Type to search

মনিরামপুরে পশু পালনকারী এবং হাট মালিকরা হতাশায়

যশোর

মনিরামপুরে পশু পালনকারী এবং হাট মালিকরা হতাশায়

জি, এম ফারুক আলম, মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি ॥
করোনা ভাইরাসের কারনে চরম হতাশার মধ্যে কাটছে মনিরামপুরের পশু পালনকারী এবং পশু হাটের মালিকগনের। সব মিলিয়ে ২৪ থেকে ২৫ দিন কোরবানীর ঈদের বাকী থাকলেও নেই কোন কেনা-বেচা। যার ফলে পশু পালনকারী (গরু-ছাগল) এবং হাট মালিকদের দিন কাটছে হতাশার মধ্যে দিয়ে। উপজেলায় প্রধানত মনিরামপুর সদর এবং রাজগঞ্জ এ দুটি বড় পশুর হাট। চলতি বছর মনিরামপুর সদর পশুর হাটটি ইজারাদার ফারুক আহম্মেদ লিটন সরকারের নিকট থেকে এক বছরের জন্য ক্রয় করেন ১ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা।
ইজারাদার দাবী করেছেন ভ্যাট আইটি যোগ করলে ২ কোটি ৫ হাজার ২০ হাজার টাকায় দাড়াবে। শনিবার ও মঙ্গলবার সপ্তাহে এ দুটি হাট পাইলেও করোনার কারনে গত ৩ মাস হাট চলেনি বলে দাবী করেন তিনি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রতি হাটে টাকা উঠছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার। হাট ক্রয়ের টাকা তুলতে গেলে প্রতি হাটে ২ লাখ ৫ হাজার টাকা লাগবে। এক পর্যায়ে হাতাশা প্রকাশ করেছেন হাট ইজারাদার ফারুক আহম্মেদ লিটন দাবী করেন এ অবস্থা চলতে থাকলে ৫০% টাকাও ঘরে আসবে না।
রাজগঞ্জ পশুর হাট ইজারাদার (মালিক) পান্না খান একই ভাবে হতাশা প্রকাশ করে জানান, হাট ক্রয়ের অর্ধেক টাকা মওকুফের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট আবেদন করেছি। যদি ৫০% মওকুফ হয় সে ক্ষেত্রে বেঁচে থাকা সম্ভব। ইজারাদার (মালিক) পান্না খান জানান, ১ বছরের জন্য ২৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকায় পশুর হাট ক্রয় করে, হাটে টাকা উঠছে ৩ থেকে ৪ হাজার করে। এর মাঝে ৩ মাসে হাট বসেনি করোনার কারনে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিছু সংখ্যক ক্রেতা বাজারে এলেও কেনা বেচা নেই মোটেও। এছাড়া বাইরের চালান ব্যবসায়ীদের এ বাবার আশারও কোন লক্ষন মনে হচ্ছে না। ফলে কোরবানীর মুখো-মুখির সময় হাটের এ অবস্থা যার কারনে পশু পালনকারী এবং হাট মালিকদের একই অবস্থা চলছে।
কোরবানীর জন্য পশু (গরু) পালন করে হতাশার কথা জানিয়েছেন উপজেলার মশ্বিমনগর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন। ১০টি গরু পালন করে তিনি চরম হাতাশার কথা জানিয়েছেন। জানতে চাইলে চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, দরদাম তো দূরের কথা কোন ক্রেতাই নেই। ফলে লাভের আশা তো বাদই থাক, আগামী দিন ১০টি গরুর জন্য যা ব্যয় হবে তাও লস।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আবু জার সিদ্দিকী ও পশু চিকিৎসক উত্তম সরকার জানান, এ বছর উপজেলায় কোরবানীর জন্য গরু প্রস্তুত করা হয়েছে ৬ হাজার ৭’শ ২০টি। ছাগলও রয়েছে প্রায় ১০ হাজার। তবে অধিকাংশ গরু পালনকারীগণ চরম সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন গরু নিয়ে।
উপজেলার সব থেকে আলোচিত পশু পালন করেছেন হুরগাতী গ্রামের হাশমত আলী। কোরবানীর জন্য প্রস্তুতকৃত ২টি গরু পালন করেছেন তিনি। উপজেলার সব থেকে বড় আকারে এ গরু ২টির ১টির ওজন ২৫ মন হবে বলে জানিয়েছেন প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আবু জার সিদ্দিকী। তবে গরু হিসেবে কোন খরিদ্দার নেই বলেও দাবী করেছেন তিনি।
কাশিপুর গ্রামের আকরাম হোসেন কোরবানীর জন্য ১টি গরু পালন করেছেন বিক্রির জন্য প্রস্তুতি চালাচ্ছেন। কিন্তু তার গরু হিসেবে দর-দাম বলছে না কোন গরু ক্রেতা। পশু মালিক আকরাম জানান, ২০-২২ মণ ওজনের গরুটির মূল্য বলা হচ্ছে ৫ থেকে সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা। যা খরচের অর্ধেকও আশা করা যাচ্ছে না। পাঁচবাড়িয়া গ্রামের অমৃত মন্ডল, তিনিও গরু পালন করে হতাশায় ভুগছেন। এ অমৃত মন্ডলের ২৭ মাস বয়সের ১টি গরু আছে যার ওজন সাড়ে ২১ মন ওজনের। খরিদ্দার বাড়িতে এলেও দরদাম না বলেই ফিরে যাচ্ছেন বলে দাবী করেছেন তিনি।
একই অবস্থা শ্রীপুর গ্রামের খামারী ফারুক হোসেনের, আসছে কোরবানীর জন্য ১৬টি গরু প্রস্তুত করেছেন তিনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনিও গরু নিয়ে চরম হতাশার মধ্যে কাটাচ্ছেন। চান্দুয়া গ্রামের খামারী নূরুল মোল্যা, তিনিও ১৩টি গরু প্রস্তুত রেখেছেন কোরবানীর বাজারে বিক্রির জন্য। কিন্তু দর-দাম দেখে হতাশায় ভূগছেন তিনি। দূর্গাপুর গ্রামের হাফিজুর রহমানও একই আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন।
এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতেই আগের ভাগেই লাভ-লস মাথায় নিয়েই গোয়ালের গরু বিক্রি কওে দিয়েছেন মোহনপুর গ্রামের জাকির হোসেন, বিজয়রামপুর গ্রামের সন্তোষ স্বর। উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আবু জার সিদ্দিকী জানিয়েছেন করোনা ভাইরাসের এ পরিস্থিতিতে কেবল খামারীরা নয়, আমার নিজেরও চরম দুঃচিন্তার মধ্যে দিন কাটছে।