Type to search

নেশার জগতে নতুন নাম ‘ঝাঁকি’

জাতীয়

নেশার জগতে নতুন নাম ‘ঝাঁকি’

আকাশ, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহী নগরীর নেশার জগতে ফেনসিডিল, ইয়াবার পাশাপাশি স্থান করে নিয়েছে ‘ঝাঁকি’। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সর্দি-কাশির সিরাপ সিনামিন এবং ব্যথানাশক সেন্ট্রা ট্যাবলেটের সংমিশ্রণে তৈরি হচ্ছে ‘ঝাঁকি’। যেহেতু ঝাঁকিয়ে এ দুটি ওষুধের মিশ্রণে তৈরি হচ্ছে সেহেতু এই নেশাদ্রব্যের নাম মাদকসেবীরা রেখেছে ‘ঝাঁকি’। আর এই নাম ব্যবহারে সুবিধা হয়েছে বিক্রেতা এবং গ্রাহক ছাড়া অন্য কেউ বুঝতে পারছে না, এটা কি। বর্তমানে নগরীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় এর ব্যাপকতা ছড়িয়ে পড়েছে। উঠতি বয়সীদের মধ্যে এর ব্যাপক প্রচলন দেখা গেছে। মাদক বিক্রেতারা কিছু ফার্মেসি থেকে এ ওষুধ দুটি নিয়ে বিক্রি করছে মাদকসেবীদের নিকট। এ দুটি ওষুধের দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় ক্রমেই মাদকসেবীদের নিকট এই নেশা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জানা গেছে, ফেনসিডিল, হেরোইন এবং ইয়াবার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মাদকাসক্তরা ঝুঁকছে ঝাঁকির দিকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২২ টাকা দামের সর্দি-কাশির ওষুধ সিনামিন সিরাপে ২৫ টাকা দামের সেন্ট্রা ট্যাবলেটের মিশ্রণে তৈরি করা হচ্ছে নতুন এই মাদক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগরীর একজন ওষুধ ব্যবসায়ী জানান, সেন্ট্রা ট্যাবলেট বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ কারণে সেন্ট্রা ট্যাবলেট ২৫ টাকায় পাওয়া যায় না। পরিস্থিতি ভেদে ২৫ টাকার এই ট্যাবলেট বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। এতে প্রকৃত কোন ওষুধ ব্যবসায়ীর কাছে এই ট্যাবলেট পাওয়া যাবে না। পাড়া মহল্লার কোন কোন ফার্মেসিতে বেশি লাভের আশায় নিষিদ্ধ জেনেও তা বিক্রি হচ্ছে। নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদকসেবীর বর্ণনা মতে, যেখানে সেখানে দাঁড়িয়েই এই নেশাদ্রব্য পান করা সহজ। এজন্য নগরীর মোড়ে মোড়ে মাদককারবারিরা তা অবলীয়ায় যেমন বিক্রি করছে, তেমনি মাদকসেবীরাও তা সহজেই সেবন করছে। ওই মাদকসেবীর মতে, ক্রমেই বাড়ছে ঝাঁকি সেবনকারীর সংখ্যা। এর ক্ষতির দিক সম্পর্কে সচেতন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কাশির সিরাপের সাথে ব্যথার ট্যাবলেট দুটিই তো ওষুধ। এর আর ক্ষতি কি! আর নেশা মানেই তো ক্ষতি। ক্ষতি জেনেই মানুষ নেশা করে। নেশায় এর ভাল-মন্দ বিচার করার সময় কোথায়। এদিকে, রাজশাহী মহানগরীর প্রায় সকল পাড়া-মহল্লায় অনেকটা খোলা মেলা এবং প্রকাশ্যেই চলছে মাদক ক্রয়-বিক্রয় ও সেবন। মাদকের বিস্তাররোধে জেলা আইন-শৃংখলা কমিটির এমন কোন সভা নেই যেখানে আলোচনা হয় না। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন তেমন নজরে আসে না। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তির আশ্রয় প্রশ্রয়ে মাদকব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অসাধু ওই চক্রের সাথে সাপ্তাহিক এবং মাসিক চুক্তির ভিত্তিতে মাদকব্যবসায়ীরা অনেকটা নিরাপদেই চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ব্যবসা। বিভিন্ন ধরনের মাদক সেবন করে থাকে এমন কয়েজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে মাদকের জগতে এখন শীর্ষে রয়েছে ফেনসিডিল এবং ইয়াবা। ফেনসিডিলের পাশাপাশি ইয়াবা সেবনে রয়েছে অন্য রকম ফিলিংস। তবে ফেনসিডিল ও ইয়াবার দাম বেশি হওয়ায় এবং হেরোইনে ভেজালের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় অপেক্ষাকৃত কম দামের ঝাঁকির নেশার দিকে আগ্রহ বাড়ছে মাদকসেবীদের। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার আশঙ্কা কম বলে এক শ্রেণির ওষুধব্যবসায়ীও এই মাদক বিক্রি করছে। এ প্রসঙ্গে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক বলেন, এ দুটিই ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মাত্রা অনুযায়ী ব্যবহার করলে এটাতে রোগ নিরাময় হবে। আর পরিমাণে বেশি হলে তা ক্ষতির কারণ হবে, এটাই স্বাভাবিক। এদিকে, পুলিশের পক্ষ থেকে মাদকের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হলেও থেমে নেই মাদক ক্রয়-বিক্রয়। প্রতিদিনই সারাদেশে আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর হাতে আটক হচ্ছে মাদক ও মাদকব্যবসায়ী।

Tags: