এবি পার্টি’র নাগরিক সংলাপ : সরকারের ব্যর্থতায় বন্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির উদ্যোগে ‘বন্যায় সৃষ্ট মানবিক সংকট মোকাবিলায় সর্বোচ্চ অর্থ ও খাদ্য বরাদ্দের দাবীতে এক নাগরিক সংলাপ ২২ জুন, বুধবার বেলা ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দলের সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জুর পরিচালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন দলের আহবায়ক ও প্রাক্তন সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী, নদী বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, গণ ফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসীন রশিদ, এনডিপি চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্তুজা, মানবাধিকার কর্মী রুবী আমাতুল্লাহ ও এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনারসহ বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ।
সংলাপের শুরুতেই এবি পার্টির ত্রাণ কার্যক্রম ও সরেজমিন বন্যার চিত্র তুলে ধরেন দলের যুগ্ম আহবায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আহবায়ক আলতাফ হুসেইন ও ছাত্র বিষয়ক সমন্বয়ক মোহাম্মদ প্রিন্স।
প্রফেসর মিনার বলেন, এবারের সিলেটের বন্যা ইতিহাস ছাড়িয়েছে; ৪০ লক্ষ পানিবন্দী মানুষ শুধু তাদের ঘর-বাড়ি হারায়নি, তাদের গবাদিপশু, ক্ষেতের ফসলসহ জীবিকার সকল মাধ্যম হারিয়ে পথের ফকির হয়ে গেছে। অধিকাংশ আশ্রয় কেন্দ্রে খাবার থেকে শুরু করে কোন সাহায্য পৌছেনি, যদিও সেনাসদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম ও ঝুঁকি নিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। পুরো ত্রাণ কার্যক্রমে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের কোন পরিকল্পিত তৎপরতা চোখে পড়েনি বলে উল্লেখ করেন আলতাফ হুসেইন।
সংলাপে সংকট নিরসনে ১৪ দফা প্রস্তাবের ওপর আলোকপাত করে বক্তব্য রাখেন দলের যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশ এক কঠিন সমস্যায় নিমজ্জিত। মানুষের মুখে আজ হাসি নেই। বাংলাদেশকে না জানিয়ে গজলডোবা বাঁধ খুলে দিয়ে ভারত আন্তর্জাতিক অপরাধ করেছে। এখানে আমাদের যে কূটনীতিক সমাধান প্রয়োজন সেটি আমরা করতে পারিনি।একদিকে বন্যা, অন্যদিকে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের লাগামহীন বক্তব্যে আমরা হতাশ হচ্ছি। যারা দেশের মানসন্মান বিশ্বে উজ্জ্বল করেছেন তাদের একজন ড. মো. ইউনুস। অথচ সরকার উনার সম্মানহানি করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। ১৯৭১ সালে ২০ লাখ উদ্বাস্তু ভারতীয় শরণার্থী শিবিরে মারা গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মৃত মানুষদের তালিকা ভারত সরকারকে দিতে হবে। তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় খালেদ মোশাররফ বলেছিল ভারত আমাদেরকে সহযোগিতা করলেও ভবিষ্যতে ভূটান, সিকিমের মতো আচরণ করবে। তার সেই আশংকার বাস্তব ফল হচ্ছে আজকের সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা। তিনি বলেন, তিস্তা চুক্তির মাধ্যমে ভারত থেকে আমাদের সকল ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য সরকারকে ভুমিকা রাখতে হবে। বাজেটের প্রসংগ টেনে তিনি বলেন, বাজেটে বন্যা সংকট মেকাবেলায় কোন নির্দেশনা নাই, অথচ অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর স্তুতি গেয়ে ১০% সময় ব্যয় করেছেন। তিনি দেশে সু-শাসন ও গণতান্ত্রিক ধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথে থেকে অধিকার আদায় করতে এবি পার্টির কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে সামনে রেখে সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে বন্যার ভয়াবহতা মিডিয়া সেরকমভাবে তুলে ধরছে না। আন্তর্জাতিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগের কল্যাণে আমরা কিছুটা জানতে পারছি। তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্হাপনার জন্য সরকারের অনেক প্রতিষ্ঠান এবং এজেন্সি রয়েছে। কিন্তু তাদের কোন কার্যকর ভুমিকা আমরা দেখছি না। দূর্যোগের পরে ত্রাণ পূনর্বাসনের পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্হাপনার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার দাবী জানিয়ে তিনি বলেন, বন্যা কী কারণে হচ্ছে তার সবগুলো কারণ খুঁজে বের করতে হবে এবং এক্ষেত্রে জনগণের সচেতনতা, শিল্প কারখানার বর্জ্য ব্যবস্হাপনা এবং সরকারকে পরিকল্পিত সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, সরকারের কাছে দাবী জানিয়ে কোন লাভ নাই। যারা দেশ নিয়ে ভাবেন, দেশের কল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারেন তাদেরকে সরকার কাজে লাগাচ্ছে না। তাদের কথা আমলে নিচ্ছে না। তিনি বলেন, তবুও আমাদের কথা বলতে হবে জনগণের জন্য। হেলিকপ্টার থেকে ত্রাণ নিক্ষেপ করে মানুষকে হতাহত করার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, নিরাপদ ত্রাণ ব্যবস্থাপনা করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।
বিশিষ্ট কলামিস্ট ও নারী অধিকার নেত্রী রুবি আমাতুল্লাহ বলেন, বন্যা আমাদের একটা প্রাকৃতিক সমস্যা। পৃথিবীর বহু দেশ এ ধরনের প্রাকৃতিক সমস্যা মোকাবিলা করে। কিন্তু আমাদের এখানকার সমস্যা শুধুই প্রাকৃতিক নয়। এর সাথে সরকারের অদক্ষতা, উদাসীনতা এবং অবহেলা যোগ হয়ে আজ তা জীবনযাত্রাকে দূর্বিষহ করে তুলেছে।
সভাপতির বক্তব্যে দলের আহবায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী বলেন, আমরা বন্যা ও জলাবদ্ধতা নিরসনে রাষ্ট্রের কাছে ১৪ দফা প্রস্তাবনা পেশ করেছি এর স্থায়ী সমাধানের জন্য। আমাদের ভৌগলিক অবস্থানের কারণে কখনোই মৌসুমী বৃষ্টি ও বন্যা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব নয়, তাই প্রকৃতির সাথে সন্ধি করেই এই জনপদে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, লুটপাটের উন্নয়ন কর্মসূচী থেকে বেরিয়ে এসে পরিবেশের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিতে হবে, যাতে প্রতি বছর বন্যার মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কোটি কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন, দলের যুগ্ম সদস্য সচিব ও মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক বিএম নাজমূল হক, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ এর নির্বাহী সভাপতি ড. শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. শাহ আরমান, এনডিপি মহাসচিব মঞ্জুর হোসেন ঈসা, এবি যুব পার্টির সমন্বয়ক এবিএম খালিদ হাসান, কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম এফসিএ, সহকারী সদস্য সচিব নাসরীন সুলতানা মিলি, এনডিএম এর সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন হীরা, এবি ছাত্র উইং এর সমন্বয়ক মোহাম্মদ প্রিন্স প্রমুখ।