Type to search

সড়কে লাল ধূলির ঝড়; মেয়াদ শেষ হয় কাজ শেষ হয় না

অভয়নগর

সড়কে লাল ধূলির ঝড়; মেয়াদ শেষ হয় কাজ শেষ হয় না

কামরুল ইসলাম
অভয়নগরে ভাঙ্গাগেট -আমতলা সড়ক উন্নয়নকাজে ঠিকাদারে ব্যাপক গাফিলতি হচ্ছে। কার্যাদেশের মেয়াদ শেষে হয়ে বর্ধিত মেয়াদও শেশের পথে কিন্তু ৬০ শতাংশ কাজও শেষ হয়নি। খোয়াবালি মিশ্রিত করে যে টুকু কাজ হয়েছে তা ও উঠে যাচ্ছে। যানবাহনের চাকার ঘর্ষণে সৃষ্টি হচ্ছে লাল ধূলির ঝড়। পথচারি ও আশপাশের বাড়ি ঘর ধূলায় ঢেকে যাচ্ছে।
উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে দেড় বছর ধরে যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভাঙ্গাগেট বাদামতলা-আমতলা ভায়া মরিচা নাউলী বাজার সড়কের প্রায় ২১ কিলোমিটার উন্নয়নকাজ চলছে। ৫৫ শতাংশ কাজ করার পর শেষ হয়ে যায় কাজের মেয়াদ। পরে কাজের মেয়াদ আরও সাড়ে তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বাড়েনি সড়ক উন্নয়নকাজের গতি। আর এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারি এলাকার কয়েক লাখ মানুষ।


প্রায় ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের(এলজিইডি) পল্লী সংযোগ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের (আরসিআইপি) আওতায় সড়কটির উন্নয়নকাজ চলছে।
এরমধ্যে ঠিকাদারকে ৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড কাজটি করছে। গত বছরের(২০২১) ১১ এপ্রিল থেকে সড়কটির কাজ শুরু হয়েছে। গত ১০ অক্টোবর কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। পরে কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি করা হয়েছে। ১২ ফুটের সড়কটির দুই পাশে তিন ফুট করে ছয় ফুট বাড়িয়ে সড়কটি ১৮ ফুট করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৫৫ শতাংশ কাজ হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শংকরপাশা ফেরিঘাটের মোড় থেকে আমতলা বাজার পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে তিন ফুট করে মাটি খুঁড়ে সড়কের আগের পিচের টুকরো, খোয়া ও বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। আমতলা বাজার থেকে লেবুগাতী সেতু পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়কের আগের পিচ উঠিয়ে তার সাথে বালু এবং ইটের খোয়া মিশিয়ে সমান করা যন্ত্র দিয়ে সমান করে রাখা হয়েছে। যানবাহন চলাচল করায় সড়কের এই অংশে খোয়া উঠে ছড়িয়ে আছে। কোথাও কোথাও ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। লেবুগাতী সেতু থেকে বাশুয়াড়ী ধলুর চৌরাস্তা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের পিচ খুঁড়ে রাখা হয়েছে। বাকি প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কে আগের পিচ রয়েছে। ধলুর চৌরাস্তা থেকে শংকরপাশা ফেরিঘাটের মোড় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮ কিলোমিটার সড়কে ইটের খোয়া মিশিয়ে যন্ত্র দিয়ে সমান করে রাখা হয়েছে। সড়ক জুড়ে ছড়িয়ে থাকা খোয়া এবং খোয়া ভেঙ্গে সৃষ্টি হওয়া লাল ধুলোবালুতে যানবাহন ও লোকজন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে।
জানা গেছে, শংকরপাশা-আমতলা সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এই সড়ক দিয়ে নড়াইল এবং গোপালগঞ্জ হয়ে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করে এলাকার লোকজন। তা ছাড়া নড়াইল এবং অভয়নগর উপজেলার চার ইউনিয়নের লোকজন শিল্প ও বাণিজ্য শহর নওয়াপাড়ায় যাতায়াত করেন।
এই সড়ক দিয়ে দিয়ে বাইসাইকেলে চলাচল করেন মাদ্রাসা শিক্ষক ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন,‘ যানবাহন চলায় সবসময় লাল ধূলা উড়ে। যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। রাস্তার উপর ছড়িয়ে থাকা খোয়ার মধ্যে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়। রাস্তার বেশিরভাগ অংশে খোয়া উঠে গেছে। বাশুয়াড়ী গ্রামের মধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের পিচ খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। এছাড়া দেড় কি.মি রাস্তা আগের ভাঙ্গাচোরা অবস্থায় পড়ে আছে। রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায় না।’ ভাটপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী সঞ্জয় দাশ বলেন, ‘ঠিকাদার দীর্ঘদিন রাস্তার কাজ না করে ফেলে রেখেছে। পুরো রাস্তায় খোয়া উঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। খোয়া আর ধুলোয় রাস্তা দিয়ে চলার মতো অবস্থা নেই। অন্য দিক দিয়ে ঘুরে নওয়াপাড়া বাজারে যাতায়াত করছি।’
ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকচালক আসাদ শেখ বলেন, ‘এই রাস্তায় ইজিবাইক চালিয়ে আমার সংসার চলে। অনেকদিন ধরে কাজ না করে রাস্তাটি ফেলে রাখা রয়েছে। লাল ধুলোর ভিতর অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে ইজিবাইক চালাচ্ছি।’
ঠিকাদারের প্রতিনিধি সুমন খাঁন সাংবাদিকদের বলেন,‘এলজিইডি প্রাক্কলন সংশোধন করে আরও টাকা বরাদ্দের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে। তা পাশ না হওয়ায় সময়মতো সড়কের কাজ করতে পরিনি। সড়কটির ৭০ শতাংশ কাজ হয়েছে। দ্রæত কাজ শুরু করে জানুয়ারি মাসের মধ্যে শেষ করব। ’
উপজেলা প্রকৌশলী এস এম ইয়াফি বলেন, ‘ ওই রাস্তাটি নিয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি সরজমিনে গিয়েছিলাম। ঠিকাদার ধীরগতিতে কাজ করছেন। এতে মানুষের চরম ভোগান্তি হচ্ছে। এ ব্যাপারে দ্রæত কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে তাগিদ করছি। তিনি আরো বলেন ম্যাশিন না পাওয়ার জন্য কার্পেটিং (পিস) করতে বিলম্ব হচ্ছে। ধূলির হাত থেকে রক্ষা পওয়ার জন্য ঠিকাদারকে প্রতিদিন রাস্তায় পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেওয়ার তাগিদা দেওয়া হয়েছে।’
এলজিইডি যশোর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সড়কে ধীর গতির কারনে জনগন ভোগান্তির শিকার হোক এটা কাম্য নয়। ডবিøউএমএ(ডগঅ) করা রাস্তায় ধূলে হলে পানি দিয়ে ভেজাতে হবে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’