Type to search

ঝিকরগাছার সেই কথিত ডাঃ বিল্লাল প্রতারকের ডেসটিনি প্রতারণায় অনেক পরিবার নিঃস্ব

ঝিকরগাছা

ঝিকরগাছার সেই কথিত ডাঃ বিল্লাল প্রতারকের ডেসটিনি প্রতারণায় অনেক পরিবার নিঃস্ব

আফজাল হোসেন চাঁদ, ঝিকরগাছা :

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় অন্য মুক্তিযোদ্ধার ভাতা আত্মসাৎকারী কথিত ডাঃ বিল্লাল হোসেন প্রতারকের ডেসটিনি প্রতারণার কারণে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। এমনকি তার প্রত্যারণার এই কার্যক্রম থেকে বাদ পরেনি নিকটাত্মীয়ও। ডেসটিনি- ২০০০ লিঃ এর নামে উপজেলার অনেক পরিবারের সদস্যদের খুব দ্রæত বড়লোক বানিয়ে দেওয়ার কথাকে পুঁজি বানিয়ে শতাধিক সাধারণ অসহায় মানুষের নিকট থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। তার এমন কার্যক্রমে বাদ পড়েনি আপন চাচাতো বোনের স্বামী এবং শাশুড়ী। ২০০৯ সালে ডেসটিনি ২০০০ এর গাছের প্রজেক্টের সিলভার প্যাকেজে ৫হাজার ১শত টাকা জমা দিলে ১২ বছর পরে লাভ সহ ত্রিশ হাজার টাকা ফেরৎ পাবে এই প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় শতাধিক মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে এই প্রতারক। ইতিমধ্যে চুক্তির মেয়াদ ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো কেউ একটি টাকাও ফেরৎ পায়নি। টাকা ফেরৎ চাইতে গেলে উল্টো পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে কথিত ডাঃ বিল্লাল হোসেন। বিল্লালের বোনের শাশুড়ী হাজিরালি গ্রামের আঃ আজিজের স্ত্রী সালেহা বেগম বলেন, ২০০৯ সালে আমার পোতা ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে গাড়ির মালিক আমাদেরকে ২০ হাজার টাকা দেয়। তারপর বিল্লাল আমাদের বাড়ি এসে সেই টাকা নিয়ে ডেসটিনিতে খাটালে অনেক লাভ হবে বলে আমাদেরকে লোভ দেখায়। আরও বলে কোম্পানি টাকা না দিলেও আমি নিজের টাকা তোমাদেরকে দিয়ে দেবো। আমরা রাজি না থাকলেও প্রায় জোর করে বিল্লাল ও শহিদুল এবং আমার ফরম পুরণ করে টাকা নিয়ে যায়। এখন ১৩ বছর পার হয়ে গেলেও লাভের টাকা দুরের কথা আসল টাকাও ফেরৎ দিচ্ছে না। টাকার জন্য তার বাড়িতে গেলে আমাদের সাথে খুবই খারাপ ব্যবহার করে। আর কোনো দিন বিল্লালের কাছে টাকা চাইতে গেলে সে আমাদের পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেবে বলে ভয় দেখায়। কুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ আবু ইসলাম বলেন, ২০০৯ সালে বিল্লাল ৫ হাজার ১শত টাকা জমা দিলে ১২বছর পর ৩০হাজার টাকা ফেরৎ দিবে বলে আমার কাছ থেকে এক প্রকার জোর করেই ১০ হাজার ২শত টাকা নেয়। কথা ছিলো যাই হোক ১২ বছর পার হলে সে নিজে টাকা দেবে। আমি অসুস্থ মানুষ। ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারিনা। টাকার অভাবে ঔষধ কিনতে পারছি না। বিল্লালের কাছে বললাম, লাভের দরকার নেই আমার আসল টাকা ফেরৎ দিলে অন্তত ঔষধ কিনে খেতে পারতাম। কিন্তু সে বলছে টাকা দিতে পারবেনা। কুলিয়ার হাফিজা, রিজিয়া, রফিকুল, হাজিরালির সাজেদা, নওয়ালীর রাইহানুর, মানিকালি গ্রামের বিল্লাল সহ বহু অসহায় পরিবারের সদস্যদের নিকট থেকে টাকা নিয়ে অধিক মুনাফা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে এভাবেই অর্থ আত্মসাৎ করেছে কথিত ডাঃ বিল্লাল হোসেন। উল্লেখ্য বিল্লালের নামে ধারাবাহিক ভাবে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর জাতীয় পরিচয়পত্র টেম্পারিং করে ব্যাংক থেকে অন্য মুক্তিযোদ্ধার টাকা উত্তোলনের বিষয়টি প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়া যাওয়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে। কাগজপত্রে কোথাও বিল্লালের পিতার নাম মশিয়র না থাকলেও সে এখন মোরশেদ কে মশিয়র প্রমাণের জন্য গ্রামের লোকদের নিকট থেকে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করছে বলে জানা গেছে। কেউ স্বাক্ষর না দিতে চাইলে তাকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের চেষ্টাও অব্যাহত রেখেছে বলে বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে। তরুন লীগের ঝিকরগাছা উপজেলা শাখা কমিটির সভাপতি মনিরুল ইসলাম শিপলু বলেন, বিল্লাল পানিসারা ইউনিয়ন তরুণ লীগের সভাপতি পদে আছে তবে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় বিল্লালের নামে খবর প্রকাশিত হওয়ায় আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে উক্ত কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এদিকে ধারাবাহিক ভাবে বিভিন্ন পত্রিকায় কথিত ডাঃ বিল্লাল হোসেনের বিভিন্ন অপকর্মের খবর প্রকাশিত হওয়ার পরও প্রশাসন নিরব থাকতে দেখা গেছে। তার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি প্রশাসন। এমনকি তার নিকট থেকে সরকারি মুক্তিযোদ্ধার ভাতার টাকা উত্তলনের উপর ব্যবস্থা চোখে পড়ছে না। প্রতারকের প্রতারণার হাত থেকে উপজেলাবাসীকে বাঁচাতে প্রশাসনের নিকট থেকে সহযোগিতা কামনা করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল। এ বিষয়ে কথিত ডাঃ বিল্লাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে মোবাইলে কল গিলেও পরবর্তীতে সে তার ফোন বন্ধ করে রাখেন। ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুল হক বলেন, লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিল্লালের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা স্থগিত করা সহ সোনালী ব্যাংক ঝিকরগাছা শাখার ম্যানেজারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলেছি। তদন্ত প্রতিবেদন এখনও পায়নি। পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।