
অনলাইন ডেক্স
বি-টু স্পিরিট স্টিলথ বোম্বার বিমান
বিশ্বের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে একটি বিমান। এটি কোনো সাধারণ যুদ্ধবিমান নয়। প্রযুক্তি ও সামরিক শক্তির এমন এক নিদর্শন যা গোটা বিশ্বে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের হাতেই আছে। এই বিমান হলো বি-টু স্পিরিট স্টিলথ বোম্বার (B-2 Spirit Stealth Bomber)। প্রতিটি বিমানের মূল্য প্রায় ২ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকাও বেশি।
বি-টু স্পিরিট এমনভাবে নির্মিত হয়েছে—যা রাডার ফাঁকি দিয়ে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে নিঃশব্দে পৌঁছে যেতে পারে। পারমাণবিক ও সাধারণ সব ধরনের বোমা ফেলতে পারে এটি। এই ‘স্টিলথ বোম্বার’ প্রকল্প এতটাই গোপন ছিল যে একসময় মার্কিন কংগ্রেস পর্যন্ত এর প্রকৃত খরচ সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে জানত না। বিমানটির অবয়ব, রঙ, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, উপকরণ ও প্রযুক্তি—সবকিছুতেই লুকানো আছে চূড়ান্ত সামরিক দক্ষতা ও রহস্য।
এই বিমান আশির দশকে নর্থরপ গ্রুম্যান কোম্পানির নেতৃত্বে নির্মাণ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। ঠান্ডা যুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের হুমকি মোকাবেলার উদ্দেশ্যে এটি তৈরি করা হয়। ১৯৯৭ সালে প্রথমবারের মতো বি-টু যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। তখন থেকেই এটি হয়ে ওঠে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সবচেয়ে ভয়ংকর ও নির্ভরযোগ্য অস্ত্র।
একটি বি-টু বিমান টানা ১১ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে। তবে আকাশে জ্বালানি নেওয়ার প্রযুক্তির কারণে এটি পৃথিবীর যে কোনো অংশে যেতে পারে বাধাহীনভাবে। এতে দুজন পাইলট থাকে এবং একসঙ্গে ১৮ টন ওজনের বোমা বহন করতে পারে।
বি-টু স্পিরিট দেখতে অনেকটা ত্রিকোণ বা ডেল্টা শেপের মতো। এর ভেতরে আছে সর্বাধুনিক নেভিগেশন, বোমা লক্ষ্য নির্ধারণকারী প্রযুক্তি এবং তাপমাত্রা-নিয়ন্ত্রিত ককপিট। বিমানটির গঠন এমন যে, এটি রাডার তরঙ্গ শোষণ করে নেয় এবং প্রতিফলিত করে না। ফলে এটি প্রায় অদৃশ্য রূপে শত্রুর আকাশে ঢুকে যেতে পারে।
একটি বি-টু বিমান টানা ১১ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে। তবে আকাশে জ্বালানি নেওয়ার প্রযুক্তির কারণে এটি পৃথিবীর যে কোনো অংশে যেতে পারে বাধাহীনভাবে। এতে দুজন পাইলট থাকে এবং একসঙ্গে ১৮ টন ওজনের বোমা বহন করতে পারে। পারমাণবিক বোমা বহন ও নিক্ষেপ করার উপযোগিতা থাকায় এটি যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত।
এ পর্যন্ত বিশ্বের মধ্যে মাত্র ২১টি বি-টু স্পিরিট নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে এর মধ্যে কয়েকটি অবসরে গেছে, কয়েকটি দুর্ঘটনায় নষ্ট হয়েছে। বর্তমানে বিমানগুলো কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইটম্যান বিমানঘাঁটি তে রাখা হয়।
যুদ্ধ বা সামরিক শক্তির দিক দিয়ে এই একটি বিমানই বদলে দিতে পারে যেকোনো যুদ্ধের গতিপথ। একে শুধু বিমান বলা ঠিক নয়—এ এক ভাসমান দুর্ভেদ্য অস্ত্রভাণ্ডার যার উপস্থিতি কেবল শত্রুকে নয়, গোটা বিশ্বকেই কাঁপিয়ে তোলে। বি-টু স্পিরিট তাই শুধু বিশ্বের সবচেয়ে দামি যুদ্ধবিমান নয়, বরং এটি আধুনিক সামরিক প্রযুক্তির এক জীবন্ত প্রতীক।