Type to search

ডাক্তারি সেবা নাকি পেশা /মোঃ মাসুম বিল্লাহ

অন্যান্য

ডাক্তারি সেবা নাকি পেশা /মোঃ মাসুম বিল্লাহ

ডাক্তারি সেবা নাকি পেশা
মোঃ মাসুম বিল্লাহ

পৃথিবীর মধ্যে পেশার অভাব নেই। কিন্তু সব থেকে মানবিক ও সম্মানীয় পেশার মধ্যে অন্যতম ডাক্তারী। তরুণ বয়সে সকলের মনে সুপ্তভাবে বিরাজ করে ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করে দেশ ও দশের মন জয় করবে। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি ও চাহিদার অপরিসীমতায় একদিন সেবা করার মানসিকতা বিলীন হয়ে যায়। বিশেষ করে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে নিজের বিবেক ও মনুষ্যত্বের সাথে কম্প্রোমাইজ না করে চলাটা বেশ কঠিন। কেননা আমাদের রয়েছে সম্পাদের অপ্রতুলতা, সুযোগের সল্পতা ও ব্যক্তি জীবনের বিশৃঙ্খলা। এখানে সৎ থাকাটা বোকামী কেননা এদেশে অর্থ দিয়ে মানুষের মূল্যায়ন করা হয়। সততা ও সরলতা অযোগ্যতা। পেটের দায়ে পেটে পাথর বেধে থাকার চেয়ে শঠতা, চালাকী ও সুদি ব্যবসার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সম্মানের। সম্মানের মাপকাঠি যখন টাকা তখন তা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে পড়ে। কিন্তু কিছু পেশাজীবীরা যদি এরূপ মাপকাঠি দিয়ে জীবনকে মাপতে যান তখন সে সমাজের অধিকাংশ লোক বিপদগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তেমনি ডাক্তারি পেশাটাকে যদি কেউ সেবার বদলে শুধু পেশা মনে করে তবে অনাচারের সীমা থাকে না।

আমাদের দেশে আমজনতা ডাক্তারকে ভগবান মনে করে। তারা মনে করে ভগবান যেমন তার সৃষ্টির সকল পাপ পঙ্কিলতা ধুয়েমুছে পবিত্র করে তোলে, তেমনি ডাক্তার রুগীর সকল সমস্যার একমাত্র ত্রাণ কর্তা। রোগ-শোক, দুঃখ-দারিদ্রে জর্জারিত অসহায় মানুষ ডাক্তারকে নিজের রোগ মুক্তির একমাত্র অবলম্বন মনে করে। বিদেশে একজন ডাক্তার মানে রোগীর বন্ধু। সে সব দেশে মানুষের অনুপাতে ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্ত আমাদের দেশে অগণিত মানুষের ভিড়ে ডাক্তার অপ্রতুল। তাই রুগির মানসিক সুস্থতার বদলে টেস্ট, রোগ নির্ণয় ও ঔষুধ প্রদানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবু আশার বাণী শোনায় প্রাইভেট হাসপাতাল। যেখানে টাকার বিনিময়ে রুগির গুরুত্ব নির্ভর করে। কিন্ত সে সৌভাগ্যতো আর সবার হয় না।

অতি সম্প্রতি তামিম ইকবাল হার্ট ব্লক হয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে দ্রুত সেবা পেয়ে সুস্থ হয়ে উঠেন। তার প্রেক্ষিতে একজন আমজনতা জানতে চেয়েছেন, তামিম যে সুবিধা পেল একজন সাধারণ মানুষ হলে কি সে এই সুবিধা পেতেন। নাজানি সে কত হয়রানির স্বীকার হতেন। তিনি আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা যে অনেক উন্নত তা মনে করেছেন তামিমের চিকিৎসার অগ্রগতি দেখে। কিন্তু সাধারণ মানুষ যিনি টাকার অভাবে সরকারী হাসপাতালের বারান্দা থেকে লাশ হয়ে ফিরে আসেন তাদের ক্ষেত্রে দায়ভার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকে বিষয়টিকে সরকারী অব্যবস্থাপানা ও রুগীর অসচেতনাকে দায়ী করেছেন। তারা যা বলেছে ঠিকই বলেছে। তবে এই প্রোফেশনে না থাকলে হয়তো এতো সুন্দর উপলব্ধি হতো না। তখন আমজনতার মতো করে ভাবতেন। বিষয়টি ২৪ আন্দোলনের ঐ স্লোগানের মতো তুমি কে আমি কে….ড্যাশ।

আমাদের সরকারি অব্যবস্থাপনা ও ডাক্তারের অপ্রতুলতার জন্য মোটেও এই দুর্দশা কাটিয়ে উঠা সম্ভব না। আমার মেয়েকে আমাদের উপজেলা হাসপাতালে নিলাম। সেখানে রোগীর এতো প্রেসার যে ডাক্তারের দম ফেলার ফুসরত নেই। খুব কষ্ট লাগলো তাদেরে অসহায়ত্ব দেখে। তারা যদি এই পেশায় না আসতো তবে আমরা অসহায় হয়ে পড়তাম।

আমার গ্রামে একজন ডাক্তার ছিলেন। নাম ফারুক, খুলনা মেডিকেলর নামকরা ডাক্তার। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। হিন্দুদের যেভাবে কাঁদতে দেখেছি তা অতুলনীয়। আর এখন গ্রামে এক ডজন ডাক্তার আছে কিন্তু গ্রামবাসী কাউকে চেনে না। কারণ তারা শহরে বিভন্ন হাসপাতালে রোগীর সামাল দিতে ব্যস্ত। ফারুক ডাক্তারের কিন্তু সপ্তাহে একদিন ছুটি ছিল; শুক্রবার। আর সেদিন তার প্রেসার থাকতো সব থেকে বেশি। সেদিন ফজরের নামাজ পড়ে এমনও গেছে জোহরে কখন খাওয়ার সময় চলে গেছে তা টেরও পাননি। কেননা তখন স্ত্রী সন্তান এগুলো দেখে নিজেকে গর্বিত মনে করেছে। আর এখন বাড়ি গাড়ি স্ট্যাটাস না হলে সংসার টেকা দায়। তাইতো ক্লান্তি অবসাদ দূর করতে ৯ টা টু ৫ টা অফিস ১০ বা ১১ টায় শুরু করে ২ বড় জোর ২:৩০ এ শেষ। তার পরে রেস্ট কেননা চেম্বার না করলে সন্তানকে ভালো স্কুলে পড়ানো যাবে না। বাসায় শিক্ষক রেখে ৫/১০ হাজার টাকার টিউশন মাস্টার পাওয়া যাবে না। কোন ডাক্তারের সন্তান প্রাইমারীতে পড়লে স্ট্যাটাস যে ধুলোয় মিশে যাবে। তাই রেস্ট করার সময়টুকু সরকারি অফিস টাইম থেকে যায়। কেননা চেম্বার করতে হবে। এভাবে ক্লান্ত শরীর নিয়ে সকালে উঠতে দেরি হয়। আর হাসপাতালের অশিক্ষিত রোগীর কথা বার্তা ও হাজারটা প্রশ্ন হয়তো তরুণ বয়সে সহ্য করা সম্ভব কিন্তু একই কাজ করতে করতে মাঝ বয়স পেরতে না পেরতে ধৈর্য রাখা দায়। এই জন্য মূর্খ রোগী মনের ঘোর কাটাতে প্রশ্নবাণে জর্জারিত করে আস্বস্ত হতে চাইলে তার প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে “আমি কি বলেছি, আপনারা বেশি বোঝেন,!” এমন কথা শুনে না বুঝে বেরিয়ে এসে ডাক্তারকে ঠ্যাঙানোর বাকি রাখে না। বেচারা ডাক্তারের কষ্ট কি করে এই মূর্খ রুগী বুঝবে। ইসলামে আছে প্রত্যেকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিতো হবে।

ড. জাকির নায়েকের কাছে একবার এক ব্যাংকার জিজ্ঞেস করলেন আমি আমার পরিবার সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য ব্যাংকে চাকরি করি। ইসলামের রয়েছে যে সুদের সাথে সম্পর্ক রাখা ১০ ব্যক্তির উপরে আল্লাহ তায়ালা লানত করেছেন, সেক্ষেত্রে আমি যদি চাকরি ছেড়ে দেয় তাহলে আমার পরিবার নিয়ে চলতে খুব কষ্ট হবে। প্রশ্ন শুনে ডক্টর জাকির নায়েক তার প্রতি উত্তরে বললেন যে, আপনি ভালো থাকতে চান আল্লাহর কাছে, আপনি ঈমানদার হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে চান আর তার নির্দেশিত পথে চলবেন না সেটা তো হতে পারে না। আপনি সৎ থাকবেন কিন্তু আপনি অসৎ পথকে বিতাড়িত করবেন না অসৎ পথ থেকে নিজেকে ফিরিয়ে রাখবেন না তাহলে তো আপনি সৎ থাকতে পারবেন না। এজন্য সৎ থাকতে গেলে আপনাকে কষ্ট করতে হবে। কিন্তু আমরা নিজেকে সৎ দাবী করবো নিজের সুবিধা থেকে। এটা দ্বিচারিতা।

এটা সম্পূর্ণ ঠিক এখানে রাষ্ট্র ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনায় দায়ী। কিন্তু এখানে যে মানুষটা তরুণ বয়সে ব্রতো গ্রহণ করে ডাক্তার হয়ে দেশ ও দশের সেবা করবে তার মনুষত্বের মৃত্যু হতে বাকী থাকে কী? মানুষের সেবা করতে যেয়ে যখন রাষ্ট্রের এই বিশৃঙ্খল পরিবেশ পরিস্থিতির কাছে আবদ্ধ হয়ে নিজেকে শৃঙ্খলিত করে তখন তার বিবেক একটু নড়ে ওঠে না বরং মহান পেশার মানুষটি তখন পেশাজীবী হয়ে ওঠে।

প্রশ্ন হচ্ছে যে, তামিম ইকবাল বলে হয়তো তার টাকা পয়সার অভাব নাই তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খুব দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু একজন আমজনতা সে যদি সেই প্রাইভেট হাসপাতালে যেতো তাহলে কি তাকে এভাবে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হতো। সাধারণত আমজনতার পক্ষে এরকম হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়। এজন্য আমাদের জন্য পরম নির্ভরতার জায়গা হচ্ছে সরকারি হাসপাতাল। আর সেখানে গেলে ফরমালিটি করতে করতে নাভিশ্বাস বয়। আর ডাক্তার আমাদের কাছে ডাক্তার নয় বরং ভগবান। আমাদের মত সাধারণ মানুষ ভগবানের কাছে গিয়ে যতটুকু স্বাচ্ছন্দবোধ করতে চাই সে স্বাচ্ছন্দ্যবোধের জায়গাটা তাদের পেশাদারীত্বের জন্য ম্লান হয়ে যায়। আমরা কষ্ট নিয়ে ফিরে আসি নিজের অক্ষমতাকে দোহায়দি যে, ঈশ্বর থাকেন ঐ ভদ্র পল্লীতে এখানে তাকে পাওয়া যাবে না ভেবে। ভগবানের কৃপা বঞ্চিত হয়ে ভগবানকে গাল মন্দ করতে পিছুপা হই না। আমরা ভুলে যায় এ ভগবান যে মানুষ ভগবান। আর মানুষ ভগবানের সীমাবদ্ধতা মানতে কষ্ট হয়।

আমার নিকট আত্মীয় একজন হার্ট ব্লক হয়ে খুলনা সিটি হাসপাতালে দুই দিন থেকে টাকার অভাবে বাড়ি ফিরে নিরুপায় হয়ে টাকার সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরছে আর মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। কই হাসপাতাল কতৃপক্ষতো খবরের কাগজে এলো না। এ রকম প্রাইভেট হাসপাতাল মানবতা বোঝে না। তারা রুগীকে টাকা দিয়ে বিচার করে। এটাতো তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আর এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য ডাক্তার পরিবার চালাতে সেবার ব্রত বিসর্জন দিয়ে শৈশবের স্বপ্ন ভুলে গিয়ে ডাক্তারের চাকরী করেন। আমাদের প্রশ্নটা সেই অসহায় মানুষের অসহায়ত্ব থেকে। কারণ তামিমের মতো সৌভাগ্য নিয়েতো আর সকলের জন্ম হয় না।

দেশের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে সত্য কিন্তু সেই সীমাবদ্ধতা মনুষ্যত্বের মৃত্যুর কারণ হতে পারে না। এমন অসংখ্য ডাক্তার যারা শুধু নিজের সামাজিক মর্যাদার কথা ভেবে বিবেকের টুটি চেপে ধরেন। তাইতো চেম্বার নামক আরো একটি চাকরি করতে হয়। অফিস সেরে ২৫,৩০ কিলোমিটার দুরে গিয়ে রুগি দেখেন। একদিক বিবেচনা করলে এটা যেমন রুগির নিকট সেবা দরজার গোড়ায় পৌঁছানো যা তাদের জন্য কল্যাণকর। তেমনি ডাক্তার তার পরিশ্রম দ্বারা কিছু বাড়তি উপর্জনের মাধ্যমে নিজের সীমাবদ্ধ বেতনের সীমা কাটিয়ে পরিবার পরিজনের জন্য খরচ করতে পারেন। তাদের কাছে পরিবারের চাহিদার শেষ নেই। তাই নিজের ক্লান্ত জীবনে বিশ্রামের সুযোগ না পেয়ে এক সময় যান্ত্রিক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। আর সমস্যাটা সেখানে, যন্ত্র যেমন মানবিকতা বোঝে না তেমনি যান্ত্রিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত ডাক্তারের মধ্যে মানবিকতা হারিয়ে যায়। তখন অনেকের মাঝে টাকা উপার্জন নেশা হয়ে দাঁড়ায়। আর তখন তরুণ বয়সে অসহায় রুগিকে সেবা প্রদানের মানসিকতা গৌণ হয়ে পড়ে। ফলে সরকারি নির্দষ্ট বেতনে জীবনযাপন অসম্ভব ভেবে সেবার বদলে ডিউটি করা শুরু করেন। আর সাধারন মানুষ হয়ে পড়ে একটা অপরিচিত রুগি মাত্র। তার বাঁচা মরার মালিক তখন স্রষ্টা। নিকট আত্মীয় একজনকে নিয়ে ডাক্তারের নিকট গিয়ে আশ্চর্য হলাম রুগির সিরিয়াল দেখে। আমাদের সিরিয়াল ৫৬, খাতায় মোট সিরিয়াল ৮৩ বেলা তখন বারোটা। আজ তিনি সকাল থেকে রাত ১০টা অবধি রুগি দেখবেন। অনুমান করা শুরু করলাম যদি ১০০ রুগি হয় তবে ৫০০ করে ভিজিট নিলে দিনে ৫০ হাজার টাকা হয়। শুধু এক চেম্বার থেকে চার সপ্তাহে ২ লাখ। আর অন্য দিন পড়ে থাকলো। সরকারি চাকরির বেতন বাদ দিলাম, সে তো যৎ সামান্য। মোটামুটি হাজার বিশেক টাকা হলে আমাদের মাস চলে সেখানে এতো টাকা দিয়ে তিনি কি করবেন? তখন ভাবনাটাকে আর একটু সহজ করে ভাবলাম, একজন ডাক্তার দিনে ২০ টি রুগি দেখলে ১০ হাজার টাকা হয় তাহলে ৩০ দিনে তিন লাখ। আবার যারা ৬০০,৮০০ বা ১০০০ টাকা ভিজিট নেন তাদের কি অবস্থা ভেবে হতাশ হয়ে পড়ি। তখনি প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। এটা যদি মহৎ পেশা হয় তবে ভিজিট কেন? আবার ডাক্তারের কাছে গেলে শুরুতে এক ডজন টেস্টের টাকা খরচ করে ঔষুধ না কিনে ডাক্তারের কথা শুনে দুদিন বাদে রোগ সেরে যায় আমাদের মতো মানুষের।

বর্তমানে টেস্টের উপর ভিত্তি করে মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠেছে ডায়গনস্টিক সেন্টার। রুগি তাদের কাছে খরিদদার আর ডাক্তার হলো মধ্যস্ততাকারী। বর্তামানে সকলে অনেক সচেতন তাই সামান্য সর্দি জ্বর হলেও রিস্ক নিতে কেউ চায় না। এখনকার ডাক্তার আগে টেস্টের মাধ্যমে সঠিক রোগ নির্ণয়ে বিশ্বাসী। এতে রুগির অহেতুক অর্থ অপচয় ও সঠিক চিকিৎসা যেমন নিশ্চিত হয় তেমনি রুগি মৃত্যুর হার প্রায় শুন্যের কোটায় নেমেছে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সমস্যা বাঁধে আমাদের মতো হত দরিদ্র রুগির জন্য। যে কিনা ৫০০ টাকা নিয়ে ঔষুধ কিন্তে গিয়ে ডাক্তার ভিজিট দিয়ে সর্বশান্ত সে কি করে টেস্ট করে ঔষুধ খাবে। একটা সময় ছিল গ্রামের হরিপদ ডাক্তারের খুব হাত যশ ছিল। রুগির নাড়ি টিপে রোগ নির্ণয় করে তিন ডোজ ঔষুধ দিতো আর অমনি রুগি ভালো হয়ে যেত। আবার হিতে বিপরীতও কম হতো না। তবু মানুষ স্বস্তিবোধ করতো, আস্থা পেত। তখন ডাক্তারের কথা শুনে অর্ধেক রোগ ভালো হতো। কিন্তু এখন ডাক্তারের কথা শুনে রোগ বাড়ে। রুগি মনোবল হারিয়ে দ্রুত মৃত্যুর পথে এগিয়ে যায়। আর রুগির স্বজনদের হতাশ হয়ে বাড়িতে কেজি কেজি রসগোল্লা নিয়ে ভিড় করা দেখে রুগির মর্যাদাবানে গর্বিত হয়ে মারা যেতে ইচ্ছে করে। বলছিনা টেস্টের কোন দরকার নেই কিন্তু এমবিবিএস পাস করে কি লাভ যদি রুগির লক্ষ্মণ দেখে রোগের ধরণ বুঝতে না পারে। তব কি পড়ায় সে সময়ে?

একজন মানুষ কতটুকু ভাত, মাছ, মাংস খেতে পারে। প্রতিদিন মাংস খাওয়া সম্ভব না। তবে এত টাকার কি দরকার? সামাজিক স্ট্যাটাস মানুষের মানুষ্যত্বকে গলা টিপে মেরে ফেলছে। যার ফলে আমরা ভবিষ্যতের চিন্তা করে তার শক্ত ভিত্তি গড়তে গিয়ে বিবেককে বিসর্জন দিচ্ছি।

তবে নিরট সত্য হলো মুদ্রার দুটি পিঠ। এক পিঠে যেমন মন্দের বিচরণ তেমনে অন্য পিঠে ভালো। অসংখ্য ডাক্তার রয়েছেন যারা সরকারি চাকরিটাকে সেবা মনে করে অকাতরে সেবা বিলিয়ে যাচ্ছেন। তারা রুগির নিকট ভিজিট নেওয়ার পরিবর্তে নিজে ঔষুধ কিনে দিচ্ছেন। সপ্তাহে একদিন হলেও বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করে চলেছেন। আজও মানবতা বেঁচে আছে এমন সকল মানবতার ফেরিওয়ালার জন্য, যারা রুগির নিকট সত্যি ভগবান। যারা ভোগে নয় ত্যাগে মনুষ্যত্বের বিকাশ মনে করেন। তবে অসংখ্য সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। আর গণতন্ত্র ৫১ পেলে সে বিজয়ী ৫০ মানে পরাজয়।
আর এ কারণে রাষ্ট্রের সকল সেক্টরের জন্য শিক্ষা জীবনের শেষ বছরে প্রত্যেকের জন্য “মানবিক মূল্যবোধ ও মনুষ্যত্বের জন্য নৈতিকতার চর্চা” বিষয়ক কোর্চ চালু করা দরকার। কেননা শিক্ষা জীবনে যদি ডাক্তার রুগিকে নিজের অংশীজন ভাবতে না পারেন, কোন ইন্জিনিয়ারের মধ্যে মানবিকতা ও নৈতিকতা তৈরি না হয় তবে রডের বদলে বাঁশ দিতে ভুল করবে না। বাস্তবিক যদি “মানবিক মূল্যবোধ ও মনুষ্যত্বের জন্য নৈতিকতার চর্চা” বিষয়ক এমন কোন কোর্চ চালু করা যায় তবে সরকারি চাকরিজীবীরা আর হয়তো ঘুষের জন্য মুখিয়ে থাকবে না। তারা এমন একটি কোর্চের মাধ্যমে শিখতে পারবে কিভাবে স্বল্প বেতনে জীবনযাপন করতে হয়, কিভাবে মানুষের মন জয় করে আর্শীবাদপুষ্ট হয়ে হৃদয়কে প্রসারিত করতে হয়, কিভাবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সন্তানকে পড়িয়ে গর্ব করতে হয়। সৎ ও সততাকে পুঁজি করে না খেয়ে মারা গেলেও ভালত্বকে ব্যক্তি জীবনে লালন করতে হয়। আর শিখবে রুগির প্রতি আচরণ, ধৈর্য, মানবিকতা, মূল্যবোধ যা তাকে মানবিক মানুষে পরিণত করবে। যেখানে থাকবে অন্যের প্রতি দরদ, ভালোবাসা ও নির্ভরতার পরশ। মানুষ তার কাছে গিয়ে শীতল হবে। তাই পেশা জীবনে প্রবেশর পূর্বে এমন একটা কোর্চের বুনিয়াদি কার্যক্রমে সকলের সফলতা নিশ্চিত বাধ্যতা মুলক করা অপরিহার্য। অন্যথায় প্রতিটি পেশার ক্ষেত্রে সে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। কেননা পেশা জীবন প্রবেশ করে তাদের যে শর্ট বুনিয়াদি ট্রেনিং করানো হয় তাতে পূর্ব শিক্ষার পুনশ্চ বয়ান ছাড়া তেমন কোন লাভ হয় না। আমরা পরাজিত মানবিকতা না হয়ে বিজয়ী শক্তি হয়ে মানুষের মনিকোঠায় আসন গড়তে চাই। মানবমুক্তির এই পথ ধরে ডাক্তারির মতো মহান পেশার পুর্নজন্ম হোক, প্রতিটা রুগি ডাক্তারের কাছে তামিমের মর্যাদা পাবে সেই সুদিনের প্রতিক্ষার অবসান হোক। ডাক্তারের মতো মহান মহান পেশার মানুষগুলো উদ্ভাসিত হোক সকলের মুখে।