Type to search

শিবচরে চারটি ইউনিয়ন ভাঙ্গনের কবলে

জাতীয়

শিবচরে চারটি ইউনিয়ন ভাঙ্গনের কবলে

 

অপরাজেয় বাংলা ডেক্স-কত সুন্দর করে সাজানো চরটা তাসের ঘরের মতো ভাইঙা যাচ্ছে। কত মানুষ দেশান্তরি হচ্ছে। কত স্বপ্ন ভেঙে তছনছ হয়ে যাচ্ছে। আমারা ত্রাণ চাই না, ভাঙন ঠেকান। আমরা ভাঙন প্রতিরোধ চাই।’ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলছিলেন চরজানাজাতের ইউপি সদস্য মালেক তালুকদার। এ দাবি তার একার নয়। এ যেন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের সব মানুষের হৃদয়ের আর্তি।

শিবচরের তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে বৃহৎ চরাঞ্চল। মূল ভূখ- থেকে ছিল বিচ্ছিন্ন, অবহেলিত। সরকারের নানমুখী উদ্যোগে গত কয়েক বছরে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে চরাঞ্চলে। সংযুক্ত হয় মূল জনপদে। কিন্তু শুধু নদীভাঙন প্রতিরোধ করতে না পারায় সব উদ্যোগ-আয়োজন আজ বিফলে যাওয়ার পথে। গত কয়েক বছরে ব্যাপক নদীভাঙনের পর চলতি বছর মাত্র কয়েক দিনে প্রায় সাড়ে চারশ ঘরবাড়ি, একটি মাদ্রাসাসহ বহু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে পাঁচটি বিদ্যালয়, দুটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র-কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, হাটবাজারসহ তিন ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, হাজারো বসতবাড়ি।

বন্দরখোলার কাজীরসুরা তাহফীজুল কোরআন গোরস্থান মাদ্রাসা স্থানান্তর করা হয়েছে। নদীভাঙনের মুখে রয়েছে কাজীরসুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাগুরখ- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব খাস বন্দরখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নারিকেলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাঙনের মুখে পড়ায় বন্দরখোলার নুরউদ্দিন মাদবরেরকান্দি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের তিনতলা ভবন থেকেও মালামাল সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে। এ ছাড়াও বন্দরখোলার ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন, সুরার হাটের ৮০টি দোকান, চরজানাজাত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রসহ তিন ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ হাজারো বসতবাড়ি, হাজারো বিঘা জমি ঝুঁকিতে রয়েছে।

স্থানীয় তরুণ ও বন্ধন সেবা সংঘের সভাপতি রওশাদ এ. হাওলাদার বলেন, আমাদের দাবি, মাননীয় চিফ হুইপ মহোদয় যেন আমাদের বন্দরখোলার নদীভাঙন রোধের স্থায়ী ব্যবস্থা করেন। তা হলেই উন্নয়ন আর আধুনিকতার সুফল ভোগ করতে পারবেন এ চরাঞ্চলের মানুষ।

বন্দরখোলা ইউনিয়নের ইজ্জাতুল্লাহ্ মাদবরকান্দির হিরু ফকির বলেন, আমাদের এমপি সাহাবের অক্লান্ত চেষ্টায় বর্তমান সরকারের সময়ে আমাগো চর কারেন্ট (বিদ্যুৎ), পিচ ঢালা রাস্তা, বড় বড় ব্রিজ, স্কুল ভবন, হাটবাজার সব উন্নয়ন হইয়া আমরা মূল ভূখ-ে যোগ হই। কিন্তু সর্বনাশা পদ্মা নদী আমাগো সব শেষ কইরা দিল।

ভাঙন আক্রান্ত বন্দরখোলার নুরউদ্দিন মাদবরেরকান্দি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন বলেন, আমাদের স্কুলটিসহ চরাঞ্চল এত সুন্দর যে, কেউ বলবেই না এটি পদ্মার চর! কিন্তু প্রতি বর্ষায় ভাঙনে আধুনিক চরটি এখন বিলীনের পথে।

জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, চিফ হুইপ মহোদয়ের নির্দেশনা অনুসারে আমরা জোরালো ত্রাণ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। ত্রাণ তৎপরতা চলবে। তবে ভাঙন প্রতিরোধ করা গেলে এ চরের উন্নয়ন সারাদেশে চরের মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকত।

স্থানীয় সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, শিবচর মূলত পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদ পরিবেষ্টিত দ্বীপ এলাকা। পদ্মা সেতুর নদীশাসন বাঁধের মাধ্যমে শিবচরের বড় একটা অংশ এর আওতায় এসেছে। আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙন প্রতিরোধে প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে বাকি এলাকায়ও নদীভাঙন প্রতিরোধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(সংগ্রহিত)

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *