কেশবপুর থানার ওসি ও নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন
কেশবপুর (যশোর) প্রতনিধি।
যশোরের কেশবপুর থানার ওসি ও নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করায় প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করছেন উপজেলা পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান। শনিবার কেশবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে কেশবপুর উপজেলার ১৪৪ গ্রামে ঘের দখল, চাঁদাবাজির মহোৎসব শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিপক্ষ মধ্যকুল গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, গুটি কয়েক জমির মালিকের স্বাক্ষর নিয়ে ঘের দখলের নামে আমার মধ্যকুল বলদহালি বিলের ঘেরে মাছ ছাড়তে যায়। পরবর্তীতে জমির মালিক কৃষকরা বাধা দিলে মাছ ছাড়তে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। প্রকৃতপক্ষে, আমি বলদহালি বিলের ৪০০ বিঘা জমি এলাকার প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে লিজ নিয়ে বিগত ৬ বছর যাবৎ মাছ চাষ করে আসছি। চলতি বছর ঘেরের ডিডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পুণরায় ঘের কমিটি আগামী ৫ বছরের জন্যে ঘেরটি আমার নামে ডিড করে দেয়। যাতে ৩২০ বিঘা জমির মালিকের স্বাক্ষর রয়েছে। জমির হারি ৩৬ হাজার টাকা বিঘা ধার্য করা হয়েছে। যা গেল ১ বৈশাখ থেকে কার্যকর হয়েছে।
৮ মে কেশবপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আমি এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করি। যার কারণে সময়ের অভাবে আইনের আশ্রয় নিতে পারেনি। নির্বাচন কমিশনের একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনে আমি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হই। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর যখন কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ উজ্জীবিত ও সংঘটিত ঠিক তখনই কথিত জাহাঙ্গীর আলম নামের ওই ব্যক্তি অন্যের প্ররোচনায় বিজ্ঞ আদালতে আমিসহ কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ, ঘের মালিক সেলিমুজ্জামান আসাদের নামে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন, ষড়যন্ত্রণামূলক মামলা করেছে।
আমার ঘের দখলকে কেন্দ্র করে নির্বাচন চলাকালিন সময়ের অভাবে কেশবপুর থানায় কোনো অভিযোগ করতে পারেনি। কিন্তু জাহাঙ্গীর আলম বিজ্ঞ আদালতে যে অভিযোগ করেছে, সেখানে আমি ও ঘের মালিক সেলিমুজ্জামান আসাদের উপস্থিতিতে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলমকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো বিষয়ে আদালতে যে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। যা কেশবপুর থানার সিসি ক্যামেরা পর্যালোচনা করলে জানা যাবে।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আপনারা মূল্যবান ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করেছেন। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগসহ তৃণমূল আওয়ামী লীগ যখন শক্ত ও ঐক্যবদ্ধ ঠিক তখনি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা ঈর্ষাম্বিত হয়ে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আমিসহ উপজেলা আওয়ামী লীগকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে এধরনের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির চেষ্টা করা হচ্ছে। যার সত্যতা নেই। তাই আমি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এঘটনা আপনাদের বহুল প্রচারিত জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশের অনুরোধ জানায়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম রুহুল আমিন, সাবেক চেয়ারম্যান মাষ্টার আবদুস সামাদ, চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, তৌহিদুজজ্জামানসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলী,মহিলা আওয়ামী লীগ নের্তৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য কেশবপুর থানার ওসি ও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ওসির রুমে আটকে রেখে চাঁদাদাবির অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে। মামলাটি করেছেন কেশবপুর মধ্যকুল গ্রামের নুর মোহাম্মদ সরদারের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। আসামিরা হলেন, কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ জহির উদ্দিন, কেশবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান মফিজ ও আলতাপোল গ্রামের সেলিমুজ্জামান আসাদ। বিচারক জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সালমান আহমেদ শুভ অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার উর্ধ্বোতন কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী ফিরোজ হক।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, জাহাঙ্গীর আলম একজন ঘের ব্যবসায়ী। তিনি ২০২৪ সালের ২১ জানুয়ারি মধ্যকুল মৌজায় ৪শ’৫০ বিঘা জমি ২শ’১৪ জন মালিকের কাছথেকে এককোটি আশিলাখ টাকা চুক্তিতে পাচ বছরের জন্য লিজ নেন। এবং সেখানে মাছ চাষ করে আসছেন। ওই জমির গা ঘেষে মফিজুর রহমান মফিজ ১শ’ কৃষকের কাছথেকে তাদের জমি লিজ ঘের করার জন্য চুক্তি করেন।
গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মফিজ ও আসাদ বাদী জাহাঙ্গীরের লিজ নেয়া জমি তাদের কাছে হস্তান্তরের জন্য হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। এ বিষয় নিয়ে বাদী কেশবপুর থানায় জিডি করতে গেলে থানা তা গ্রহণ করেনা। সর্বশেষ গত পহেলা মে থানার পুলিশ কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম ও আবুল হোসেন জোরপূর্বক জাহাঙ্গীরকে বাড়ি থেকে থানায় ওসির রুমে নিয়ে যান। সেখানে যেয়ে দেখেন তিন আসামিই উপস্থিত রয়েছেন।
এসময় ওসি জহির বাদীকে তার জমি অপর মফিজ ও আসাদকে হস্তান্তর করতে বলেন। রাজি না হওয়ায় বলে ১৫ দিনের মধ্যে জমি হস্তান্তর করতে হবে অন্যথায় গুলি করে হত্যা করে ক্রস ফায়ারের নামে চালিয়ে দেয়া হবে। শেষমেষ তাকে ধাক্কা মেরে থানা থেকে বের করে দেয়া হয় বলে বাদী মামলায় উল্লেখ করেছেন।