Type to search

কেশবপুরে বাওড় নিয়ে দ্বন্দ্বে হতাহত

অন্যান্য

কেশবপুরে বাওড় নিয়ে দ্বন্দ্বে হতাহত

প্রতিনিধি, কেশবপুর (যশোর)
ঊর্ধ্বতন কর্তার পরিদর্শনের খবরে কেশবপুরের ঐতিহ্যবাহী বাওড় মর্শি¥নার দখল নিয়ে মৎস্যজীবীদের দু’পক্ষের দু’দফা সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জাহানপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি অপূর্ব সরকার বাদি হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৫/৬ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি এজাহার দাখিল করেছেন।
এজাহার গর্ভে উল্লেখ করা হয়েছে, উপজেলার বেগমপুর মৌজায় বাওড় মর্শ্মিনায় যশোর জেলা প্রশাসকের অধীন ৫২.৩১ একর সরকারি খাস জমি রয়েছে। ২ বছর আগে ওই বাওড়ের জমির মধ্যে থেকে ৩৩.৩১ একর জমি জাহানপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে ইজারা দেয়া হয়। এরপর থেকে বাওড়ের দখল নেয়াকে কেন্দ্র করে জাহানপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি অপূর্ব সরকার গ্রæপের সাথে বিরোধ চলতে থাকে সাধারণ সম্পাদক রাজ কুমার সরকার গ্রæপের। এরই সূত্র ধরে অপূর্ব সরকার গ্রæপের লোকজনকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছিল রাজ কুমার গ্রæপের লোকজন। গত ৭ জানুয়ারী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বাওড়টি পরিদর্শন করবেন এমন খবরে জাহানপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি অপূর্ব সরকার গ্রæপের লোকজন বাওড় পরিচালনার পাকাঘর অফিসে অবস্থান করছিলেন। এ সময় ওই দিন দুপুরে ৪/৫ টি মোটর সাইকেলযোগে রাজ কুমার সরকারের নেতৃত্বে ও হুকুমে দীপক কুমার সরকার, মিঠু দফাদার, আব্দুর রাজ্জাক, আলমগীর হোসেনসহ অজ্ঞাত ৫/৬ জন দূর্বৃত্ত পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক হাতে বাঁশের লাঠি, লোহার রড, দাসহ অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাওড়ের অফিস ঘরের মধ্যে অনধিকার প্রবেশ করে তাদেরকে অশ্লীল, অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতে থাকে। এক পর্যায়ে দূর্বৃত্তরা অফিসে থাকা ৫/৬ টি প্লাস্টিক চেয়ার, টেবিল ও বাওড়ের অফিস ঘরের দরজা জানালা ভেঙে প্রায় ২৫ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন করে। তাদের মারপিটে অপূর্ব সরকার গ্রæপের গণেশ সরকার, অবিনাশ সরকার, অনিল সরকার, দীলিপ সরকার, বৃদ্ধ নিমাই চন্দ্র সরকার, কৃষ্ণপদ সরকারসহ কমপক্ষে ওই সমিতির ১০ জন ও অপরপক্ষের ১ জন আহত হয়। আহতরা স্থানীয় ডাক্তারের চিকিৎসা নেয়।
অপূর্ব সরকার অভিযোগ করে বলেন, একটি গ্রæপ ওই সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাজ কুমার সরকারকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বাওড়টি দখলের জন্যে নানাবিধ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। যে কারণে গত ২ বছরে তারা বাওড়ে নামতেই পারেনি। মৎস্যজীবীরা বাওড়ে নামতে গেলেই হামলা চালানো হয়। বর্তমান বাওড়টি পরিচালনার অভাবে কচুরীপণায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।
এদিকে, গত বছর ওই বাওড়ের আরও ১৭ একর জমি ইজারা পাওয়ার জন্যে ওই মৎস্যজীবী সমিতির পক্ষে সভাপতি অপূর্ব সরকার জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৭ জানুয়ারী বিকেলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসিব মাহমুদ সরেজমিনে বাওড়টি পরিদর্শন করতে আসেন। তার সাথে ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এনামুল হক, সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন তহশীলদার নজরুল ইসলাম প্রমুখ। এ সময় বাওড় পরিদর্শনে আসা কর্মকর্তাদের সামনে মৎস্যজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ আওয়ামীলীগ নেতা সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে ওই বাওড় জবর দখলের অভিযোগ আনেন।
মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাজ কুমার সরকার বলেন, বাওড় নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষরা ওই দিন সন্ধ্যায় সমিতির সদস্য গুরুপদ সরকারকে পিটিয়ে আহত করেছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবু সাঈদ বলেন, ৭ জানুয়ারী রাতে মৎস্যজীবী সমিতির পক্ষে অপূর্ব সরকার থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেছে। অভিযোগটি তদন্ত চলছে। সত্যতা মিললে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসিব মাহমুদ বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহানকে জাহানপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে বাওড়ের দখল বুঝে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে বলো হয়েছে।