৫০ লক্ষ টাকার ক্ষতি জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত মৎস চাষীর
চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি: যশোরের চৌগাছায় আবুল কাশেম নামে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত এক মৎস্য চাষীর ১৫০ বিঘা জমির মাছের ঘেরে গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে মাছ মেরে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে। এতে ওই মৎস্য চাষী আনুমানিক ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
সোমবার রাতের আধারে কেউ শত্রæতাবশতঃ উপজেলার স্বরূপদাহ ইউনিয়নের বাঘারদাড়ি বিল নামক স্থানে আবুল কাশেমের ১৫০ বিঘার ওই ঘেরে গ্যাস ট্যাবলেট বা কার্বাইড প্রয়োগ করে। এতে মঙ্গলবার বিকাল থেকে মাছ মরে ভেষে উঠতে থাকে। বুধবার সকাল খেকে ঘেরটিতে ৫/৭শ গ্রাম ওজনের মরে ভেষে থাকা রুই মাছ আশেপাশের আন্দারকোটা, বাঘারদাড়ি, বহিলাপোতা, বাজেখড়িঞ্চাসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ ওই ধরে নিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন ঘেরে কর্তব্যরত কর্মচারীরা।
দুপুর ১টার সময় ওই ঘেরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় চারপাশের পটের পাশে শতশত রুই মাছ মরে ভেষে রয়েছে। কিছু কিছু মাছে পচনও ধরেছে। আশেপাশের গ্রামের নারী-পুরুষরা ওই মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছেন।
মৎস্য চাষী ও চৌগাছা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন আমি একজন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত মৎস্য চাষী। এই চৌগাছার বাঘারদাড়ি বিল ছাড়াও আমার প্রায় এক হাজার বিঘা জমিতে মাছ চাষ আছে। আমি আধুনিক মৎস্য চাষ করি। কিন্তু এই ধরনের মাছ মরা বা এই ধরনের ঘটনা ইতিপূর্বে আমার কোন জায়গায় ঘটেনি। আসলে এই জায়গায় আমি রাসায়নিক সারও কম ব্যবহার করি। এটা উন্মুক্ত ভাবে মানে ন্যাচারাল ভাবে এখানে আমি মাছ চাষ করি। আজ এক বছর ধরে এখান থেকে কোন মাছ আমি ধরিনি মানে ফিশিং করিনি। আজকে যা ঘটলো তাতে আমি অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গেলাম। এখানে শুকনোর সময় প্রায় ৭০ বিঘা আর বর্ষা মৌসুমে প্রায় ডবল হয়ে যায় অর্থাৎ প্রায় ১৫০ বিঘা জমি রয়েছে। এই ১৫০ বিঘায় পানি বাইরে থেকে আসে আবার বাইরে চলে যায়। বদ্ধ থাকে না। যেখানে পানি বদ্ধ থাকে সেখানে মাছ মারা যেতে পারে। আপনারা ঘুরে তো দেখলেন পানির কতটুকু ফিল্টার সেটা আপনারা স্বচোক্ষে দেখলেন। বড় মাছ বাদেও আপনারা দেখেছেন যে ছোট পুটি বা রাণি মাছও মরেছে যদি বিষ প্রয়োগ না হয় তাহলে কিন্তু এমনিতেই এই মাছ মরা সম্ভব না। আমি ধারণা করছি যে আমার এখানে কার্বাইড বা বিষ ট্যাবলেট যেটা গোডাউনে গ্যাস ট্যাবলেট অর্থাৎ আমরা এখন যেটা বিষ হিসেবে যেটা ব্যবহার করি সেটা কেউ প্রয়োগ করেছে। তবে আমার ধারণা যে এই জায়গা চাষ নিয়ে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোকজনের সাথে আমার একটু ঝামেলা আছে মনোমালিন্য আছে। তারা এ জায়গাটা দখল করতে চায়। চাষ করতে চায়। তারা আমার বিরুদ্ধে কিছু ষ্টাম্পও করেছে। আমাকে উঠিয়ে দেয়ার জন্য অনেক চেষ্টাও করেছে। তারাও এটা করতে পারে বলে আমি মনে করি। আমার এখানে খরচ দিয়ে যে মাছ ছিল। সকাল থেকে আশেপাশের গ্রামগুলির মানুষ মাছ কুড়িয়ে নিয়ে গেছে। আপনারা দুপুর দেড়টার সময় এসেও যে মাছ দেখলেন মরে ভেষে আছে তাতে আমার প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমি এ বিষয়ে থানায় কমপ্লেন করবো। প্রস্তুতি চলছে। আমি প্রাথমিক ভাবে একটি জিডি করবো বলে মনে করছি। কিছুক্ষণ পরেই আমি থানায় যাবো। আগে ঘটনাস্থলে আসা দরকার বলে এখানে এসেছি। আবুল কাশেম আরো জানান মঙ্গলবারও আমি পানি পরীক্ষা করিয়েছি। পানির রিপোর্ট ভালো। গ্যাস ট্যাবলেট বা কার্বাইড দিলে এভাবে ধীরে ধীরে মাছ মরে ভেষে ওঠে বলেও জানান তিনি।
এ রিপোর্ট লেখার সময় বিকাল চারটায় আবুল কাশেম চৌগাছা থানায় সাধারণ ডায়েরি করার জন্য অবস্থান করছিলেন। মৎস্যচাষী আবুল কাশেমের চৌগাছার বিভিন্ন স্থানসহ পাশর্^বর্তী ঝিনাইদহ জেলার ঝিনাইদহ সদর ও মহেশপুর উপজেলায়ও কয়েকটি মাছের ঘের রয়েছে।
এবিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম শাহজাহান সিরাজ মোবাইল ফোনে জানান সাধারণত এভাবে মাছ মরে ভেষে ওঠে না। আর ওই স্থানটা উন্মুক্ত জায়গা। একদিক থেকে বাইরের (বর্ষার) পানি প্রবেশ করে। অন্যদিক থেকে বেরিয়ে যায়। কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনার কারনেই এমন হতে পারে বলেও জানান তিনি।