Type to search

ভবদহের কেশবপুরে বোরো চাষের লক্ষে স্বেচ্ছশ্রমে ১৯৭টি পাম্প দিয়ে ৫০ টি বিলের পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ

যশোর

ভবদহের কেশবপুরে বোরো চাষের লক্ষে স্বেচ্ছশ্রমে ১৯৭টি পাম্প দিয়ে ৫০ টি বিলের পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ

জাহিদ আবেদীন বাবু, কেশবপুর(যশোর) থেকে ঃ
যশোরের দু:খ ভবদহ অঞ্চলের কেশবপুরে বোরো আবাদের লক্ষ্যে স্বেচ্ছাশ্রমে প্রায় ৫০টি জলাবদ্ধ বিলের পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন এলাকার কৃষকরা। উপজেলার ৩ ইউনিয়নের হাজার হাজার কৃষক ১৯৭ টি স্যালো মেশিন দিয়ে দিন রাত ২৪ ঘন্টা এ সেচ কার্য পরিচালনা করছেন। ঘটনাটি এক সপ্তাহ হতে চললেও এখনও প্রশাসনের কেউ ঘটনাস্থল পরদির্শন করেনি বলে এলাকার কৃষকরা জানান। শেষ পর্যন্ত সরকারিভাবে অর্থ সহায়তা না পেলে যখন তখন স্বেচ্ছাশ্রমে চলা ওই সেচ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এনিয়ে এলাকাবাসি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, কেশবপুর উপজেলার বর্ষার অতিরিক্ত পানি হরিহর, বুড়িভদ্রা, আপারভদ্রা নদী হয়ে শ্রীহরি নদীতে নিষ্কাশন হয়ে থাকে। কিন্তু এ উপজেলাকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে পাউবো নদী খাল পুণর্খননের উদ্যোগ নেয়। খননের স্বার্থে কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর অধিকাংশ জায়গায় বাঁধ দিয়ে পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ করে রাখে। এ কারণে উপজেলার অধিকাংশ বিল এখনও জলাবদ্ধ। এলাকার কৃষকরা বছরের একমাত্র ফসল বোরো আবাদের লক্ষ্যে তাই বাধ্য হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নেয়।
বুড়–লিয়া পানি নিষ্কাশন কমিটির সভাপতি ও সুফলাকাটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুনজুর রহমান জানান, পাঁজিয়া, সুফলাকাটি ও গৌরিঘোনা ইউনিয়নের প্রায় ৫০ বিলের পানি পাথরা ও বুড়–লিয়া গেট দিয়ে নিষ্কাশন হয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর নদীতে বাঁধের কারণে পানি সরছে না। সবকয়টি বিলে পানি থৈ থৈ করছে। আসন্ন বোরো মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যে তাই বাধ্য হয়ে কৃষক ও ঘের মালিকরা স্বেচ্ছাশ্রমে বিলের পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নেয়। এ উপলক্ষে পৃথক দুটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে পাথরা ও বুড়–লিয়া গেটে নির্মাণ করা হয়েছে ড্রেনসহ পানি ফেলার হাউজ। চলতি জানুয়ারী মাসের ১ তারিখ থেকে সেচকার্য শুরু করা হয়েছে। প্রতিদিন প্রতিটি মেশিন ৫’শ টাকা হারে ১৯৭ টি মেশিনের ভাড়া দিতে হয় ৯৮ হাজার ৫’শ টাকা করে। প্রতি ব্যারেল ডিজেল ১২ হাজার ৬৫০ টাকা হারে প্রতিদিন ৪৮ ব্যারেল ডিজেল লাগছে। সেই হিসেবে প্রতিদিন ডিজেল বাবদ ব্যয় হচ্ছে ৬ লাখ ৭ হাজার ২’শ টাকা। পাউবো ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে পানি নিষ্কাশনের আশ্বাস দিলেও তা ব্যর্থ হয়েছে।
পাথরা সেচ কমিটির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সরদার বলেন, এই সেচকার্য পরিচালনা করতে কৃষকরা বিঘাপ্রতি ৪’শ টাকা ও ঘের মালিকরা ৬’শ টাকা করে দিচ্ছেন। এভাবে দিন রাত মেশিন চললে ১৮ থেকে ২০ দিন লাগবে পানি নিষ্কাশন করতে। যেভাবে টাকা খরচ হচ্ছে তাতে শেষ মুহূর্তে অর্থাভাবে স্বেচ্ছাশ্রমে জলাবদ্ধ বিলের পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় কিনা তা নিয়ে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন এমনকি কৃষি বিভাগের কোন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এখনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেনি। পানি নিষ্কাশন সম্ভব না হলে লক্ষ্য মাত্রার অর্ধেক জমিতেও এবার বোরো আবাদ হবে না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা জানান, গত বছর ১৬ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। জলাবদ্ধতার কারণে এ বছর ১৫ হাজার হেক্টর জমি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ওই সমস্ত বিলের পানি নিষ্কাশন সম্ভব না হলে আবাদ অর্ধেকে নেমে আসবে। এ মুহূর্তে পানি নিষ্কাশন ও আবাদ সম্পর্কে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া ছাড়া তাঁর দপ্তর থেকে আর্থিক অনুদান দেয়া সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে গত ৯ জানুয়ারী মাসিক সম্বন্বয় কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান বলেন, স্বেচ্ছাশ্রমে পানি নিষ্কাশনের জন্যে সরকারিভাবে কোন অর্থ বরাদ্দ নেই। কৃষক যাতে বোরো আবাদ করতে পারে সে জন্যে নদীর বাঁধ অপসারণসহ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি জলাবদ্ধ বিল পরিদর্শন করেছেন