Type to search

বেসরকারি (এমপিও) শিক্ষক সমাজের বাজেট ভাবনা

শিক্ষা

বেসরকারি (এমপিও) শিক্ষক সমাজের বাজেট ভাবনা

বিলাল হোসেন মাহিনী

নতুন শিক্ষাক্রম প্রনীত হয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত দেশপ্রেমিক, উৎপাদনমুখী, অভিযোজনে সক্ষম সুখী ও বৈশ্বিক নাগরিক গড়ে তোলার’ রূপকল্পে বৈশ্বিক, জাতীয় ও সময়ের চাহিদা বিবেচনা করে। এই শিক্ষাক্রমের রয়েছে নানা শক্তিশালী ও ইতিবাচক দিকছ, কিন্তু সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে কি না, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন। সম্ভাবনাময় এই শিক্ষাক্রমটি বাস্তবায়নে যেসব চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে, সেগুলো কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হলে নানাবিধ ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সবচেয়ে বড় শঙ্কার জায়গা হলো এর বাস্তবায়ন-প্রক্রিয়া। গত দুই দশকে একাধিক শিক্ষাক্রম তৈরি করা হয়েছে, কিন্তু প্রতিবারই বাস্তবায়ন-প্রক্রিয়া হোঁচট খেয়েছে। শিক্ষকদের মানসম্মত প্রশিক্ষণ, তাদের জীবনমান উন্নয়ন তথা আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা সময়ের দাবি।
আমরা জানি, বাঙালি জাতির পিতার বিচক্ষণ শিক্ষানীতির ফলে তিনি শিক্ষকদেরকে শিক্ষার মূল চালিকা শক্তি হিসেবে বিবেচনা করে শিক্ষা জাতীয়করণ প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষানীতি ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশের শিক্ষা বিশ্বদরবারে উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হতো। এতোদিন প্রাথমিকের ন্যায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাও সরকারি হয়ে যেতো। এরপরও বর্তমান সরকার চাইলে শুধু প্রতিষ্ঠানে ব্যয় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা নিয়ে সেই অর্থের সুষম সমন্বয় করতে পারলে জাতীয়করণে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে না বলে মনে করেন গবেষকগণ। এছাড়াও একটা সমীক্ষায় উঠে এসেছে দেশের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রতি মাত্র দশ টাকা টিউশন ফি নিয়ে সেই অর্থ দিয়েও জাতীয়করণ সম্ভব। আমাদের দেশের বেসরকারি (এমপিও) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ নানাভাবে অবহেলিত। তারা সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ন্যায় একই শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক ও পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে পাঠদান করছেন। কিন্তু, সরকারি নিয়মে বেতন-ভাতাদি পাচ্ছেন না।
অন্যদিকে নানা আমলাতন্ত্রিক জটিলতায় দেশের শত শত প্রতিষ্ঠান এখনো এমপিও হতে পারেনি। এছাড়াও নানা জটিলতায় বেসরকারি কলেজের অনার্স লেভেলের শিক্ষকগণও বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত। অতীব দুঃখের কথা হলো, একজন মাস্টার্স পাশ এমপিও শিক্ষকের (বিএড বিহীন) প্রারম্ভিক বেতন স্কেল মাত্র ১২ হাজার ৫শ টাকা। এর সঙ্গে বাড়ি ভাড়া ১ হাজার টাকা এবং চিকিৎসা ভাতা ৫শ টাকা যোগ হয়। অপরদিকে ‘শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট’ এবং ‘অবসর সুবিধা বোর্ড’-এর ১০ শতাংশ টাকা কর্তন করে নেয়া হয়। সর্বসাকুল্য তিনি মাসিক বেতন পান মাত্র ১২ হাজার ৭৫০ টাকা মাত্র। এই সামান্য বেতনে কিভাবে একজন মানুষের ৫সদস্যের সংসার চলতে পারে। যেখানে সিডিপি ও অন্যান্য সংস্থার তথ্যমতে, দেশের একজন মানুষের স্বাস্থ্যকর খাবারের জন্য দৈনিক প্রয়োজন ২৭৬ টাকা। সে হিসেবে ৫ সদস্যের একটা পরিবারের মাসিক ন্যূনতম খরচ ৪০হাজার টাকা।

বাজেট ভাবনা : শিক্ষার গুণগত মান বজায় রাখা ও নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে বেসরকারি (এমপিও) শিক্ষকদের দাবি সমুহ :
ক) দেশের সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য শুণ্যের কোঠায় নিয়ে আসতে হবে। খ) উন্নত ও মান সম্মত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। গ) সরকারি নিয়মে বেতন, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা দিতে হবে। ঘ) পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দিতে হবে। ঙ) প্রচলিত ‘শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট’ এবং ‘অবসর সুবিধা বোর্ড’ বিলুপ্ত করে সরকারি নিয়মে পেনশন স্কিম চালু করতে হবে। চ) শিক্ষকদের অর্থিক সাপোর্ট ও গৃহনির্মান ঋণসহ সব ধরণের ঋন বা আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে ‘শিক্ষা ব্যাংক’ চালু করতে হবে। ছ) সরকারি কলেজের নিয়মে প্রভাষকদেরকে পূর্ণাঙ্গ অধ্যাপক পদে পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে। জ) শিক্ষা খাতে অবশ্যই জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ২০ শতাংশ বরাদ্দ রাখতে হবে। আসছে বাজেটে শিক্ষা ও শিক্ষকদের জীবন-মান উন্নীত করতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

বিলাল হোসেন মাহিনী
প্রভাষক : গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা, যশোর ও পরীক্ষক : ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা