Type to search

পেঁযাজের ঝাজ বেড়েই চলেছে

কৃষি

পেঁযাজের ঝাজ বেড়েই চলেছে

আব্দুল্লাহ সুমন-  পেঁয়াজ দেশের অন্যতম কৃষিপণ্য। এটি একদিকে যেমন মসলাজাত খাদ্যশস্য, তেমনি আরেক দিকে অর্থকরী শস্য। কৃষক তাঁর উৎপাদনের উদ্বৃত্ত পেঁয়াজ বাজারজাত করার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে থাকেন।

দেশে বর্তমানে পেঁয়াজের মোট চাহিদা ২৬ লাখ টন। এর মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ লাখ টন বা মোট চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ জোগান দিয়ে থাকে দেশের কৃষক তাঁদের উৎপাদনের মাধ্যমে এবং অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ মেটানো হয় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, মিয়ানমার বা অন্যান্য দেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে। দেড় মাস ধরে দেশে পেঁয়াজের বাজার বেশ অস্থির। পেঁয়াজের বাজার অস্থির হওয়ার কারণ হচ্ছে গত ১২ সেপ্টেম্বর ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির মূল্য বেঁধে দেয় প্রতি টন ৮৫০ ডলার এবং পরবর্তী সময়ে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়।

 ওই ঘটনার পর থেকে বাজার এতটাই অস্থির হয় যে গত ১৩ সেপ্টেম্বর প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম যেখানে ছিল ৪৫ টাকা, দেড় মাসের ব্যবধানে সেটি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১২০ টাকা। শুধু এক মাসে মূল্য বৃদ্ধি পায় ৬১ শতাংশ।

উৎপাদন ও বিক্রির তথ্য বিশ্লেষণে লক্ষণীয় যে কৃষকের পেঁয়াজ উৎপাদনে লাভ দূরের কথা, লোকসান হয়েছে ব্যাপক। সাম্প্রতিক কালে পেঁয়াজের এই বাজার বিশ্লেষণে আরও লক্ষণীয় যে একদিকে কৃষককে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে এবং অন্যদিকে অস্বাভাবিক মূল্য ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে ক্রয় করতে হচ্ছে ভোক্তাসাধারণকে।

উৎপাদকের বিক্রয়মূল্য এবং ভোক্তাপর্যায়ের ক্রয়মূল্যের মধ্যে এই বিশাল পার্থক্যের কারণ পেঁয়াজ জোগানদানকারীর ব্যয় বৃদ্ধি নয়, চাহিদার বৃদ্ধি নয়, শুধু ভবিষ্যৎ সংকটের আশঙ্কায় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সুযোগ নিচ্ছেন বিভিন্ন স্তরের মধ্যস্থ কারবারি, যেমন পাইকারি বিক্রেতা, আড়তদার, খুচরা বিক্রেতা ইত্যাদি।

পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের তেমন অসুবিধা হচ্ছে না। কারণ, তাঁরা তাঁদের পারিবারিক ব্যয়ের ক্ষুদ্র একটি অংশ ব্যয় করেন এর পেছনে কিন্তু দরিদ্র ও অতিদরিদ্রদের জন্য এটি খুবই পীড়াদায়ক। আরও উল্লেখ্য, যে কৃষক রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে উৎপাদন করছেন, সেই কৃষক পাচ্ছেন না দাম। ভোক্তা, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের ভোক্তার অক্লান্ত পরিশ্রমে উপার্জিত সামান্য রোজগার থেকে অধিক মূল্যে কিনতে হচ্ছে পেঁয়াজ। পক্ষান্তরে শুধু কারসাজি করে, মানুষকে জিম্মি করে, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অস্বাভাবিক মুনাফা করছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা।

পেঁয়াজ-বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত তিন শ্রেণি, অর্থাৎ উৎপাদক বা কৃষক, ভোক্তা ও ব্যবসায়ী এর মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে কৃষকের নেই কোনো সংগঠন বা জোটবদ্ধতা। ভোক্তাদের একটি সংগঠন থাকলেও ততটা কার্যকর বা সংগঠিত নয়। কিন্তু ব্যবসায়ী মধ্যস্বত্বভোগীরা জোটবদ্ধ এবং তাঁরা বেশ সংগঠিত। বিরাজমান অর্থনৈতিক এ অবস্থায় দেশের কৃষক এবং নিম্ন আয়ের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল থেকে।

কৃষক ও সমস্তরের বঞ্চিত মানুষের নিম্ন আয় আর অবৈধভাবে অর্জিত উচ্চ আয়ের যোগফলের গড় থেকে নির্ণিত মাথাপিছু আয়ে বেশ সফলতা দেখা গেলেও অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলেছে বৈষম্য। পেঁয়াজের বাজারে সৃষ্ট এ অস্থিরতা খুব সহজে সমাধানযোগ্য।

কারণ, যে কৃষক ৬০ শতাংশের বেশি জোগান নিশ্চিত করছেন, তাঁকে একটু সহায়তা করলে এবং ন্যায্যমূল্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারলে কৃষকের পক্ষে চাহিদার শতভাগ জোগান সম্ভব হবে। আমদানির ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না। তবে তার জন্য প্রয়োজন উৎপাদিত কৃষিপণ্যের সংরক্ষণের সুব্যবস্থা, ভোক্তা সংগঠনকে সহায়তার মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করা এবং মজুতদারি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।

সবশেষে পেঁয়াজের বাজারের এই অস্থিরতা রোধের উপায় হিসেবে সর্বসাধারণের দৃষ্টি এখন শুধু বাজারে আসন্ন মৌসুমের পেঁয়াজের প্রতি। এককথায় কৃষকের ওপরই নির্ভরশীলতা। কিন্তু অতীতের মতো কৃষক যেন বঞ্চিত না হন, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *