জাহিদ আবেদীন বাবু, কেশবপুর (যশোর) থেকে-
যশোরের কেশবপুরে প্রায় অর্ধকোটি টাকা বিলের সংযোগ খাল খননে ব্যয় করা হলেও পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে বিল গরালিয়া বর্তমান বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। ফলে ওই বিলের ওপর নির্ভরশীল আশপাশের ১৭ গ্রামের হাজার হাজার মানুষের কাছে বিল গরালিয়া এখন অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। এছাড়া বিলটি ঘের মালিকদের দখলে চলে যাওয়ায় বেকার হয়ে পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছেন ওই বিলের ওপর নির্ভরশীল শতাধিক শত জেলে পরিবার। এদিকে উপজেলার অপর বৃহৎ বলধালি বিলে জলাবদ্ধ অবস্থা বিরাজ করায় এ বিলের প্রায় ৫ হাজার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তারপরও এ বিল সংশ্লিষ্ট কৃষকদের অনেকে দূরে গিয়ে অন্যের জমিতে বোরো বীজতলা তৈরী করছে।
কেশবপুরের ঐতিহ্যবাহী সর্ববৃহৎ বিল গরালিয়ার আশপাশে কন্দর্পপুর, সুজাপুর, খতিয়াখালি, মাগুরখালি, বালিয়াডাঙ্গা, বাকাবরশি, বড়েঙ্গা, নেপাকাটি, কমলাপুরসহ ১৭ গ্রামের হাজার হাজার মানুষের বসবাস। বিলের অভ্যান্তরে ৬ হাজার বিঘা কৃষি জমি রয়েছে। অতীতে ব্যাপক জোয়ার-ভাটার কারণে এ বিলের উৎপাদিত ধান, পাট ও মাছ শিকারের ওপর নির্ভর করেই চলতো এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা। হাসি আনন্দে কেটে যেত বিল পাড়ের হাজারও মানুষের বছরের পর বছর। এর সবই এলাকার মানুষের কাছে আজ শুধুই ইতিহাস। ওই বিলকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল শতাধিক জেলে পরিবার। বিলের মাছ শিকারসহ বাজারে বিক্রি করে চলতো তাদের সংসার। কিন্তু বিলটি ২০১০ সালের পর ঘের মালিকদের দখলে চলে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় তাদের বাপ-দাদার পৈত্রিক পেশা মাছ শিকার। ফলে তারা বাধ্য হয় দীর্ঘ দিনের এ পেশা পরিবর্তন করতে। অতীতে গরালিযার বিলের পানি নিষ্কাশন হতো পুরনো খাল ও কন্দর্পপুর খাল দিয়ে হরিহর নদীতে। পলির কারণে বর্তমান হরিহর নদীতে আগের মতো আর জোয়ার-ভাটা খেলে না। অখচ এ হরিহর নদী খননে সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ করেছে। তাই বিল গরালিয়ার সংযোগ খাল দুটিই ছিল প্রায় মৃত। বিলটি পরিণত হয় বদ্ধ জলাশয়ে। বিলের ওপর নির্ভরশীল হাজার হাজার কৃষি পরিবারের কাছে অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে বিল গরালিয়া।
পাউবো’র অফিস সূত্রে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড গরালিয়ার বিলের পানি নিষ্কাশনে পুরনো খাল খননে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ও কন্দর্পপুর খাল খননে ৯ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে। এরমধ্যে একটি খালের খনন কাজ সম্পন্ন হলেও অপর খালের প্রায় আশি শতাংশ খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া হরিহর নদীর খনন কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আপারভদ্রা নদীর সন্ন্যাসগাছা থেকে কাশিমপুর পর্যন্ত পলিতে ভারাট হয়ে পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। পানি সরাতে বর্তমান ওই নদীতে পাইলট চ্যানেলের কাজ চলামান রয়েছে।
কন্দর্পপুর গ্রামের কৃষক এরশাদ আলী মোড়ল জানান, ১০ বছর আগে বিলটি দখল করে চারপাশ বেঁড়ি দিয়ে মাছের ঘের করেন স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী আসাদ, মিনার হোসেন, রেজাউল ইসলাম, বুলু বিশ্বাস ও স্বপন মুখার্জি নামের ব্যক্তিরা। তারা পৃথক পৃথক বেঁড়ি বাধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন। এরপর থেকে বিলটিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ঘের মালিকরা কৃষকদের বোরো ধান আবাদ করার সুযোগ করে দেয়ার শর্তে বিলটি লিজ হিসেবে নিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঘের মালিকরা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতি শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে ঘের ভরাট করে ফেলেন। যার কারণে কয়েকজন মালিক গত বছর ওই বিলের পানি নিষ্কাশনে ব্যর্থ হওয়ায় কৃষকরা বোরো ধান আবাদ করতে ব্যর্থ হয়। এ সুযোাগে বর্তমান ঘের মালিকরা বিলটি বারোমাসের জন্যে হারি নেয়ার জন্যে কৃষকদের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছেন বলে অভিযোগ। চলতি বছরও বিলটিতে অগভীর পানি রয়েছে। বিলের পানি ও খালের পানি সমানভাবে রয়েছে। পানি সরছে না। এ অবস্থা চলমান থাকলে চলতি মৌসুমেও কৃষকরা বোরো ধান আবাদ করতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বলধালি বিল সংশ্লিষ্ট কৃষক শহিদ হাসান জানান, বলধালি বিলে জলাবদ্ধ অবস্থা বিরাজ করায় তিনি দূরে গিয়ে অন্যের জমিতে বোরো বীজতলা তৈরী করতে বাধ্য হয়েছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্সি আছাদুল্লাহ বলেন, কৃষকদের বোরো ধান আবাদের সুযোগ করে দেয়ার জন্যে গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে আপার ভদ্রা নদীর পাইলট চ্যানেলের কাজ চলছে। তবে ঘের মালিকদের কারণে পানি নিষ্কাশন সবচেয়ে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে পানি নামানো শুরু হবে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে তার দপ্তরের ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে হরিহর ও আপারভদ্রা নদী পরিদর্শন করেছেন। অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হবে।
Subscribe to Updates
Get the latest creative news from FooBar about art, design and business.
কেশবপেুরে অপরিকল্পিত মৎস্য ঘেরের কারনে ১০ হাজার বিঘা জমিতে বোরো চাষ অনিশ্চিত
Related Posts
Add A Comment
অপরাজেয় বাংলা
এল.বি টাওয়ার ২য় তলা, নওয়াপাড়া , অভয়নগর, যশোর
ফোন নং : ০১৭১০৭৮৫০৪০
ইমেইল : dainikaparajeyobangla@gmail.com
ফেসবুক : fb.com/dainikaparajeyobangla
ইমেইল : dainikaparajeyobangla@gmail.com
ফেসবুক : fb.com/dainikaparajeyobangla
প্রকাশক ও সম্পাদক :
মোঃ কামরুল ইসলাম
মোবাইল নং : ০১৭১০৭৮৫০৪০
নির্বাহী সম্পাদক :
মোঃ মিজানুর রহমান
মোবাইল নং : ০১৯১৫৯৪৮৪০৪
উপদেষ্ঠা সম্পাদক :
চৈতন্য কুমার পাল
মোবাইল নং : ০১৭১২৫৮৩৪৩৮
Subscribe to Updates
Get the latest creative news from FooBar about art, design and business.
© 2025 Designed by Shakil Rafshan.