Type to search

বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় এবার চতুর্থ ঢাকা

বাংলাদেশ

বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় এবার চতুর্থ ঢাকা

অপরাজেয়বাংলা ডেক্স: বিশ্বের বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় এবারো ঢাকার অবস্থান একেবারে শেষের দিকে। তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সূচক বিবেচনায় নিয়ে দেশগুলোকে শূন্য থেকে ১০০ নম্বর দেয়া হয়। সেখানে সব মিলিয়ে ঢাকা পেয়েছে সাড়ে ৩৩। আক্ষরিক অর্থে পাস নম্বর পেলেও তালিকার তলানিতেই রয়ে গেছে বাংলাদেশের রাজধানী। ১৪০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৩৭তম। স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা আর অবকাঠামো—এ পাঁচটি সূচকের ভিত্তিতে বিশ্বের বসবাসযোগ্য শহরের তালিকা তৈরি করেছে লন্ডনভিত্তিক গণমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্টের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)। এ তালিকায় সবার ওপরে জায়গা করে নিয়েছে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড। আর সবার শেষে জায়গা পেয়েছে সিরিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর দামেস্ক।

তালিকাটি তৈরিতে যেসব সূচক বিবেচনায় নেয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ঢাকায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা। এ সূচকে ঢাকার স্কোর ১০০-এর মধ্যে ১৬ দশমিক ৭। সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের প্রাপ্যতা, স্বাস্থ্যসেবার মান, প্রয়োজনীয় ওষুধের সহজলভ্যতার পাশাপাশি সাধারণ স্বাস্থ্য সূচকগুলোর ভিত্তিতে ঢাকাকে এ স্কোর দিয়েছে ইআইইউর গবেষণা দল। অন্যদিকে অবকাঠামোর সূচকে ঢাকা পেয়েছে ২৬ দশমিক ৮। একইভাবে সংস্কৃতি ও পরিবেশে ৩০ দশমিক ৮ ও শিক্ষায় ঢাকার স্কোর ৩৩ দশমিক ৩। ঢাকা সবচেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে স্থিতিশীলতার সূচকে, সেখানে স্কোর ৫৫।

২০১৯ সালে এ তালিকায় ঢাকা ছিল শেষের দিক থেকে তৃতীয়। তার আগের বছর দ্বিতীয়। আর এবার শেষ থেকে চতুর্থ। র্যাংকিংয়ে উন্নতি হলেও এ সময়ের মধ্যে ঢাকার স্কোর মারাত্মকভাবে কমছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ইআইইউ রিপোর্টে ২০১৯ সালে আমাদের স্কোর ছিল ৩৯ দশমিক ২। এ বছর পেয়েছি ৩৩ দশমিক ৫। মারাত্মকভাবে আমাদের পারফরম্যান্স কমেছে। ইআইএর স্কোরে যেসব শহর ৫০-এর নিচে পায়, সেগুলোই চরম অবাসযোগ্য শহর হিসেবে গণ্য করা হয়।

ব্যাপক জনঘনত্ব, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, অপ্রতুল অবকাঠামো, অনিয়ম-অব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের রাজধানী শহরটি বৈশ্বিক বসবাসযোগ্যতার সূচকে পেছনের কাতারে রয়েছে উল্লেখ করেন এ পরিকল্পনাবিদ। তিনি বলেন, আমাদের বসবাসযোগ্যতা দিন দিন তলানির দিকে যাচ্ছে। এর অন্যতম বড় কারণ হলো, বিগত বছরগুলোতে আমরা যেসব পরিকল্পনা করেছি, সেগুলো বাস্তবায়িত হয়নি। পাশাপাশি যেসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে, সেসব উন্নয়নের বলি হয়েছে সবুজ এলাকা ও জলাশয়গুলো। ঢাকার সবুজ এলাকা কমছে, জলাশয়গুলো দ্রুত ভরাট ও দখল হয়ে যাচ্ছে। ঢাকার শিল্পায়ন অপরিকল্পিতভাবে হওয়ার ফলে বায়ু ও নদী দূষিত হয়ে পড়েছে। এ সূচক আসলে আমাদের বাস্তব চিত্রকেই তুলে ধরেছে। তবে এ সূচকে যে বিষয়টি খুব বড় করে দেখানো দরকার ছিল সেটা হলো—আমাদের এ নগরে অসংখ্য মানুষ বসবাসের অযোগ্য ভবনে বাস করছে। কয়েকদিন আগেও মহাখালীর বস্তিতে আগুন লেগে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানসম্মত সাশ্রয়ী আবাসনও আমরা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছি। এ অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে আমাদের অবকাঠামোগত প্রকল্পের বদলে পরিবেশসম্মত উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে। ঢাকা শহরের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। একটি শহর বাসযোগ্য কিনা, তা নির্ধারণে জনঘনত্বও বড় ব্যাপার। এ জায়গায় ব্যর্থ হলে সব পরিকল্পনাই ব্যর্থ হবে বলেও মনে করেন তিনি।

চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত জরিপ চালিয়ে এবারের বসবাসযোগ্য শহরের তালিকা তৈরি করেছে ইআইইউ। তালিকা করতে গিয়ে স্বভাবতই বড় প্রভাবক হয়ে দাঁড়ায় চলমান করোনা মহামারী। ইআইইউ বলছে, যেসব দেশ কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে মহামারী নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে, সেসব দেশের শহরগুলো বসবাসযোগ্যতায় উন্নতি করেছে বেশি।

করোনা মহামারীর শুরু থেকেই সীমান্ত বন্ধ করে সংক্রমণ সীমিত পর্যায়ে রাখতে সমর্থ হয় নিউজিল্যান্ড। ফলে দেশটিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, থিয়েটার, রেস্টুরেন্টের মতো সামাজিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চালু ছিল। এসবের সুফল হাতেনাতে পেয়েছে দেশটি। ২০২০ সালের জরিপে ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড চলতি বছর শীর্ষে স্থান করে নিয়েছে। শহরটি শিক্ষা সূচকে পুরো ১০০ স্কোর পেয়েছে। সব মিলিয়ে শহরটির স্কোর ৯৬। একইভাবে তালিকায় চতুর্থ স্থানে উঠেছে দেশটির আরেক শহর ওয়েলিংটন। অন্যদিকে জাপানের ওসাকা ও টোকিও, অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড, পার্থ, মেলবোর্ন, ব্রিসবেন, সুইজারল্যান্ডের জুরিখ ও জেনেভাও মূলত করোনা মহামারী সফলভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখার কারণেই বসবাসযোগ্যতার তালিকায় শীর্ষ দশে স্থান করে নিয়েছে।

২০২০ সালের জরিপে বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় সবার ওপরে ছিল অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা। তবে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে ব্যর্থ শহরটি এবার শীর্ষ ১০ থেকেই ছিটকে গেছে। এবার শহরটির অবস্থান ১২ নম্বরে।

বিপরীতে গত কয়েক বছরের মতো এবারো তালিকায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে সিরিয়ার দামেস্ক। যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরটিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, সামাজিক স্থিতিশীলতার মতো বিষয়গুলো এখনো ভঙ্গুর অবস্থায় থাকায় তালিকার তলানিতেই রয়েছে শহরটি।

বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে নাইজেরিয়ার লেগোস, পাপুয়া নিউগিনির পোর্ট মোরসবি। অন্যদিকে বাংলাদেশের ওপরে রয়েছে আলজেরিয়ার আলজিয়ার্স, লিবিয়ার ত্রিপোলি, পাকিস্তানের করাচি, জিম্বাবুয়ের হারারে, ক্যামেরুনের দৌয়ালা ও ভেনিজুয়েলার কারাকাস।সূত্র,বনিকবার্তা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *