Type to search

স্বাধীনতার পর থেকেই চন্দ্রপুরের বাঁশের হাট

অভয়নগর

স্বাধীনতার পর থেকেই চন্দ্রপুরের বাঁশের হাট

                                  অভয়নগরে স্বাধীনতার পর থেকেই চন্দ্রপুরের বাঁশের হাট

প্রিয়ব্রত ধর,ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি:
দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম নদী আতাই যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলায় প্রবাহমান নবগঙ্গা নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করে চন্দ্রপুর গ্রামের কোলঘেঁষে জলধারা কিছুদুর গিয়ে খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার ভৈরব নদের ত্রিমোহনায় মিলিত হয়েছে। নদীটির বহমান জলধারার উজান-ভাটির কোলজুড়ে গড়ে ওঠা অন্তত দশটি গ্রামে কোনো বাঁশের চাষ নেই। তারপরও নদী ঘেঁষে এখানে গড়ে উঠেছে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম বড় বাশেঁর হাট। একে চন্দ্রপুর বাঁশের হাট নামে ডাকটেই এলাকার মানুষের বেশি পছন্দ।
স্বাধীনতার পর থেকেই এখানে শুরু হয় বাঁশ কেনাবেচা। আর তখন থেকেই শুরু হয় নদীর সাথে বাঁশের মিতালী। আতাইয়ের সাথে নদীপথে নড়াইল, খুলনা, বাগেরহাট, মোংলা, সাতক্ষীরা ও ফরিদপুর জেলার সাথে রয়েছে সুন্দর যোগাযোগ ব্যবস্থা। ফলে দুর-দুরান্ত থেকে এখানে বাঁশ কিনতে আসে ব্যবসায়ীরা। সপ্তাহে প্রতি বুধবার এখানে বাঁশের হাট বসে। হাটে চার থেকে পাঁচ হাজার বাঁশ বেচাকেনা হয়। নদীপথেই বাঁশগুলো এখানে আসে আবার বিক্রিরপর নদীপথেই দূরদূরান্তে চলে যায়।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশে বাঁশের বেশি ব্যবহার দেখা যায় পানের বরজে। কাঁচা, আধাপাকা ঘর নির্মাণে বাঁশের ব্যবহারের জুড়ি নেই। এছাড়া বেড়া তৈরী, মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত ঘুনি, চারো, আরিংদা, চাই ইত্যাদি তৈরীতে বাঁশের ব্যবহার সমধিক। ইদানিং শিল্পকর্মে বাঁশের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

সাম্প্রতি হাটে গিয়ে দেখা যায়,আতাইয়ের পাড়ে বেশ বড় একটা মাঠ। নাম চন্দ্রপুরের মাঠ। মাঠের দক্ষিণে নদীর কুলঘেঁষে হাজার হাজার বাঁশের মেলা। কেনার ফাঁকে ফাঁকে ব্যবসায়ীরা সেগুলো গন্তব্যে নিতে ব্যস্ত। শ্রমিকরা বাঁশগুলো টেনে নদীতে বহমান সোতের উপর ফেলে গাঁট(বোঝা) বাঁধার কাজ করছেন। এক এক বোঝায় আড়াইশো থেকে তিনশো বাঁশ বেঁধে আতাই নদীতে রাখা ট্রলারের(ইঞ্জিনচালিত নৌকা) সাথে সেটে(বেঁধে) দেওয়ার কাজ চলছে। আবার কোনো কোনো ট্রলারের উপরেও বাঁশ উঠাতে দেখা যায়। সেখানে কাজ করছিল স¤্রাট মল্লিক ও তালিপ মল্লিক নামের দুই শ্রমিক। স¤্রাট বলেন ‘আমরা জলে নামায়ে বাঁশগুলো বুঝা বাঁধে সেগুলো দড়ি দিয়ে টলারের(ট্রলার) সাথে বাঁধি। টলার পানির উপর ভাসতি থাহা বাঁশগুলো ব্যবসায়দের চাইদামত ভিন্ন জিলার সুবিদামত জাগায় টানে নিয়ে যায়। অনেকে টলারের উপরি উঠায়েও নিয়ে যায়। একাজে এট্টাবাঁশে আমরা তিনটাহা পাই। দিনে ১৫০ থেকে ৪০০ টাহা পর্যন্ত আয় করি।’
জানা গেছে, প্রায় চল্লিশজন ব্যাপারী(ব্যবসায়ী) আর ৩৫ জন শ্রমিক এখানে বাঁশ কেনাবেচা ও কাজের সাথে জড়িত। নড়াইলের মিরের পাড়া, যশোরের বসুন্দিয়া থেকে বাঁশ এনে এখানে বিক্রি করেন স্থানীয় ব্যাপারী প্রদীপ চৌধুরী।তিনি বলেন,‘প্রতিহাটে নদীপথে ট্রলারে পাঁচশরমত বাঁশ নিয়ে আসি। ২১০ থেকে ২৩০ টাকায় আমি মাঝারী ধরনের বাঁশ কিনি।’ তিনি বলেন,‘ আতাই নদীর তীরে হাটের আশেপাশে গড়েওঠা যশোরের চন্দ্রপুর, রামনগর, জয়রাবাদ, নলামারা, দিঘলিয়া, খুলনা জেলার ডুমরা, মাঝিরগাতি, আড়–য়া, বোয়ালিয়ারচর, কামারগাতি, কোলা ও নড়াইলের পেড়লি গ্রামে বানিজ্যিকভাবে বাঁশের চাষ নেই। সাধারণত যশোরের বসুন্দিয়া, বাসুয়াড়ি, ভাটপাড়া ও নড়াইলের মীরেরগাতিসহ বিভিন্ন জাগা থেকে ব্যাপারীরাএখানে নদীপথে বাঁশ আনে।’
চন্দ্রপুরহাট থেকে বাঁশ কেনেন উপজেলার আমতলা গ্রামের ব্যাপারী ইমদাদ মোল্যা। তিনি বলেন,‘আজ ৫০০ বাঁশ কিনিছি। একশ বাঁশ ১৫ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা পর্যন্ত কিনিছি। আমি এগুলি খুলনার ফুলবাড়ি ও দৌলতপুর নিয়ে বেঁচি(বিক্রি করি)। পত্তিবাঁশে ৫ টাহা লাব পালি ছাড়ে দি।’ তিনি বলেন, নদীপথে চমৎকার ব্যবস্থা থাহায় সাধারণত এন থেহে খুলনা জিলার দৌলতপুর, পাইকগাছা, চালনা, গড়াইখালি, দাকোপ উপজেলা ও সাতক্ষীরা এবং বাগিরআাট(বাগেরহাট) জিলায় নিয়ে বেঁচা অয়।’
জানতে চাইলে হাটমালিক(ইজারাদার) শাহিন খাঁন বলেন,‘ ১৯৭১ সাল থেকে হাটটি বসছে। হাটে চার-পাঁচ হাজার বাঁশ বিক্রি হয়। হাটের আগের দিন থেকে শুরু হয়ে পরেরদিন পর্যন্ত এখানে ব্যস্ততা দেখা যায় আর পরের চারদিন হাটে বিরাজ করে নিরবতা। ’