Type to search

আজ ২৫ জানুয়ারী মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৮তম জন্মবার্ষিকী

কেশবপুর

আজ ২৫ জানুয়ারী মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৮তম জন্মবার্ষিকী

জাহিদ আবেদীন বাবু, কেশবপুর (যশোর) থেকে।
আজ ২৫ জানুয়ারী বাংলা সাহিত্যে অমিতাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকাব্যের মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৮তম জন্মবার্ষিকী। কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ীতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তত্বাবধানে ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে প্রতি বছর সপ্তাহব্যাপী “মধুমেলা” অনুষ্ঠিত হলেও করোনা ভাইরাস সৃষ্ট পরিস্থিতিতে এ বছর মধুমেলা ২৫ জানুয়ারি সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে সমাপ্ত হবে । গত ২০ জানুয়ারি যশোর কালেক্টরেট সভাকক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় যশোরের সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দের মতামতের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক হুসাইন শওকত।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন- কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এমএম আরাফাত হোসেন, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, প্রেসক্লাব যশোরের সাবেক সভাপতি একরাম-উদ-দ্দৌলা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক সুকুমার দাস, ওয়ার্কাস পার্টির জেলা সভাপতি এ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিকী প্রমুখ।
জানা গেছে, মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি (বাংলা ১২ মাঘ) যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদ সংলগ্ন সাগরদাঁড়ী গ্রামের ঐতিহ্যবাহি দত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা রাজ নারায়ন দত্ত, মা জাহ্নবী দেবী। অসাধারণ মেধার অধিকারী মধুসূদন দত্ত ব্যক্তি জীবনে ছিলেন খাম খেয়ালি, বিলাস প্রিয়। যশ খ্যাতির মহে আচ্ছন্ন মধুসূদন দত্ত হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ১৮৪৩ সালে ৯ ফেব্রুয়ারি খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেন। যা তৎকালীন হিন্দু সম্প্রদায়ের ভিতর তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে তিনি হিন্দু কলেজ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। মাদ্রাজে থাকাকালে নীলকর ডুগাল্ট্ ম্যাকটাভিসের আশ্রিত কন্যা রেবেকা ম্যাকটাভিসকে বিবাহ করেন। এরপর তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক ইংরেজ অধ্যাপকের কন্যা হেনরিয়েটাকে বিবাহ করেন। শিক্ষা জীবনে মধুসূদন গ্রীক, ফার্সি, জার্মান, ল্যাটিন, সংস্কৃত ভাষা সহ বহুভাষা রপ্ত করেন। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচনা করেন বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ মহাকাব্য ‘মেঘনাদবধ’।
এ ছাড়া রচনা করেন কাব্য ‘তিলোত্তমা সম্বব, ‘ব্রজাঙ্গনা’ ‘বীরঙ্গনা’ চতুদর্শপদী কবিতাবলী, নীতিমূলক কবিতা, নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’ ‘পদ্মাবর্তী’ ‘কৃষ্ণ কুমারী’ ‘মায়া কানন’, প্রহসন ‘বুড়োশালিকের ঘাড়ে রোঁ’ ‘একেই কি বলে সভ্যতা’,* উপকথা-রসাল স্বর্ণ লতিকা, অশ্ব ও কুরঙ্গ, কুক্কট ও মনি, মেঘ ও চাতক, সিংহ ও মশকী। ব্যাঙ্গ রচনা- রোগ শয্যায়, দুর্যোধনের মৃত্যু। ইংরেজী রচনাবলী-THE CAPTIVE LAdIE, THE VISION OF THE PAST ইত্যাদি মধুসূদনের অমর সাহিত্য কম। মাইকেল মধুসূদন মৃত্যুর আগ মুহূর্তে ‘সমাধি লিপি’ নামে আট লাইনের একটি কবিতাটি লিখে বলেছিলেন ‘আমার মৃত্যুর পর আমার সমাধির উপরে লিখে দিও সমাধি লিপি কবিতাটি’। কবিতাটি হলো
“দাঁড়াও পথিক-বর জন্ম যদি তব
বঙ্গে! তিষ্ঠ ক্ষণকাল ! এ সমাধি স্থলে
(জননীর কোলে শিশু লভয়ে যে মতি
বিরাম) মহীর পদে মহাদ্রিবৃত
দত্ত কুলোদ্ভব কবি শ্রী মধুসূদন।
যশোর সাগরদাঁড়ী কপোতাক্ষ-তীরে
জন্মভূমি জন্মদাতা দত্ত মহামতি
রাজ নারায়ন নামে জননী জাহ্নবী”।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত অসুস্থ্য হয়ে ১৮৭৩ সালে ২৯ জুন কলকাতাস্থ আলীপুরের জেনারেল হাসপাতালে বেলা ২ টার সময় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৩০ জুন সেন্ট জেমস চার্চ এবং ধর্মযাজকের উদ্যোগে খৃষ্টীয় রীতি অনুযায়ী কলকাতার লোয়ার সার্কুলার রোডের সমাধি স্থলে যথাযোগ্য মর্যাদায় কবির মরদেহ সমাধি করা হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম আরাফাত হোসেন, সাংবাদিকদের জানান, যথাযোগ্য মর্যাদায় সামাজিক দূরত্ব মেনে সীমিত পরিসরে আলোচনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ২৫ জানুয়ারি ১ দিন মধুকবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *