Type to search

আমদানিকারকদের আশার আলো দেখাচ্ছে রেলপথে পণ্য পরিবহন

জাতীয় যশোর

আমদানিকারকদের আশার আলো দেখাচ্ছে রেলপথে পণ্য পরিবহন

স্টাফ রিপোর্টারঃ  বেনাপোল স্থলবন্দরে চলছে পণ্যজট। জায়গার অভাবে আমদানিকৃত পণ্য রাখা যাচ্ছে না। যে কারণে বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোলে হাজার হাজার পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায়।

এতে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। আমদানিকারকদের আশার আলো দেখাচ্ছে রেলপথে পণ্য পরিবহন। ৫০ দিনে এ পথে এসেছে প্রায় ৮০ হাজার টন পণ্য। পণ্যজট এড়িয়ে সহজে রেলপথে আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় একদিকে যেমন ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। অন্যদিকে এ খাত থেকে রেলের রাজস্ব আয়ও বেড়েছে।

আগামী দিনে এ ধারা অব্যাহত থাকলে বেনাপোল স্থলবন্দরের ওপর চাপ কমে আসবে। ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যে নতুন গতি আসবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

বেনাপোল বন্দর সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারির সংক্রমণ রোধে গত ২২ মার্চ রেল ও স্থলপথে পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। হঠাৎ বাণিজ্য বন্ধের ফলে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের হাজার হাজার ট্রাক পণ্য নিয়ে আটকা পড়ে। পরে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে দেশের অন্যান্য বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি সচল হলেও এ পথে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সচলে নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়।

ব্যবসায়ীরা ক্ষতির বিষয়টি উভয় দেশের বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানায়, তাতেও সচল হয়নি বাণিজ্য। একপর্যায়ে রেল কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস, বন্দর ও ব্যবসায়ীদের যৌথ উদ্যোগে বিকল্পভাবে বাণিজ্য সচল করতে রেলপথে পার্সেল ভ্যানে দুই দেশের মধ্যে আমদানি বাণিজ্য চুক্তি হয়।

বর্তমানে বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে স্থলপথের পাশাপাশি রেলপথে কার্গো রেল, সাইডডোর কার্গো রেল এবং পার্সেল ভ্যানে সব ধরনের পণ্যের আমদানি বাণিজ্য শুরু হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের যেমন দুর্ভোগ কমেছে তেমনি বাণিজ্যে গতি বাড়ায় সরকারেরও রাজস্ব আয় বেড়েছে। বন্দরে জায়গা সংকট কাটছে না। বর্তমানে সব মিলিয়ে বন্দরে ৩২টি শেড ও ১০টি ইয়ার্ড রয়েছে। যেখানে পণ্য ধারণক্ষমতা মাত্র ৫১ হাজার টন। কিন্তু প্রায়ই এর চেয়ে দ্বিগুণ, কখনও তিনগুণও পণ্য আমদানি হয়। ফলে জায়গা সংকট ও পণ্যজটে বিপাকে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

বেনাপোল বন্দরে জায়গা সংকট দীর্ঘদিনের। বারবার জায়গা বাড়ানোর দাবি করলেও কেউ শুনছে না। বন্দরে জায়গা সংকটের কারণে পেট্রাপোলে হাজারো পণ্যবাহী গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

এদিকে রেলপথে বাণিজ্য হওয়ায় হাসি ফিরেছে বন্দর শ্রমিকদের মধ্যে। করোনার কারণে কাজ কমে যাওয়ায় দিন আনা দিন খাওয়া এসব শ্রমিক অর্থকষ্টে বেকায়দায় পড়েছিলেন। বেনাপোল বন্দরের সাধারণ শ্রমিকরা জানান, তারা দিন আনা দিন খাওয়া শ্রমিক। করোনার কারণে বন্দরে তিন মাস আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় তারা অর্থকষ্টে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করেছেন। এখন স্থলপথের পাশাপাশি রেলপথে আমদানি বাড়ায় তারা অনেক খুশি। এতে তারা পরিবার নিয়ে একটু ভালোভাবে চলতে পারবেন এবং ছেলেমেয়েদেরও লেখাপড়া করাতে পারবেন।

বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রফতানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক জানান, স্থলপথে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে অবরোধ, হরতাল, শ্রমিক অসন্তোষসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় পণ্য পরিবহন করতে না পেরে ব্যবসায়ীরা প্রায়ই লোকসানের কবলে পড়তেন। ভারত থেকে পণ্য আমদানি করতে অনেক ক্ষেত্রে এক মাসেরও অধিক সময় লেগে যেত। রেলপথে সব ধরনের পণ্যের আমদানি করতে পারায় এখন আর সেই সমস্যা নেই। এখন রেলে আমদানি পণ্য বন্দর থেকে দিনেই খালাস হচ্ছে। এতে স্বস্তি ফিরেছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, করোনার অজুহাত দেখিয়ে ভারতের পেট্রাপোলের একশ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে মাসের পর মাস ট্রাক আটকে রেখে ফায়দা লুটছিল। এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে শুরু হয় রেলপথে আমদানি বাণিজ্য। এভাবে চলতে থাকলে আশা করা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছর প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব আসবে।

বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল বলেন, করোনার মধ্যে ভারত অংশের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে নানাভাবে বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে বাণিজ্য সচল করতে রেলপথে সব ধরনের পণ্য আমদানি পদক্ষেপ নেয়া হয়। আগে মালবাহী রেল ওয়াগানে চাল, গম, পাথর, পেঁয়াজসহ কয়েকটি পণ্য আমদানি হতো এবং সেই সব পণ্য যশোরের নওয়াপাড়া গিয়ে খালাস করতে হতো।

বর্তমানে রেল ওয়াগান, পার্সেল ভ্যান ও সাইড ডোর কার্গো রেলে সব ধরনের পণ্য আমদানি হচ্ছে এবং সেই পণ্য বেনাপোল বন্দরে খালাস করা হচ্ছে। এতে স্থলপথের পাশাপাশি রেলপথে পাল্লা দিয়ে পণ্য আমদানি হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হচ্ছেন তেমনি সরকারেরও রাজস্ব আয় বাড়ছে বলে জানান তিনি।

বেনাপোল রেলওয়ের ব্যবস্থাপক মো. সাইদুজ্জামান জানান, গত জুলাইয়ে রেলপথে পণ্য পরিবহন হয়েছে ৫১ হাজার ১২ টন, যা থেকে রেলের রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ ৫৬ হাজার ৯২০ টাকা। চলতি মাসের ২০ দিনে পণ্য পরিবহন হয়েছে ২৮ হাজার টন, যা থেকে রাজস্ব পাওয়া গেছে দেড় কোটি টাকা। করোনার আগে বেনাপোল রেলপথে কেবল কার্গো রেলের মাধ্যমে ভারত থেকে সপ্তাহে একটি বা দুটি রেল আসত। আবার কখনও দেখা গেছে মাসে একটি রেল আসছে না। কিন্তু বর্তমানে চিত্র ভিন্ন। প্রতিদিন কার্গোরেল, সাইড ডোর কার্গোরেল এবং প্যার্সেল ভ্যানের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হচ্ছে। এতে বন্দরের যেমন রাজস্ব আয় হচ্ছে, তেমনি রেলেরও বিপুল পরিমাণে রাজস্ব আহরণ হচ্ছে।

Tags: