Type to search

কৃষকদের সমন্বিত উদ্যোগে জলাবদ্ধতা নিরসনের চেষ্টা

মনিরামপুর

কৃষকদের সমন্বিত উদ্যোগে জলাবদ্ধতা নিরসনের চেষ্টা

 

অপরাজেয় বাংলা ডেক্স

মণিরামপুরের হরিদাসকাঠি সম্বলডাঙা বিলে দেড় হাজার বিঘা জমি পানিতে তলিয়ে রয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে গত মৌসুমে আমন চাষ করতে পারেননি এই বিলের কৃষকরা। সামনে বোরো মৌসুম। এবারও কৃষকদের জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার নেয়নি কোনো উদ্যোগ। কৃষকরা নিজেদের খরচে পানি সরানোর কাজ শুরু করেছেন। ১২টি ডিজেল ইঞ্জিন ভাড়ায় এনে কৃষকরা গত ১৭ দিন পানি সরাচ্ছেন।

শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) সরেজমিন হাজরাইল এলাকায় গিয়ে কৃষকদের পানি সেচে মুক্তেশ্বরী নদীতে ফেলতে দেখা গেছে। ভোমরদহা গ্রামের ইদ্রিস গাজী নামে এক কৃষক কেশবপুর এলাকা থেকে ডিজেল ইঞ্জিনগুলো ভাড়া এনে ৫০ জন শ্রমিক লাগিয়ে বিল সেচার কাজ করছেন। শ্রমিকরা সবাই সম্বলডাঙা বিলের কৃষক। হরিদাসকাঠি ইউনিয়নের ভোমরদহা, সুবলকাঠি, শ্রীপুর ও হাজরাইল চার গ্রাম মিলে সম্বলডাঙা বিল।
জমির পানি সরাতে কৃষককে বিঘাপ্রতি গুনতে হচ্ছে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা। গত চার বছর ধরে এভাবে নিজেদের খরচায় জমির পানি সরিয়ে বোরো চাষ করতে হচ্ছে কৃষকদের। বিরামহীন রাতদিন চলছে ডিজেল ইঞ্জিনগুলো।
কৃষকরা জানান, মূলত বিলের পানি ঢাকুরিয়া খাল হয়ে পাঁচবাড়িয়া স্লুইসগেট দিয়ে মুক্তেশ্বরী নদীতে পড়ে। সেই পানি ভবদহ হয়ে নেমে যেত। কিন্তু ভবদহে পলি জমায় সেখান দিয়ে পানি সরছে না। সেই কারণে মুক্তেশ্বরী নদীতে স্রোত নেই। ফলে সম্বলডাঙা বিলের পানি সরতে না পেরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। শীত মৌসুম এলেও এখনো বিলে ২-৫ ফুট পানি জমে আছে।
পানি সেচের কাজে নিয়োজিত বুলবুল গাজী বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন তিনশ টাকায় কাজ করি। আমার নিজের দুই বিঘা জমি রয়েছে এই বিলে।’
ভোমরদহ গ্রামের কৃষক অনিমেশ সরকার বলেন, ‘বিলে এক একর জমি রয়েছে। আমন করতে পারিনি। বোরো ধান করার আশা আছে। জমি সেচার কাজ চলছে। বিঘাপ্রতি আমাদের এক হাজার টাকা দিতে হবে। বোরো ধান না লাগাতে পারলে খাব কী!’
উদ্যোক্তা ইদ্রিস আলী বলেন, ‘বিলের পানি সরাতে জমির মালিকরা সবাই উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করেছি। গত চার বছর ধরে পানি আটকে থাকায় আমরা ব্যক্তি উদ্যোগে ডিজেল ইঞ্জিন দিয়ে পানি সরাচ্ছি। এইবারসহ আমি দুইবার দায়িত্ব নিয়েছি।’
তিনি বলেন, কেশবপুর এলাকা থেকে দৈনিক ৬০০ টাকা চুক্তিতে প্রতিটি মেশিন ভাড়া করা। ১২টা মেশিন লাগিয়ে পানি সেচা হচ্ছে। এই পর্যন্ত ১৭ দিন বিরামহীন মেশিন চলছে। পুরো পানি সরাতে দেড়মাস লাগবে। বিঘাপ্রতি পানি বুঝে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা করে নিচ্ছি। সবাই টাকা দেবে না। ইতোমধ্যে নয় লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। মোট ১৬-১৮ লাখ টাকা খরচ হবে।
‘আমার নিজের ১৮-২০ বিঘা জমি রয়েছে। লাভের আশা করছি না। নিজেদের স্বার্থে একাজ হাতে নেওয়া,’ বলছিলেন ইদ্রিস।
হাজরাইল এলাকার মেম্বার আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা বিঘাপ্রতি এক হাজার টাকা করে দিচ্ছি। বিলের সব মাছ ধরে ওরা বেচে নেবে। প্রায় সাত-আট লাখ টাকার মাছ বেচতে পারবে। ওদের লস হবে না।’
বিএডিসি মণিরামপুরের উপসহকারী প্রকৌশলী আকতার হোসেন বলেন, ‘বিলকপালিয়ার পানি সরাতে সরকারি খরচে কাজ চলছে। সম্বলডাঙা বিলের বিষয়টি আমার জানা নেই।’
স্থানীয়রা বলছেন, গতবছর এই বিলের পানি সেচা নিয়ে দ্বন্দ্বে মনির ও জাহিদুল নামে দুই কৃষক গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। দুর্বৃত্তদের দাবি করা চাঁদা না দেওয়ায় তারা গুলিবিদ্ধ হন। ওই ঘটনায় তখন স্থানীয় ইউপি সদস্য দেবু মণ্ডলসহ ছয়জন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন।

সূত্র, সুবর্ণভূমি