
নড়াইল প্রতিনিধি
১ আসনের এমপির হস্তক্ষেপে নড়াইলের কালিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীসহ সাধারণ ভোটাররা উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠ নির্বাচন আয়োজনে প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনসহ জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,কালিয়া উপজেলা নির্বাচনে মোট ১৩জন প্রার্থী প্রতিদন্দিতা করছেন। এর মধ্যে ৫জন চেয়ারম্যান পদে, ৫জন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ও ৩জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদন্দিতা করছেন। ৮২ টি ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১লাখ ৯৭হাজার ২০৯জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৭৮জন ও মহিলা ভোটার ৯৭০৩১জন। আগামী ৮ মে এ উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান কৃঞ্চপদ ঘোষ ( মোটর সাইকেল) কলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এডঃ মাহমুদুর হাসান কায়েস (ঘোড়া),সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খান শামিমুর রহমান ওছি খান ( চিংড়িমাছ),আওয়ামী লীগের কালিয়া উপজেলা সভাপতি ও পুরুলিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম হারুনার রশীদ (আনারস),ও এস এম নাজমুল হক প্রিন্স (দোয়াত কলম) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন।
চেয়ারম্যান প্রার্থী কৃঞ্চপদ ঘোষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য বি,এম কবিরুল হক মুক্তি চেয়ারম্যান প্রার্থী খান শামিমুর রহমান ওরফে ওছি খানের পক্ষ নিয়ে খুলনায় তার নিজের বাড়ীতে বসে নির্বাচনের কলকাঠি নাড়ছেন। তিনি বলেন,আমার পক্ষে যারা নির্বাচনী প্রচার প্রচারণাসহ প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছেন এমপি মহোদয় মুঠোফোনে তাদের খুলনার বাড়িতে ডেকে নিয়ে ওছি খানের পক্ষে কাজ করতে নির্দেশ দিচ্ছেন। এতে আমাদের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় ক্ষতিগ্রস্থসহ নানান অসুবিধার সম্মুখিন হতে হচ্ছে। তিনি বলেন,বিষয়টি আমরা জেলা প্রশাসকসহ পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি।
দোয়াত কলমের প্রতীকের প্রার্থী এস এম নাজমুল হক প্রিন্স বলেন,এমপির কথায় কালিয়ায় সব কিছু চলে। তার বিপক্ষে কেউ কোন কথা বললে তার নিস্তার নেই। তার ভয়ে কোন মানুষ কথা বলতে পারে না। আমার পক্ষে যারা কাজ করছিলো তাদেরকে ফোনে খুলনায় ডেকে নিয়ে এক প্রকার থ্রেট দিয়েছে। তাদের চেয়ারম্যান পদে ওছি খার পক্ষে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি নির্বাচন
কমিশনসহ জেলা প্রশাসনের সদয় দৃস্টি কামনা করেছেন।
আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন এস এম হারুনার রশীদ। জানতে চাইলে তিনিও এমপির বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেন।তিনি বলেন,এলাকায় যারা ভোট নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের হাতে বেশ কিছু টাকাও ধরিয়ে দিচ্ছেন।সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারা বেশি উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন।
সরেজমিন ঘুরে এলাকাবাসির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে উপজেলার খাশিয়াল,সালামাবাদ,বড়নাল,ইলিয়াছাবাদ,হামিদপুর চাচুড়ি পুরুলিয়া,বাবরাহাচলা ইউনিয়নে ভোটরদের মধ্যে উৎকন্ঠা প্রবল।কারণ বিগত নির্বাচনের আগে-পরে কালিয়ার বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে। এবছরও সংখ্যালঘুরা নির্বাচনের পর তাদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের আশঙ্কা করছেন।
খাশিয়াল ইউনিয়নের পাটনা,চোরখালি,শিবানন্দপুর,সুরিগাতি,তালবাড়িয়া,বি-পাটনা ও ব্রাম্মণ পাটনা গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন জানায় এ ইউনিয়নেই কালিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী খান শামীম রহমান ওরফে ওছি খানের বাড়ি।তিনি নিজেই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার বেশ কয়েকজন মাদবর বলেন,আমরা নিরুপায়। এমপি মহোদয় আমাদের ডাকলে না যেয়ে উপায় নেই। তিনি যা বলবেন আমাদের তাই শুনতে হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন,না না তিনি কোন টাকা দেননি আমাদের। যারা টাকার কথা বলেছেন ভুল বলেছেন। তবে হ্যা এমপি মহোদয় ওছি খানের পক্ষে কাজ করার অনুরোধ করেছেন। তারা আরো বলেন,প্রায় প্রতিদিনই তার খুলনার বাসায় দলে দলে লোক যাচ্ছেন।
জানতে চাইলে সংসদ সদস্য বি এম কবিরুল হক মুক্তি এ ধরণের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন নির্বাচনে একই দলের নেতারা অংশ নিচ্ছেন। সবাই আমার লোক। কাকে রেখে কার পক্ষে কাজ করতে বলবো জনগণকে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,খেয়াঘাটে এসে যার যার গন্তব্যে যাবার জন্য একই নৌকায় সবাই ওঠেন। নৌকা থেকে নেমে কে কোথায় যাবেন কেউই বলতে পারেন না। আওয়ামী লীগ এমনই একটা রাজনৈতিক দল যেখানে নেতাকর্মীর অভাব নেই। বছরে বছরে নতুন নতুন নেতাকর্মী সৃস্টি হয়। তিনি আশা প্রকাশ করেন নির্বাচন হবে অবাধ সুষ্ঠ নিরপেক্ষ।