চৌগাছায় পরকীয়া প্রেমিক হত্যা মামলার প্রেমিকাসহ তিনজন গ্রেপ্তার
চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি
যশোরের চৌগাছায় তুলে নেয়ার তিনদিন পর পরকীয়া প্রেমিক বিপুল হোসেনের (৩৫) বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পরকীয়া প্রেমিকাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সকালে লাশ উদ্ধারের পর শনিবার ফোনকললিষ্ট ট্রাকিং করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে যশোর ডিবি পুলিশ। রোববার বিপুল হত্যা মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর ডিবি পুলিশের ওসি মারুফ আহম্মদ। তিনি বলেন ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত দু’আসামী জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন বিপুলের পরকীয়া প্রেমিকা ফুলবানু (৩৮), তার ছেলে সবুজ হোসেন (১৯) এবং হত্যাকান্ডে সহায়তাকারী তুহিন হোসেন (২৫)। ডিবি পুলিশ জানায় গ্রেপ্তার ফুলবানু উপজেলার হিজলী গ্রামের মালেশিয়া প্রবাসী । মামলার অপর আসামী ফুলবানুর মেয়ের জামাই রফিকুল ইসলাম পালাতক রয়েছে।
বুধবার বেলা ১০টার দিকে বিপুলকে বাড়ি থেকে একটি মটরসাইকেলে করে তুলে নেয় তার পরকীয়া প্রেমিকার মেয়ের জামাই রফিকুল ইসলাম। এরপর শুক্রবার বেলা ১১ টার দিকে চৌগাছা থানার পুলিশ উপজেলার চৌগাছা সদর ইউনিয়নের বেড়গোন্দিপুর বাওড় অফিস সড়ক থেকে ওই ব্যক্তির বস্তাবন্দি দুর্গন্ধযুক্ত লাশ উদ্ধার করে। এঘটনায় শুক্রবারই নিহতের ছেলে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেন।
যশোর ডিবি পুলিশের ওসি মারুফ আহম্মদ জানান হত্যাকান্ডের পরপরই চৌগাছা থানা পুলিশের পাশাপাশি যশোর ডিবি পুলিশ তদন্ত শুরু করে। এরপর তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শনিবার দুপুর ২টায় জেলার মনিরামপুর উপজেলার গোপালপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী সবুজ হোসেন (১৯) ও তার মা ফুলবানু বেগমকে (৩৮) গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক তাদের সহযোগী উপজেলার হিজলী গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মোঃ তুহিন (২৫) কে বিকাল ৪টায় হিজলী বাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে পুড়াপাড়া এলাকার জনৈক ইদ্রিস আলীর পাটক্ষেত থেকে নিহত বিপুলের ১টি মোবাইল ফোন ২টি সিমসহ উদ্ধার করা হয়। এরপর হত্যার স্থান পলাতক আসামী পরকীয়া প্রেমিকা ফুলবানু বেগমের মেয়ের জামাই রফিকুলের বসতবাড়ী চৌগাছা থানাধীন দক্ষিন কয়ারপাড়া গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে সবুজের দেখানো মতে হত্যাকাজে ব্যবহৃত ১টি হাতুড়ি উদ্ধার করা হয় এবং চৌগাছা বাজারের যে দোকান থেকে চটের বস্তা ক্রয় করা হয়েছিল সনাক্ত পূর্বক নমুনা চট জব্দ করা হয়।
তিনি জানান প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কারণ সম্পর্কে আসামীরা জানায় নিহত বিপুল হোসেনের ফুলবানুর সাথে ৩ বছর যাবৎ পরকীয় প্রেম ও দৈহিক সম্পর্ক ছিল। তাদের অনৈতিক সম্পর্ক ছেলে সবুজ দেখে ফেলে। এ বিষয়ে বিপুলকে সতর্ক করা সত্বেও না মানলে সবুজ তার ভগ্নিপতি (ফুলবানুর মেয়ের জামাই) রফিকুলের সাথে তাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে।
ঘটনার দিন সবুজের ভগ্নিপতি দক্ষিণ কয়ারপাড়া গ্রামের লালনের ছেলে রফিকুল গরু কেনার কথা বলে বিপুলকে ডেকে নিয়ে তার বসতঘরে নিয়ে শ্বাসরোধ ও মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে এবং গোপনাঙ্গে চেপে ধরে হত্যা করে বস্তাভর্তি করে গভীর রাতে ঘটনাস্থল বেড়গোবিন্দপুরে ফেলে দেয়। সবুজের পিতা আবু শামা ১০/১২ বছর যাবৎ মালয়েশিয়াতে রয়েছেন।
ওসি (ডিবি) মারুফ আহম্মদ আরো জানান গ্রেপ্তারের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত দুজন আসামী সবুজ ও তুহিন যশোরের বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্টেট মাহদী হাসান স্যারের কোর্টে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।