রুক্ষ প্রকৃতিতে নড়াইল-কালিয়া সড়ক বাড়তি সৌন্দর্য্য ছড়াচ্ছে সোনালু ফুল

নড়াইল প্রতিনিধি
নড়াইল-কালিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের উভয় পাশে ফুটেছে অসংখ্য সোনালু ফুল।
ব্যস্ততম আঞ্চলিক এ মহাসড়কে সোনালু ‘সোনালি অভ্যর্থনা’ জানাচ্ছে
যানবাহনের চালক-যাত্রী ও পথচারীদের। বৈশাখের এ সময় বাংলার প্রকৃতিতে হলুদ
রঙের ঝুলন্ত ফুল সোনালু নড়াইল-কালিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ককে রাঙিয়ে তুলেছে। এ
সড়কের বিভিন্ন অংশে ফুটে আছে এই ফুল। পথে যেতে যেতে হলুদ সোনালু ফুলের
দৃষ্টিনন্দন রূপ দারুণভাবে মোহিত করছে যাত্রী ও নিসর্গপ্রেমীদের।
অনেকে আকৃষ্ট হয়ে যানবাহন থামিয়েই ফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন। আবার অনেক
পথচারী ক্ষণিকের জন্য হলেও থমকে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য প্রাণ
খুলে উপভোগ করছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আঞ্চলিক এ মহাসড়কের বিভিন্ন
অংশে ফুটে আছে সোনালু ফুল।
এ মহাসড়কের কালিয়া উপজেলার আটলিয়া, কালডাঙ্গা ও আরাজী বাঁশগ্রাম অংশে
বেশি দেখা মিলছে সোনালুর। সদর উপজেলার এ মহাসড়কের বিভিন্ন অংশেও চোখে পড়ে
এই ফুল। সবুজ পাতাকে ছাপিয়ে সোনালি রঙের ফুলে সজ্জিত সোনালু গাছ।
গ্রীষ্মের রুক্ষ প্রকৃতিতে প্রাণের সজীবতা নিয়ে গাছের প্রতিটি ডাল-পালায়
থোকায় থোকায় অলংকারের মতো শোভা পাচ্ছে এ ফুল। ফুলের সৌরভ আর মন মাতানো
রঙে আকৃষ্ট হচ্ছেন চলাচলকারীরা।
এই আঞ্চলিক মহাসড়কে মোটরবাইকে নিয়মিত যাতায়াত করেন জোনায়েদ হাবীব নামের
এক জ্যেষ্ঠ ব্যাংক কর্মকর্তা। অফিস ছুটির পর বাড়ি ফেরার পথে পড়ন্ত বিকালে
নড়াইল-কালিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের আরাজী বাঁশগ্রাম অংশে মহাসড়কের পাশে বাইক
ঠেকিয়ে মুঠোফোনে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে ফেইসবুকে আপলোড করছেন। কথা হয় তার
সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সোনালু ফুলের সৌন্দর্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর, যা এই
মহাসড়কের বুকে ফুটেছে। আমি এই মহাসড়কে নিয়মিত যাতায়াত করি। এই পথে ফুলের
সুবাস নিতে নিতে ও মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে অনেক ভালো লাগে।’
নাজমুল হোসেন মোল্যা নামের অপর এক নিয়মিত বাস যাত্রী বলেন, ‘জেলার অন্যতম
ব্যস্ততম নড়াইল-কালিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে হলুদ রঙের
বাহারি সোনালু। গাছ হলুদ ফুলে বর্ণিল থাকায় চলাচলের সময় মানুষ মুগ্ধ
হচ্ছেন। যে কারণে চলাচলকারীরা এখন সোনালু ফুলের সুবাস নিতে নিতে গন্তব্যে
যেতে পারছেন।’
নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ
কে এম আহসান হাবীব বলেন, ‘বাংলাদেশে অঞ্চল ভেদে নামে রয়েছে
ভিন্নতা। কোথাও সোনালু, কোথাও স্বর্ণালি, বান্দর লাঠি, কর্ণিকা, অলানু,
সোদাল। তবে নড়াইল-যশোর ও খুলনা অঞ্চলে এটি সুমরাইল ফুল নামে পরিচিত।
বৃক্ষটির ডালপালা ততটা ছড়ানো নয়। পাতার রং গাঢ় সবুজ, মসৃণ ডিম্বাকৃতির।
সোনালু গাছের পাতা ও বাকল ভেষজগুণ সমৃদ্ধ, যা ডায়রিয়া ও বহুমূত্র রোগে
ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে, এর ফল বাত, বমি ও রক্ত¯্রাব প্রতিরোধে কাজ করে।
বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ায় এ গাছ জন্মে বেশি। সোনালু গাছের
বৈজ্ঞানিক নাম কেসিও ফেস্টুলা এবং প্রকৃত শুদ্ধ নাম কর্ণিকার। ইংরেজিতে
এর নাম গোল্ডের শোয়ার। গ্রামাঞ্চলে গাছটি কোথাও কোথাও দেখা গেলেও
শহরাঞ্চলে নেই বললেই চলে। এমন সময়ে মহাসড়কের পাশে গাছটি থাকায় নতুন
প্রজন্ম চলাচলের সময় এই গাছটির সম্পর্কে জানতে পারছে।