বাংলাদেশ এগিয়ে গেলে তাদের ভালো লাগে না : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

পাকিস্তানিদের পদলেহনকারীর দল এখনো বাংলাদেশে জীবিত আছে, এটা সব থেকে দুঃখজনক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখনো তারা বাংলাদেশের ভালো কিছু হলে ভালো চোখে দেখে না। বাংলাদেশ এগিয়ে গেলে তাদের ভালো লাগে না।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করেছি সেটা নিয়েও সমালোচনা, এত টাকা দিয়ে স্যাটালাইট করে কী হবে? এই প্রশ্নও কিন্তু তুলেছে তারা। অর্থাৎ বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু করলে তাদের গায়ে লাগে। কেন? তাহলে তারা কি এখনো সেই পাকিস্তানি সামরিক জান্তাদের পদলেহনকারী, খোশামোদি, তোষামোদির দল? গালিটালি দিই না, দেওয়ার রুচিও নাই। তবে একটু না বলে পারি না। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে বাংলাদেশের মেয়েদের ওপর অত্যাচার করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে, অগ্নিসংযোগ করেছে, পোড়ামাটি নীতি নিয়ে বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল; সেই পাকিস্তানিদের পদলেহনকারীর দল এখনো বাংলাদেশে জীবিত আছে, এটা সব থেকে দুঃখজনক।
১৮ মে বুধবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কানফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতুর অর্থ বন্ধ করালো ড. ইউনুস। কেন? গ্রামীণ ব্যাংকের একটা এমডির পদে তাকে থাকতে হবে। তাকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম গ্রামীণ ব্যাংকের উপদেষ্টা হতে। একটা উপদেষ্টা হিসেবে থাকার জন্য আরও উচ্চ মানের। সেটা সে ছাড়বে না তার এমডিই থাকতে হবে। কিন্তু তার বয়সে কুলায় না। ড. ইউনুস কিন্তু আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল। কিন্তু কোর্ট আর যাই পারুক, তার বয়স তো কমিয়ে দিতে পারে না ১০ বছর। কারণ গ্রামীণ ব্যাংকের আইনে আছে ৬০ বছর পর্যন্ত থাকতে পারে। তখন তার বয়স ৭১ বছর। এই বয়সটা কমাবে কীভাবে? সেই মামলায় সে হেরে যায়। কিন্তু প্রতিহিংসা নেয়।
তিনি বলেন, ড. ইউনুস এবং যেটা আমরা শুনেছি মাহফুজ আনাম, তারা আমেরিকায় চলে যায়। স্টেট ডিপার্টমেন্টে যায়। হিলারির কাছে ইমেইল পাঠায়। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মি. জোলি যিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন তার শেষ কর্মদিবসে কোনো বোর্ড সভায় পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেয়। যাক, একদিকে সাপে বর হয়েছে। কেন হয়েছে? বাংলাদেশ যে নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করতে পারে সেটা আজকে আমরা প্রমাণ করেছি। কিন্তু আমাদের এখানের একজন জ্ঞানী লোক বলে ফেললেন যে পদ্মা সেতুতে যে রেল লাইন হচ্ছে ৪০ হাজার কোটি টাকার খরচ হচ্ছে। ৪০ হাজার কোটি টাকা তো ঋণ নিয়ে করা হচ্ছে। এই ঋণ শোধ হবে কীভাবে? দক্ষিণবঙ্গের কোনো মানুষ তো রেলে চড়বে না। তারা তো লঞ্চে যাতায়াত করে। তারা রেলে চড়তে যাবে কেন? এই রেল ভায়াএবল হবে না।
সরকার প্রধান বলেন, সেতুর কাজ হয়ে গেছে এখন সেতু নিয়ে কথা বলে পারছে না। এখন রেলের কাজ চলছে, এখন রেলের কাজ নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছেন। আমার মনে হয় আমাদের সবার ওনাকে চিনে রাখা উচিত। রেল গাড়ি যখন চালু হবে তখন ওনাকে নিয়ে রেলে চড়ানো উচিত। আর খালেদা জিয়া বলেছিল, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে। কারণ বিভিন্ন স্প্যানগুলো যে বসাচ্ছে ওটা ছিল তার কাছে জোড়াতালি দেওয়া। বলেছিল, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, ওখানে চড়া যাবে না, চড়লে ভেঙে পড়বে। তার সঙ্গে তার কিছু দোসররাও। এখন তাদের কী করা উচিত?
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে টুস করে নদীতে ফেলে দেওয়া উচিত। আর যিনি আমাদের একটা এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতুর মতো সেতুর টাকা বন্ধ করেছে তাকেও আবার পদ্মা নদীতে নিয়ে দুইটা চুবানি দিয়ে উঠাইয়া নেওয়া উচিত। মরে যাতে না যায়। একটু পদ্মা নদীতে দুইটা চুবনি দিয়ে সেতুতে তুলে দেওয়া উচিত। তাহলে যদি এদের শিক্ষা হয়। বড় বড় অর্থনীতিবিদ, জ্ঞানী-গুণি এই ধরনের অর্বাচিনের মতো কথা বলে কীভাবে? সেটাই আমার প্রশ্ন। মেগা প্রজেক্টগুলো করে না কী খুব ভুল করছি। তারা আয়েশে বসে থাকে আর আমার তৈরি করা সব টেলিভিশনে গিয়ে কথা বলে। বিদ্যুৎ সরবরাহ করি। সেই বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে।
সরকার প্রধান বলেন, আজকের বাংলাদেশে আমরা ২০০৯-এর পরে যে সরকার গঠন করেছি তার পরেও আমাদের কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি। অগ্নি সন্ত্রাস করে বিএনপি জীবন্ত মানুষগুলোকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মারে। পেট্রোল বোমা মারে। আমরা রাস্তাঘাট বানাই, তারা রাস্তাঘাট কাটে। আমরা বৃক্ষরোপণ করি তারা গাছ কাটে। এভাবে দেশকে তারা বার বার ধ্বংসের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। সরকার উৎখাত করার উদ্যোগ নিয়েছে তারা। আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। তাদের ডাকে তো জনগণ সাড়া দেয়নি।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে। ওই দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় এবং একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়া। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়েছিল জীবনে কোনো দিন রাজনীতি করবে না। এ মুচলেকা দিয়েই কিন্তু দেশ ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু এই মামলায় বিচারের রায়ে সে সাজাপ্রাপ্ত। এতিমের অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া। কারাগার থেকে এখন বাসায় থাকার সুযোগ দিয়েছি, অসুস্থ সে জন্য। এইটুকু মানবিকতা দেখিয়েছি, যে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে বার বার, তাকেই আমি এই করুণা ভিক্ষা দিয়েছি যে সে এখন বাসায় থাকতে পারে। সাজাপ্রাপ্ত আসামিও এখন বাসায় থাকতে পারে- এটা নির্বাহী আদেশেই দেওয়া হয়েছে।
সরকার প্রধান বলেন, আমার এখানে একটা প্রশ্ন, আজকে বিএনপি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে। বিএনপির আমলে নির্বাচনের ইতিহাস এতই কলুষিত যে তাদের তো এ নিয়ে কথা বলার অধিকারই নেই। কোন মুখে তারা বলে? ঢাকা-১০ এ ফালু ইলেকশন করেছিল সেই ইলেকশনের চিত্র নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। মাগুরা ইলেকশন, যে ইলেকশন নিয়ে আমরা আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে উৎখাত করলাম। মিরপুর ইলেকশন, প্রত্যেকটা সময় তো আমরা দেখেছি তাদের ইলেকশনের চিত্র। আর এমনিতে সেই ৭৭-এর হ্যাঁ/না, ৭৮-এর রাষ্ট্রপতি, ৭৯-র সাধারণ নির্বাচন, ৮১-র নির্বাচন। প্রত্যেক নির্বাচনই তো আমাদের দেখা। ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন। যাদের নির্বাচনের এত কলুষিত হওয়ার রেকর্ড, তাদের মুখে এখন নির্বাচনের প্রশ্ন।
তিনি বলেন, আজকে নির্বাচনের যতটুকু উন্নতি আমরা করেছি সেগুলো আমাদেরই সিদ্ধান্ত, আমাদেরই চিন্তা। ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ইভিএম- একটা আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে এর সব কিছু তো আমরা করেছি। নির্বাচনে যাতে মানুষ ভোট দেওয়ার অধিকার পায়, সে অধিকারটাই তো সব থেকে বড়। সেটাই আমরা করতে চেয়েছি। এটা নিয়ে তো তাদের প্রশ্ন তোলার কোনো অর্থই হয় না। কারণ আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে। গণতান্ত্রিক অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে। এটাই হচ্ছে সব চেয়ে বড় শক্তি। সেই শক্তিটা আছে বলেই এবং জনগণের শক্তিতে আমরা ক্ষমতায় আছি বলেই জনগণের কল্যাণে কাজ করতে পেরেছি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়ার আমলে, জিয়ার আমলে, এরশাদের আমলে তাদের কী কথা বলার কোনো সুযোগ ছিল? কতটুকু অধিকার ভোগ করতো তারা? বেসরকারি টেলিভিশন এত দিয়ে দিয়েছি যে সারা দিন রাত টকশো করে। আমি মাঝে মাঝে বলি এত টক টক কথা না বলে একটু মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেন। কত আর টক টক কথা বলবেন। টকশো তারা করে যাচ্ছে। কেউ তো তাদের গলা চিপে ধরে নাই। মুখ চেপেও ধরি না। কথা বলেই যাচ্ছে। তবে হ্যাঁ, সব কথা বলার শেষে বলে কথা বলতে দেওয়া হয় না।
তিনি বলেন, আমাদের বিএনপির এক নেতা তো সারা দিন মুখে মাইক লাগিয়েই আছে। সারাক্ষণ কথা বলেই যাচ্ছে। একবার কথা বলতে বলতে গলায় অসুখও হলো। যাক, চিকিৎসা করে এসে আবার কথা বলছে। তার কথা তো কেউ বন্ধ করছে না। তাদের আন্দোলনে যদি জনগণ সাড়া না দেয়, সে দোষটা কাদের?।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে যে অর্থনীতিবিদ কথা বলছেন তাকে আমি বলবো তিনি কি এটা প্রকৃততথ্য জেনেই বলছেন না জেনে? আমি তার জ্ঞান নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলবো না, তারা অনেক ভালো লেখাপড়া জানেন। কিন্তু একটা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পেয়ে মানুষের একটা জাতির যে কতটুকু উন্নতি হতে পারে সেটা আজকের বাংলাদেশ। বাংলাদেশের উন্নয়নটা বাইরের লোকও দেখে কিন্তু তারা দেখে না।
সূত্র : ঢাকা পোস্ট