Type to search

নড়াইলে বৃদ্ধ খুন ৭২ ঘন্টা পর থানায় মামলা ১৫ জন আসামি

জাতীয়

নড়াইলে বৃদ্ধ খুন ৭২ ঘন্টা পর থানায় মামলা ১৫ জন আসামি

নড়াইল প্রতিনিধি,মির্জা মাহামুদ :নড়াইলের বাশগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য কামাল প্রতাপ গ্রামের ৭৫ বয়সী বৃদ্ধ রাজ্জাক মল্লিক হত্যাকান্ডের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। বুধবার (২৭ আগষ্ট) রাতে নিহতের ছোট ছেলে রফিকুল মল্লিক বাদী হয়ে ১৫জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন (মামলা নং-১৪)। এদিকে পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে দুজনকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। জানাগেছে, গত ২৪ আগষ্ট রাত ৮টার দিকে বৃদ্ধ রাজ্জাক মল্লিক বাড়ির পূর্বপোতার ঘরে কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া-কালাম পড়ছিলেন। এসময় দুবৃত্তরা রাজ্জাক মল্লিকের ঘাড়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। ঘটনার সময় তার স্ত্রী হাসনা হেনা (৬৫) পাশ^বর্তী বাড়িতে পানি আনতে গিয়েছিলেন। ৮/১০ মিনিট পর বাড়িতে ফিরে এসে তার ৬ বছর বয়সী পুতা ছেলে এশরাকের কাছ থেকে জানতে পারেন বৃদ্ধ স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। এসময় স্ত্রীর চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। নিহতের স্ত্রী হাসনা হেনা (৬৫) বলেন, ‘গত ২৪ আগষ্ট ৮টার দিকে আমি বাড়ির দক্ষিণপাশে গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে টিউবয়েলে পানি আনতে যাই। পানি নিয়ে ফিরে আসতে ৮/১০ মিনিট সময় লাগে। পানি নিয়ে ফিরে আসার পর আমার পুতা ছেলে এশরাক (৬) জানায়, তার দাদাকে কুপিয়ে মেরে ফেলেছে। তখন গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। এসময় আমি চিৎকার ও কান্নাকাটি করলে আশেপাশের বাড়ির লোকজন দৌড়ে আসে। আমার স্বামীকে মেরে ফেলার পরও তিনি কোরআন শরীফটি বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলেন। জায়নামায রক্তে ভিজে গিয়েছিলো। কয়েক মাস আগে আমাদের গ্রামে একটি মার্ডার হয়। ওই মার্ডার কেসে আমার ছেলে রবিউলকে ষড়যন্ত্রমূলক বিনা অপরাধে আসামী করা হয়। এছাড়া আমাদের বাড়িঘর প্রতিপক্ষের লোকজন ভাংচুর ও লুটপাট করার কারনে দুই ছেলে রবিউল ও রফিকুল লোহাগড়ায় বাসা ভাড়া করে থাকেন এবং ব্যবসা করেন। আমাদের বাড়িঘর যারা ভাংচুর করেছে তারাই আমার স্বামীকে মেরে ফেলেছে।’ আমি তাদের বিচার চাই। নিহতের ছেলে মামলার বাদী রফিকুল মল্লিক দাবি করেন, ‘ আমার ছেলে এশরাক (৬) আমার আব্বা হত্যকান্ডে প্রত্যক্ষদর্শী। আমাদের এলাকার মানুষ কমবেশি সে চেনে। সে খুনিদের চিনতে পেরেছে এবং আমাকে বলেছে। তবে এখনই আমি নাম বলবো না। আমাদের এলাকার তিনটি গ্রাম নিয়ে দলাদলি। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন কাশেম খা এবং আমাদের আমাদের গ্রুপের নেতৃত্ব দেন নাইস খা। আমার আব্বা দীর্ঘদিন ধরে সমাজে নেতৃত্ব দিয়েছে। প্রতিপক্ষরা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের হত্যার হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। হয়তো আমাদের দুই ভাইকে মারার জন্য এসেছিলো। কিন্তু আমাদের না পেয়ে আব্বাকে মেরেছে। আমরা ঘটনার সাথে জড়িতদের আটকসহ উপযুক্ত শাস্তি চাই বিচার চাই।’ অপর ছেলে রবিউল মল্লিক বলেন, ‘ এক সময়ে সামাজিক দলাদলি এবং ইউনিয়নের মেম্বর ছিলেন। আমার আব্বার কাজকর্ম করার কোন সক্ষমতা এখন আর নেই। তিনি নামায-কালাম পড়ে আর কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করে সময় কাটান। আমি এই গ্রামের শাফি মোল্যা হত্যা মামলার আসামী। আমাকে বিনা কারনেই আসামী করা হয়েছিলো। এখন আমি লোহাগড়ায় ব্যবসা করি এবং বাসা ভাড়া করে থাকি।আমার আব্বাকে যারা হত্যা করেছে তাদের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। এদিকে ঘটনার পরের দিন ২৫ আগষ্ট নিহতের ময়নাতদন্ত নড়াইল সদর হাসপাতালে সম্পন্ন হয়। বাদ আসর কামাল প্রতাপ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাযা শেষে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নড়াইল সদর থানার ওসি (অপারেশন) শিমুল কুমার দাস জানান,হত্যাকান্ড সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত রাজ্জাক মল্লিকের ছেলে রবিউল মল্লিক, তাদের পক্ষীয় কামলা প্রতাপ গ্রামের রশিদ মল্লিকের ছেলে নাজমুল হোসেন ও আমাদা ওহিদার অহিদার খানের ছেলে নাইচ খানকে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে নিহতের ছেলে রবিউল মল্লিককে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে নাজমুল হোসেন ও নাইচ খানকে জিজ্ঞাসাবাদের পর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। নড়াইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইলিয়াছ হোসেন (পিপিএম) জানান, মামলাটি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করি হত্যাকান্ডের সাথে যারা জড়িত আছে তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত আছে। ### নড়াইল প্রতিনিধি/মির্জা মাহামুদ রন্টু/০১৭২৫৭১৫৬৪০তাং- ২৮/০৮/২০২০ ইং

Tags:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *