Type to search

ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে নিউজিল্যান্ড

খেলাধুলা

ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে নিউজিল্যান্ড

ভারতকে ১৮ রানে হারিয়ে ফাইনালে চলে গেল নিউজিল্যান্ড। ধোনি-জাদেজার ১১৬ রানের অবিশ্বাস্য এক জুটি বিশ্বকাপ ইতিহাসে সেরা প্রত্যাবর্তনের ম্যাচগুলোর একটির জন্ম দিতে চলেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩ বল বাকি থাকতে ২২১ রানে অলআউট হয়ে গেল ভারত।
ম্যানচেস্টারে মাথার ওপর মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। খেল দেখাতে শুরু করেছিলেন কিউই পেসাররা। ৩.১ ওভারে ৫ রান তুলতে নেই ৩ উইকেট! ২৪০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা ভারতের হার তখন মনে হয়েছে শুধুই সময়ের ব্যাপার। কিন্তু ক্রিকেট যে গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা, সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। আর মহেন্দ্র সিং ধোনি বোঝাতে শুরু করেছিলেন, ভারতীয় ক্রিকেট তাঁকে কোথায় রাখবে, সেটি প্রমাণের ম্যাচ এটাই। কিন্তু দম আটকানো এ ম্যাচে নিউজিল্যান্ড শেষ পর্যন্ত প্রমাণ করেছে, তারা আর শুধুই সেমিফাইনালের দল নয়। ভারতকে ১৮ রানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে নিউজিল্যান্ড।

ভারতের ইনিংসের শুরুতে ফাইনালে ওঠার পথেই ছিলেন নিউজিল্যান্ডের পেসাররা। লোকেশ রাহুল, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি—ভারতীয় টপ অর্ডারের এ তিন স্তম্ভকে দলীয় ৫ রানের মধ্যেই ফিরিয়ে ম্যাচটা নিজেদের দিকে টেনে এনেছিলেন ট্রেন্ট বোল্ট-ম্যাট হেনরির পেস জুটি। এরপর জুটি গড়ার চেষ্টায় খণ্ড-খণ্ড লড়াইয়েও হেরেছে ভারত। পাশার দান উল্টে যায় রবীন্দ্র জাদেজা এসে উইকেটে ধোনির সঙ্গে যোগ দিলে। ৩১তম ওভারে জুটি বাঁধেন দুজন। তখনো ১১৪ বলে ১৪৬ রানের দূরত্বে পিছিয়ে ভারত। হাতে মাত্র ৪ উইকেট। সপ্তম উইকেটে ১১৬ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ধোনি-জাদেজা জুটি।

ইনিংসের শুরুর মতো ভারতের শেষ পতনটুকু শুরু হয় ৪৭.৫ ওভার থেকে। বোল্টকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন জাদেজা (৫৯ বলে ৭৭)। ওই ওভার শেষে জয়ের জন্য ১২ বলে ৩১ রান দরকার ছিল ভারতের। ৪৯তম ওভারে এসে ম্যাচটা হেলে পড়েছে কিউইদের দিকে। লকি ফার্গুসনের করা ওই ওভারে রানআউট হন ধোনি (৭২ বলে ৫০)। পুরো বিশ্বকাপে বাজে ফর্মে থাকা মার্টিন গাপটিলের এক থ্রোয়েই হয়তো নির্ধারিত হয়ে গেল ম্যাচের ভাগ্য! শেষ বলে ভুবনেশ্বর কুমারকে তুলে নেন ফার্গুসন। এতে হাতে ১ উইকেট রেখে শেষ ওভারে ২৩ রান তোলার প্রায় ‘অসম্ভব’ সমীকরণে পড়ে যায় ভারত। জিমি নিশাম এসে তৃতীয় বলে যুজবেন্দ্র চাহালকে তুলে নিয়ে নিশ্চিত করেছেন কিউইদের ফাইনাল।

সেমিফাইনালের এ ম্যাচটা মাঠে গড়িয়েছে গতকাল। বৃষ্টির জন্য ৪৬.১ ওভারে ৫ উইকেটে ২১১ রান তোলা নিউজিল্যান্ড আজ ইনিংস শেষ করেছে ২৩৯ রান তুলে। উইকেটে মুভমেন্ট থাকলেও এ রান তাড়া করা তেমন কঠিন হওয়ার কথা ছিল না ভারতীয় ব্যাটিংয়ের জন্য। কিন্তু সুইং সহায়ক কন্ডিশনের পুরো ফায়দা তুলে ৪ ওভারের মধ্যে ফিরিয়েছে ভারতের আগুনে ফর্মে থাকা তিন ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি ও রাহুলকে। এরপরই মেঘলা কন্ডিশনে চরম পরীক্ষায় পড়েছে ভারতের মিডল অর্ডার। দিনেশ কার্তিক, ঋষভ পন্ত, হার্দিক পাণ্ডিয়ারা জুটি গড়ার চেষ্টা করলেও আউট হয়েছেন ধৈর্য হারিয়ে।

শেষ পর্যন্ত বেঞ্চ গরম করা জাদেজা এসে জমিয়ে তুলেছেন ম্যাচ। সেমিফাইনালের আগে তাঁকে খেলানো হয়েছে শুধু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। আজ ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন ভীষণ চাপের মুহূর্তে। উইকেটের ধোনি তখন বরফশীতল। এক রান-এক রান নিয়ে খেলিয়েছেন জাদেজাকে দিয়ে। আর জাদেজা আস্কিং রেট কমানোর লক্ষ্যে করেছেন সুযোগের সদ্ব্যবহার। বাজে বল পেলে ছাড়েননি। দুজন জুটি বাঁধার সময় আস্কিং রান ছিল ৭.৬৮। ৪০তম ওভার শেষে সেটাই দাঁড়ায় ৯-এ। ৬০ বলে দরকার ৯০ রান। এখান থেকে ম্যাচ যে কারও হতে পারত। কিন্তু উইকেটে ‘ফিনিশিং’ মাস্টার ধোনি থাকায় এ সময় মানসিক লড়াইয়ে ভারতই কিছুটা এগিয়ে ছিল।

নিউজিল্যান্ড যে তাঁদের জুটি ভাঙার সুযোগ পায়নি তা নয়। জিমি নিশামের করা ৪৪তম ওভারে জাদেজার ক্যাচ নেওয়ার দুটি ‘হাফ চান্স’ পেয়েছে নিউজিল্যান্ড। হাওয়ায় ভাসা বল ফিল্ডারের তালুর নাগাল পায়নি। তখন তো আরও মনে হচ্ছিল, আজ জাদেজারই দিন। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ নেমে এসেছে দম আটকানো পরিস্থিতিতে। শেষ ১৮ বলে দরকার ছিল ৩৭ রান। ম্যাচের এ পর্যায়েও ধোনি যে প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশিই শান্ত ছিলেন সেটি বুঝিয়ে দেবে পরিসংখ্যান—৬৫ বলে ৩৮ রানে অপরাজিত।

এমন মুহূর্তেও সিঙ্গেল নিয়ে জাদেজাকে হাত খুলে খেলার সুযোগ করে দিয়েছেন ধোনি। ৪৮তম ওভারের পঞ্চম বলে জাদেজা ফিরলে আবারও চাপে পড়ে ভারত। এখান থেকে দলকে জেতানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ধোনি। কিন্তু ততক্ষণে বেশ দেরি হয়ে গেছে। ফার্গুসনের প্রথম বলে ছক্কা মারলেও ওভারপ্রতি গড়ে ২৩ রানের চাপটা নিতে পারেননি ধোনি। উল্টো, চাপের মুহূর্তে ভালো বল করে নিউজিল্যান্ডই বুঝিয়ে দিয়েছে, গত বিশ্বকাপ ফাইনালে হয়নি। এবার হবে না কেন!

৩৭ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন হেনরি। ৩৪ রানে ২ উইকেট মিচেল স্যান্টনারের। হেনরি শেষ পর্যন্ত ম্যাচ সেরা।

তবে ম্যাচসেরার পুরস্কারটা জাদেজা পেতেও পারতেন। বল হাতে কৃপণ ছিলেন, ৩৪ রানে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। আজ নিউজিল্যান্ডের তিন উইকেটের দুটিই তাঁর কৃতিত্ব। আগের দিনের অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়েছেন ফিল্ডার জাদেজা। রস টেলরকে সরাসরি থ্রোয়ে রানআউট করে দিয়ে। সীমানা প্রান্তে নেওয়া ল্যাথামের ক্যাচটাও ছিল চোখ ধাঁধানো। আজকের দিনটা জাদেজার হতে পারত। কিন্তু জাদেজা তখনো জানতেন না, ভাগ্যের নির্মম তলোয়ার বনবন ঘুরছে তাঁর স্বপ্নটাকেই কচুকাটা করতে!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *