ক ভাতার কার্ড হয়নি, এটা আমার জানা ছিল না। গ্রামের ইউপি সদস্যের সঙ্গে কথা বলে যত দ্রুত সম্ভব কার্ড করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেব’।
সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, বয়স্ক ভাতা পাওয়ার মতো উপযুক্ত বয়স তাদের হয়েছে। তবুও কেন কার্ড পাননি খোঁজ নিয়ে দ্রুত তাদের বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *